নেত্রকোনা প্রতিনিধি।।
প্রতিবন্ধী সহ বিভিন্ন ভাতা পাওয়ার যোগ্য ভূক্তভোগি ব্যক্তিদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে নেত্রকোণা সদর উপজেলার আমতলা ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ড সদস্যের বিরুদ্ধে। জেলা প্রশাসক ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বরাবর অভিযোগ দাখিল করেছেন ভূক্তভোগি পরিবার।
সরজমিনে ইউনিয়নের শিবপ্রসাদপুর গ্রামে গিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও পরিবারের সাথে কথা বললে জানা যায়, ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ নিজাম উদ্দিন প্রতিবন্ধী পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নামে প্রতারণা করেছে। কারো কারো কাছ থেকে কার্ড করে দেয়ার বিনিময়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। তালিকায় নাম থাকলেও আজও তারা কোন ভাতা পায় নি। তাদের টাকা যাচ্ছে অন্য মোবাইল নম্বরে।
এ বিষয়ে ইতোমধ্যে শিবপ্রসাদপুর গ্রামের মুশফিকুর রহমান সাগর নামের একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী গত ১৮ মে, ২০২২ তারিখে নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক বরাবর ও সমাজসেবা অফিসের উপ-পরিচালক বরাবর অনুলিপি প্রদানের মাধ্যমে মোঃ নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগে সাগর বলেন, "আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে অতি কষ্টে জীবন যাপন করছি। আমার বড় ছেলে ইমন মিয়া জন্মলগ্ন থেকে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। তার প্রতিবন্ধী ভাতার জন্যে প্রায় দেড় বছর আগে আমার ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার মোঃ নিজাম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমার ছেলের কার্ড করে দেবে মর্মে আমার কাছ থেকে যাবতীয় ডকুমেন্ট নিয়ে যায়। এর কিছুদিন পর আমার কাছ থেকে অফিসিয়াল খরচ বাবদ ১হাজার টাকা দাবী করলে তাকে বলি, আমি দিনে আনি দিনে খাই, এই টাকা আমার পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। এরপর সে বলে তাহলে ভাতা পাবে না। এর পর আমি টাকা যোগার করতে না পেরে তার সাথে আর যোগাযোগ করিনি।
এ দিকে কিছুদিন আগে আমার চাচাতো ভাই মারফর সমাজ সেবা অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার ছেলের নামে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা চালু আছে (যার সিরিয়াল নম্বর: ৩৪৬, আইডি নম্বর ০৩৭২০০৩৬০৩১)। এরপর অফিস থেকে আমতলা ইউনিয়নের একটি তালিকা বের করে দেখি আমার ছেলের ভাতা অন্য আরেক মোবাইল নম্বরে কে বা কারা উত্তোলন করছে (মোবাইল নম্বর- ০১৯৭১৬৭৮৬৩৫)। এই নম্বরে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম যে, নাম্বরটি ৯নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ নিজাম উদ্দিনের ছেলে মোঃ আমানউল্লার। তারপর ইউপি সদস্যের সাথে যোগাযোগ করেলে তিনি বলেন এই নাম্বার চিনি না, আমার সাথে যোগাযোগ করলে লাভ নাই। এই কথা লোক সমাজে জানাজানি হলে জানতে পারি এই রকমের সমস্যা গ্রামের আরও প্রতিবন্ধীদের সাথেও এই মেম্বার করেছে। আজ দুইদিন ধরে মেম্বার আমার বাড়ীতে এসে বলে নতুন করে কার্ড করে দিবে কিন্তু আমি এতে রাজী না হওয়ায় আমায় হুমকীও প্রদান করে। আমি এর প্রতিকার চাই।"
অন্য আরেক বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী আশরাফুল আলম জিসানের (৪) দাদার সাথে কথা বলে জানা যায়, জিসানের বাবা বেকারিতে কাজ করে। গতবছর আমার নাতির প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য কার্ড করতে নাম ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার মেম্বারের কাছে দেয়। কিন্তু তারা এ বিষয়ে এতো দিন কিছুই জানতে পারে নাই। পরে জানা যায়, নাম ঠিকানা ঠিক থাকলেও মোবাইল নাম্বার তাদের কারো না। তার মেয়ে আজ পর্যন্ত কোন টাকা পয়সা পায়নি।
খোজঁ নিয়ে জানাযায় শিবপ্রসাদপুর এরকম আরও অনেকেই তাদের ভাতা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগে অভিযুক্ত মোঃ নিজাম উদ্দিন মেম্বারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ জীবনে আমি এমন করিনি। এর পরেও যদি কেউ করে থাকে যেহেতু অফিস আছে আমি তো দেখবই। কত দিন ধরে যে এটা হচ্ছে এইটা আমি জানি না, আজকে আমি অফিসে আসছি, এখানে স্যার আছে অফিসার আছে সবাই জানেন, আমি গত পাঁচ বছরও ছিলাম এখনও আছি এমন কেউ আমাকে বলতে পারবে না যে, আমি কারও কাছ থেকে দশ টাকা খেয়েছি। আমাকে বলা হচ্ছে আমার মোবাইল নাম্বারে টাকা ঢুকেছে, যদি ঢুকে থাকে তাহলে অফিসে মোবাইল নাম্বারও দেখাচ্ছি। যদি ঢুকে তাহলে আমি টাকা দিয়ে দিবো। আমিতো কোন প্রতিবন্ধী না, আমি মেম্বার আমি জনগণকে সেবা দিচ্ছি। এরপরেও যদি কেউ কোনো দুর্নীতি করে থাকে এটাতো আমি জানি না।" এসময় তার ছেলের নম্বরে টাকা ঢুকে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমার ওয়ার্ডে যারা অভিযোগ করেছে তারা কেউ তো আমার কাছে বলেনি যে, আপনার নামে টাকা আসছে কিংবা আপনার ছেলের নামে টাকা আসছে এমন কেউ আমার কাছে কিছু বলে নাই। যদি এমন বলতো এবং ঘটনা সত্য হতো তাহলে আমি টাকা দিয়ে দিতাম। এজন্য আমি আজকে শুনছি এবং আমি আজকেই সমাজসেবা অফিসে আসছি। প্রতিবন্ধীর টাকা আমি কেনো খাবো? আমাকে তো আল্লাহ প্রতিবন্ধী বানায়নি, আমাকে জনসেবক বানিয়েছে।"
এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা উপ-পরিচালক মোঃ আলাল উদ্দিন বলেন, সরকার শতভাগ ভাতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। শতভাগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বিভিন্ন ভাতাভোগীর ভাতা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। তবে এই কাজে কেউ যদি কোন রকম দূর্নীতির আশ্রয় নেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমতলা ইউনিয়নে কিছু অভিযোগ রয়েছে। সঠিক তদন্তের ভিত্তিতে দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮