এম জালাল উদ্দীন, পাইকগাছা,
উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলের কৃষিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে মৌসুমভিত্তিক প্রশিক্ষণ, নতুন প্রযুক্তি ও মাল্টিলেয়ার পদ্ধতিতে এক জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন উদ্যোগ। এসবের ফলে পাইকগাছার কৃষকরা এখন অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন করে নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
সরকারের নানামুখী কৃষি প্রকল্প ও কৃষকের পুনর্বাসন-প্রণোদনা কর্মসূচির ফলে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে খাল-বিলের ধারে ও মৎস্য ঘেরের আইলে লাউ, ঢেঁড়স, করলা, মিষ্টিকুমড়া, তরমুজ, বরবটি, শিম, ঝিঙে, পেঁপে, শসা, পুঁইশাক, লালশাকসহ বিভিন্ন সবজি শোভা পাচ্ছে।
কৃষি অফিসের উদ্যোগে বিনামূল্যে সার-বীজ বিতরণ এবং কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ফলে রবি মৌসুমে গম, আলু, মিষ্টি আলু, সরিষা, ভুট্টা, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, ধনিয়া, মসুর, মুগ, খেসারি, মটর, মাষকলাই, তরমুজসহ শীতকালীন ফসলের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়াও পতিত জমিতে আধুনিক কৃষি প্রকল্পের আওতায় উপজেলার দেলুটির ২২ নম্বর পোল্ডারের ডিহিবুড়া খালের দুই পাড়ে মাছচাষের পাশাপাশি পতিত জমিকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক কৃষি প্রজেক্ট তৈরি করেছেন স্থানীয় কৃষক বিধান মণ্ডল। একইভাবে গদাইপুর ইউনিয়নের পুরাইকাটি বিলে ঘেরের আইলে সবজি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন শেখ আহসান উল্লাহ। একসময় এক ফসলি জমিগুলো এখন বহু ফসলি জমিতে রূপ নিচ্ছে।
পাইকগাছা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, উপজেলায় ঘেরের আইলে ২৩৪ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। লতা ও দেলুটিতে তরমুজের ফলনও আশাব্যঞ্জক। গত পাঁচ বছরে খাদ্যশস্য উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে পাইকগাছার কৃষকরা।
উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততা ও সেচের পানির সংকট এই অঞ্চলের কৃষির বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সিডর, আইলা, বুলবুল, আম্পান, ইয়াস ও করোনার ধাক্কা সামলে বর্তমানে কৃষকরা তিন থেকে চারটি ফসল উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছেন। একই জমিতে মাল্টিলেয়ার পদ্ধতিতে একসঙ্গে একাধিক ফসল চাষ করে জমির পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে।
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ একরামুল হোসেন বলেন-
উপকূলীয় অঞ্চলে উপযোগী নতুন জাত উদ্ভাবনে বৈজ্ঞানিকরা প্রতিনিয়ত কাজ করছেন। মাঠপর্যায়ে দ্রুত প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে পতিত জমিকে আবাদযোগ্য করে তোলা হচ্ছে। ফলে ফসল নিবিড়তা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কৃষিতে বৈচিত্র্য এসেছে।
তিনি আরও বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত অঞ্চলে সবজি, ফল, ডাল, গম, ভুট্টা, তরমুজ ও আলুর উৎপাদন ব্যাপক বাড়ালে কৃষকদের আয়ের পথ আরও সহজ হবে।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮