প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪, ১২:৩৮ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ নভেম্বর ৬, ২০২৪, ৮:২৮ এ.এম
আরিফ আহমেদ
বিশেষ প্রতিবেদক।।
অবশেষে পূর্ণাঙ্গ রূপ নিলো বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। গত ৪ অক্টোবর সোমবার বিকালে ৪১ সদস্যের পূর্নাঙ্গ কমিটির নাম প্রকাশ করা হয়েছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক পত্রে। এতে মনিরুজ্জামান খান ফারুককে আহ্বায়ক এবং জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়াকে সদস্য সচিব বহাল রেখে ৯ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ৩০ জনকে সদস্য করা হয়েছে। এখানেও যথারীতি আফরোজা খানম নাসরিনকে ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক করায় মঙ্গলবার সকালে মহানগর বিএনপি আয়োজিত পরিচিতি সভায় উপস্থিত হননি সিনিয়র অনেক নেতা। পূর্ব থেকেই এ নিয়ে বিতর্ক চলে আসছিল বরিশালে। পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষনার পর এই বিতর্ক আরো বেড়েছে। নাসরিনের নীচে সিনিয়র নেতারা পদ নিতে রাজী না হওয়ায় পূর্বের যুগ্ম আহ্বায়ক একজনও এ কমিটিতে স্থান নেননি বলে দাবি করেছেন তারা।
যদিও দলীয় একাধিক সূত্র বলছে যারা দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে সড়কে ছিলেন এবং হামলা-মামলা ও জেল খেটেছেন তাদেরকে গুরুত্ব দিয়ে এই কমিটি গঠিত হয়েছে। এখানে সিনিয়র-জুনিয়র বলে কোন কথা নেই।
পূর্বের কমিটির বাদ পড়া যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আলী হায়দার বাবুল, আলতাফ মাহমুদ শিকদার- হাবিবুর রহমান টিপু- কেএম শহিদুল্লাহ- হারুন-অর-রশিদ- অ্যাডভোকেট শাহ্ আমিনুল ইসলাম আমিন ও মাকসুদুর রহমান মাকসুদসহ আরো অনেককেই দেখা যায়নি মহানগর বিএনপির এই পরিচিতি সভায়।
তবে বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরীন, জসিম উদ্দিন খান- মোঃ আল আমিন- আবু মুসা কাজল- আব্দুল হালিম মৃধা- সাজ্জাদ হোসেন- জহিরুল ইসলাম লিটু, মাহফুজুর রহমান মাফুজ ও এ্যাড. আবুল কালাম আজাদসহ বাকী সদস্যদের সবাই উপস্থিত ছিলেন বিএনপি অফিসে। মনিরুজ্জামান ফারুক এর সভাপতিত্বে এসময় সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। সদস্যদের মধ্যে ওযায়ের ইবনে গোলাম কাদির -স্বপন- বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম ফরিদ- আল মাসুম- মঞ্জুরুল আহসান জিসান- সাইফুল আনাম বিপু, বদিউজ্জামান টলন- রফিকুল ইসলাম মঈন- কামরুল হাসান রতন- আহম্মেদ জেকি অনুপম- জুলহাস উদ্দিন মাসুদ- জাহিদুর রহমান রিপন- খসরুল আলম তপন- আব্দুল হক মাষ্টার- আরিফুর রহমান বাবু- আসাদুজ্জামান মারুফ- সোহেল সিকদার- এ্যাড. কাজী বসির- এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ ইমন- এ্যাড. সরোয়ার হোসেন- এ্যাড. শেখ হুমায়ুন কবির মাসুদ-এ্যাড. মোঃ তসলিম- এ্যাড- সুফিয়া আক্তার- এ্যাড. সাঈদ খোকন- শামীমা আকবর- একেএম মিজানুর রহমান -ইঞ্জিনিয়ার- নওশদ আহম্মেদ নান্টু, দুলাল গাজী, মাসুদ হাওলাদার-আব্দুর রহমান হাওলাদার- হাসিনা কামাল ও নুরুল ইসলাম পনির এসময় উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়- পূর্বের ৪২ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে এ বছর জুলাই মাসে তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষনা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এতে যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন আফরোজা নাসরিন। ঐ কমিটি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির কিছুদিন পরই অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ তুলে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন এর দলীয় পদ স্থগিত করা হয়।
বর্তমান পূর্নাঙ্গ কমিটিতে বহাল রয়েছেন আহ্বায়ক, সদস্য সচিব ও ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক।তাদের রেখেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করায় বরিশালে বিএনপির নেতৃত্ব সংকট আরো স্পষ্ট হয়েছে বলে দাবী বাদ পরা নেতাদের।
এর আগে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর সাবেক এমপি ও মেয়র বর্তমান চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ারকে মহানগরের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে আহ্বায়ক করা হয় মনিরুজ্জামান খান ফারুককে। সেখানে ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন আলী হায়দার বাবুল এবং সদস্য সচিব ছিলেন মীর জাহিদুল কবির। এরপর ২০২২ সালের ২২ জানুয়ারি ৪১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখানে ছিলেন ৯ সদস্যের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং বাকীরা ছিলেন সদস্য পদে। ওই আহ্বায়ক কমিটিতে পূর্বের কমিটির ১৭১ সদস্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কেউ স্থান পাননি। ৪১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদনের আগে তা নিয়ে আপত্তি তোলেন বিলুপ্ত কমিটির নেতারা। এ নিয়ে তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও তা কাজে আসেনি বলে জানা গেছে।
এর মধ্যে ২০২২ সালের ১১ মার্চ মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব ও বিতর্কের মধ্যেই নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়। কেননা অভিযোগ ছিল ৩০টি কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা সবাই ছিলেন সরোয়ার অনুসারী। ফলে মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে সরোয়ার ও তার অনুসারী নেতা-কর্মীরা একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। এমন অবস্থার মধ্যেই নানা অভিযোগের কারনে আকস্মিকভাবে বরিশাল মহানগর কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। পরবর্তীতে এ বছরের জুলাই মাসে তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেখান থেকে বাদ পড়েন সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির। নতুন সদস্য সচিবের দায়িত্ব পান পূর্বের কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়া উদ্দিন সিকদার। জিয়াউদ্দিন সিকদার দায়িত্ব পাওয়া মাত্রই তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ফেলে যাওয়া কর্মীদের দলে টানা, বাস টার্মিনাল, বাজার ও বস্তি এলাকায় প্রভাব বিস্তারসহ দলীয়করণ ও দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক সম্পর্কে তৃণমূলের রয়েছে দ্বিধা দ্বন্দ্ব। তার নেতৃত্ব মানতে চায় না অনেকেই। অন্যদিকে পরিশ্রমী ও জেল জুলুমের কষ্টের শিকার হলেও আফরোজা নাসরিন এখনো অতটা যোগ্য নয় বলে দাবি সিনিয়র নেতাদের।
এ ব্যাপারে মহানগর আহ্বায়ক কমিটির সাবেক ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক এ্যাড. আলী হায়দার বাবুল বলেন, কমিটি বিষয়ে কোন কথা বলতে চাই না। তবে এ কমিটিতে তিনি অন্তর্ভূক্ত হতে চাননি। এ সময় তার কথার মধ্য থেকে ক্ষুব্ধতা প্রকাশ পায়। তিনি বারবার বলছিলেন, জন্মলগ্ন থেকেই বিএনপি করছি আজ পর্যন্ত সিনিয়র নেতা হতে পারিনি। আর কমিটি নিয়ে কোন কথা বলতে চান না তিনি। একই ধরনের উত্তর এসেছে সাবেক যুগ্ম আহ্বায়কদের কাছ থেকেও।
এদিকে ওয়ার্ড বিএনপির অনেকেই এই কমিটি মনপুত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, এতে করে বরিশালের নেতৃত্ব সংকট স্পষ্ট হয়েছে।
এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে কমিটি গঠিত হয়েছে। যারা দীর্ঘ আন্দোলন -সংগ্রামে সড়কে সরব ছিলেন। যারা হামলা-মামলা ও জেল খেটেছেন তাদেরকেই কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। সিনিয়র হলেই কমিটিতে জায়গা পাওয়া যায় না। সেখানে একজন জুনিয়র কর্মীও তার রাজনৈতিক দক্ষতা দিয়ে বড় পদে আসতে পারে। যারা এ কথা বলছে তারা পদ পদবীর জন্য বিএনপিতে জায়গা করে নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সুযোগ আর হবে না। যারা দলের এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে তারাই বিএনপিতে জায়গা করে নেবে। সেখানে সিনিয়র জুনিয়র বলে কিছু থাকবে না বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের নির্দেশে ত্যাগীদের নিয়ে কমিটি গঠিত হয়েছে। এই কমিটিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে দল ও দেশবাসীর স্বার্থে। এখানে সিনিয়র-জুনিয়র বলতে কিছু নেই। প্রয়োজনের সময় যারা দলের জন্য কাজে এসেছে, যারা হামলা-মামলা ও জেল খেটেছে তাদেরকেই মহানগর কমিটিতে জায়গা করে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।