হোসাইন রুবেল ভোলা।।
মেহেন্দিগঞ্জের কালিগঞ্জ নৌপুলিশ ফাঁড়ির বিরুদ্ধে ভোলার জেলেদের হয়রানি করে আটকে রাখা, বৈধ জালকে অবৈধ বলে উঠিয়ে নিয়ে বিক্রি করে দেয়া, মাসিক চাঁদা আদায় করাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। নৌপুলিশের এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জেলেরা প্রতিবাদ করলে তাদের নদীতে মাছ ধরতে দিবেনা বলে কালিগঞ্জ নৌপুলিশ ফাঁড়ির মাঝিদের দিয়ে ভোলার সীমানার জেলেদের হুমকি প্রদান করা হয়। এমনকি জলদস্যু বলে বন্দুকযুদ্ধে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি প্রদান করা হয় বলে জেলেরা অভিযোগ করেন। তবে এব্যাপারে কালিগঞ্জ নৌথানার ওসি মো: ফারুক বলেন, নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধে এই ধরণের অভিযোগ ভিত্তিহীন। নদী পথ সুরক্ষা রাখার জন্য নৌ-পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নদীতে কিছু অসাধু জেলে তারা অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরে মাছের বংশ নিরবংশ করে থাকেন। তাদের জালগুলো ধরলে তারা এই ধরণের মিথ্যা অভিযোগ করে বেড়ান।
সরকার নদীতে জেলেদের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন জায়গায় নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করেছেন। কিন্তু জেলেদের নিরাপত্তার বদলে ভোলার জেলেদের কাছে মেহেন্দিগঞ্জের কালিগঞ্জ নৌপুলিশ যেন মূর্তিমান আতংকের নাম। জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে নামলে কালিগঞ্জ নৌপুলিশ ভোলা সীমানায় প্রবেশ করে জেলেদের জাল নিয়ে আটকে রেখে মোটা অংকের টাকা আদায় করা। কখনও জেলে ও জাল উভয় আটকে রাখা, মাসিক চাদাঁ আদায় করাসহ নানানভাবে জেলেদের হয়রানী করে যাচ্ছেন এই নৌপুলিশ টিম। এমন অভিযোগ এনে জেলেরা সাংবাদিকদের এই হয়রানির কথা জানান। জেলেরা বলছেন এইভাবে প্রতিনিয়ত নৌ-পুলিশ ধারা হয়রানি হলে নদীতে জেলেদের মাছ শিকার বন্ধ করে দিতে হবে।
নিরীহ জেলে মোঃ সবুজ বলেন, আমরা নদীতে যাইয়্যা বৈধ জাল বাইতেছি। জাল ফালাইছি, আমাদের ভোলার আওতার ভিতরে জাল ফালাইয়্যা বইয়্যা রইছি। হেরা আইছে (নৌপুলিশ), আইয়া আমাগো লগে কথা নাই বাতি নাই, আমাদের জাল ধইর্যা জাল টানা ধরছে, জাল টাইন্না নৌপুলিশে জাল নিয়া গেছে। জাল নিয়া যাওয়ার পর আমাগোরে বললো তোমরা টাকা পয়সা নিয়া আসো, তোমাদের জাল দিয়া দিমু। আমরা টাকা পয়সা নিয়ে গেছি। হেরা আমাগোরে ঘুরাইয়া রাইতের ১১টা পর্যন্ত রাখলো। রাইতের ১১টা পর্যন্ত বওইয়্যা রাইখ্যা কোন জালপাল দিলো না। জাল চাইলে আমাদেরকে হুমকী দেয়।
সবুজ আরও বলেন, নৌপুলিশ দিছে সরকার গাঙ্গে নিরাপত্তার জন্য, আমরা বাই বৈধ জাল, সরকার অভিযান দেয়, আমরা অভিযান পালন করি। অভিযান পালন করে এখন কোন অভিযান নাই, আমাগো সান্দি জাল হল বৈধ। এখন আমরা মাছ ধরতাছি। এখন সরকার যদি নৌপুলিশ আমাদের নিরাপত্তার জন্য দিয়া,নৌপুলিশ যদি ডাকাতি করে গাঙ্গে,তাহলে তো আমরা নদীতে মাছ ধরতে পারুম না। নৌপুলিশের হাত থেকে কিভাবে বাচঁতে পারি সে জন্য সরকারের কাছে আমাদের আবেদন।
মেঘনার নদীতে ২৬ বছর ধরে মাছ ধরে আসছেন জেলে মহাসিন। তিনি বলেন, নদীতে নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে সরকার পুলিশের মধ্যে থেকে নৌপুলিশ নামে একটি পৃথক বাহিনী করে দিয়েছে। এই বাহিনীর কাজ হলো নদীতে সংঘটিত বিভিন্ন ধরনের অপরাধ দমন করা। নদীতে মাছ শিকার করতে গেলে জেলা জলদস্যু, ডাকাতের হামলার শিকারসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে। জেলেদেরকে এসব সমস্যা থেকে সুরক্ষিত রাখাই হলো নৌপুলিশের কাজ। সেই রক্ষকই যখন ভক্ষক! নৌপুলিশই এখন ডাকাতের ভূমিকা পালন করছে এমন অভিযোগ নিরীহ জেলেদের। অসাধু নৌপুলিশ কর্মকর্তাদের হয়রানী ও অত্যাচারের অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মেঘনা-তেঁতুলিয়ার জেলেরা। নদীতে অভিযান না থাকলেও জেলের বৈধ জাল তুলে আনা, তাদের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবী, চোর-ডাকাত কিংবা সন্ত্রাসী আখ্যাসহ বিভিন্নভাবে নিরীহ জেলেদেরকে হয়রানী করছে নৌপুলিশ সদস্যরা।
নাম না প্রকাশ শর্তে একাধিক জেলে অভিযোগ করে বলেন, জেলেরা যখন নদীতে বৈধ জাল ফেলে মাছ শিকার করতে যায় হঠাৎ কিছু নৌপুলিশ সদস্য ও তাদের সোর্স এসে জাল অবৈধ বলে নিয়ে যায়। নিরীহ জেলেরা তাদের ভয়ে তখন কিছু বলতে সাহস পাই না। জাল নিয়ে যাওয়ার পর সোর্সের মাধ্যমে জেলেদেরকে নৌপুলিশ সদস্যদের সাথে দেখা করতে বলে। জেলেরা যখন তাদের কাছে যায়, তখন জাল ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য মোটা অংকের টাকা দাবী করে নৌপুলিশ। জেলেরা তখন নিরুপায় হয়ে ধারদেনা করে নৌপুলিশের চাহিদা মতো টাকা জোগার করে জাল ছাড়িয়ে আনে। টাকা দিতে না পরলে অসহায় জেলেদের জালগুলো অন্য যায়গায় বিক্রি করে দেয়। কিছু সময় জাল পুড়েও ফেলে নৌপুলিশ সদস্যরা। এতে একদিকে যেমন জেলেরা শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। অন্যদিকে মহাজনের দাদনের টাকা কাধে নিয়ে ও সংসারের দুচিন্তায় দিন কাটাতে হয়।
তবে এব্যাপারে কালিগঞ্জ নৌ থানার ওসি মো: ফারুক বলেন, নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধে এই ধরণের অভিযোগ ভিত্তিহীন। নদী পথ সুরক্ষা রাখার জন্য নৌ- পুলিশ নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নদীতে কিছু অসাধু জেলে তারা অবৈধ জালদিয়ে মাছ ধরে মাছের বংশ নিরবংশ করে থাকেন। তাদের জালগুলো ধরলে তারা এই ধরণের মিথ্যা অভিযোগ করে বেড়ান। আর কোন পুলিশ সদস্য যদি জাল ধরে বিক্রি করে দেয় এমন প্রমান মিললে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।
নৌপুলিশের এই চাঁদাবাজীর কারণে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে মেঘনা পাড়ের হাজারো জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। তারা নৌপুলিশের হয়রানীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮