প্রিন্ট এর তারিখঃ অগাস্ট ৬, ২০২৫, ১২:৪৭ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪, ১১:৩২ এ.এম
চমক দেখালেন জেলা প্রশাসক- মরকখোলার মরা খালে পরিচ্ছন্নতা অভিযান।।

আরিফ আহমেদ
বিশেষ প্রতিবেদক।।
সকাল সাড়ে সাতটায় বরিশালের মড়কখোলা পুলের উপর শত শত মানুষের উৎসুক ভিড়। সবাই ঝুঁকে আছেন পুলের নীচের কচুরিপানা ভর্তি মৃতপ্রায় খালটির দিকে। নীচে তখন বরিশালের জেলা প্রশাসকসহ বিডি ক্লিন সংগঠনের শতাধিক কিশোর যুবা এবং বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীসহ সিটি করপোরেশনের কয়েকজন পরিচ্ছন্ন কর্মী প্রস্তুতি নিচ্ছেন খালের ময়লা নোংরা এঁটোকাদায় নামতে।
জেলা প্রশাসক নিজেই একটি বাঁশ হাতে নিয়ে আবর্জনার স্তূপ টেনে আনলেন হাতের কাছে। তারপর টেনে তুললেন ময়লা আবর্জনাগুলো। ব্যাস উদ্বোধন হয়ে গেল নগর পরিচ্ছন্নতার নতুন এক দিগন্তের। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সাথে নিয়ে বিডি ক্লিন সদস্যরাও ঝাপিয়ে পরে মড়কখোলা খালটিকে বাঁচানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। উঠে আসছে কচুরিপানা- ময়লা ভরা পলিথিন- পানির বোতলসহ অসংখ্য নিষিদ্ধ বস্তু। চমৎকার দায়িত্ব বন্টন। নোংরা পানিতে নামতে যাদের সমস্যা তারা তীরে দাঁড়িয়ে ময়লা আবর্জনার স্তূপ তুলে দিচ্ছেন ডালা বা বস্তায়। সেই বস্তা বা ডালা আবার সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাকে তুলে দিচ্ছে একদল। এভাবেই বরিশালের সাতটি খালকে নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখা হবে বলে জানালেন বরিশালের জেলা প্রশাস। আর চমৎকার ও প্রশংসনীয় এই কাজটি পূর্ব থেকে ঘোষণা দিয়ে শুরু করে দিলেন বরিশালের নতুন জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইন। বরিশালের দায়িত্ব গ্রহণ করেই চমক দেখালেন তিনি। চালু করেছেন ফুল নেয়া নয়- দেওয়ার সংস্কৃতি। এরপরই ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে নগর পরিচ্ছন্নতার এই কাজের উদ্বোধন করলেন আর বললেন, আমাদের শহর পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব আমাদের। তিনি এ বিষয়ে নগরবাসীকে সচেতন ও সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করুন। ময়লাটা যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলেন। এতে শুধু আপনারই নয়- আপনার সন্তানের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা হবে।
এসময় উৎসুক দর্শকের কয়েকজন বললেন, সাবেক সংসদ সদস্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী সাতটি খাল পুনরুদ্ধারে ১২ শত কোটি টাকা বরাদ্দ এনেছিলেন। যা নিয়ে সংবাদও হয়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদ তিনি ও সিটি করপোরেশন যৌথভাবে নগরীর বেশ কয়েকটি খাল পুনরুদ্ধার করলেও এই লাকুটিয়া থেকে জেল খাল পর্যন্ত কোনো কাজই তারা করেননি বলে জানান এলাকাবাসী। এসময় বস্তাভরা ময়লা পলিথিন খালে ফেলার জন্য তারা নতুন বাজারের ব্যবসায়ীদের দায়ী করেন। আবার ব্যবসায়ীরা দায়ী করেন খাল পার জুড়ে গড়ে ওঠা বাসাবাড়ির মালিকদের।
তাদের থামিয়ে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের একজন অপর্ণা বলেন- এই শহর- এই খাল সবই আমাদের। এর সৌন্দর্য ও রক্ষণাবেক্ষণ আমাদেরই করতে হবে। ঝগড়াঝাটি না করে আসুন আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করি- আমরা কোনো ময়লা আবর্জনা আর খালে ফেলবো না। কেউ ফেলতে চাইলে তাকে বাধা দেব। যে ফেলবে তাকে দিয়েই এরপর এই খাল পরিষ্কার করানো হবে বলে নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়ার আহ্বান জানান বৈষম্য বিরোধী এই শিক্ষার্থী।
বরিশাল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে
ধান-নদী-খাল- এই তিনে বরিশাল শ্লোগানকে সামনে রেখে জেলার খালসমূহের প্রবাহ পূর্বের ন্যায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান জেলা প্রশাসক। নগরীর ঐতিহ্যবাহী জেল খাল ও লাকুটিয়া খালের সংযোগ স্থল মড়কখোলার পোল থেকে এই খাল পরিষ্কার অভিযানের সূচনা করেন তিনি। বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীর বক্তব্যে সহমত পোষণ করে জেলা প্রশাসক বলেন- যে ময়লা ফেলবে- তাকে দিয়েই খাল পরিষ্কার করানো হবে- অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এটাই উত্তম প্রস্তাব। খালের পারে দর্শনীয় স্থানে এই নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়া হবে বলে সমর্থন জানান বরিশালের জেলা প্রশাসকসহ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক বিভাগীয় কমিশনার শওকত আলী দুজনেই। উদ্বোধন সময়ে মড়কখোলার লাকুটিয়া ও জেল খালের সংযোগ স্থানে আরো উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক গৌতম বাড়ৈ- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক -সার্বিক- মনদীপ ঘরাই- অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লুসি কান্ত হাজন- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহাবুব উল্লাহ মজুমদার, বিভিন্ন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বিডি ক্লিন বরিশাল- বেলা- বাপা- এসএনডিসি- মানবীসহ বিভিন্ন সংগঠন। এছাড়াও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মড়কখোলা খালটি পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা করেন।
জেলা প্রশাসক চলে যাওয়ার পর বিডি ক্লিন সদস্য ও শিক্ষার্থীরা সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সাথে নিয়ে খালের পরিচ্ছন্নতা কাজ চালিয়ে যেতে দেখা যায়। এসময় বিডি ক্লিন বরিশালের সমন্বয়ক জাহিদ ইরফান বলেন- ২০১৬ সাল থেকে বিডি ক্লিন বরিশাল সহ সারা বাংলাদেশে পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কাজ করছে। তৎকালীন সময়ে জেলা প্রশাসক সাইফুজ্জামান এরকম একটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়নের আগেই তিনি চলে যান। নতুন জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইন সাহেব এসেই এই উদ্যোগটি বাস্তবায়ন শুরু করেছেন। সিটি করপোরেশন আমাদের লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছে। আমাদের প্রায় শতাধিক সদস্য এই মুহূর্তে খালের ভিতর ও পাড়ে দায়িত্ব পালন করছে বলে জানান জাহিদ।
পারে অপেক্ষমান নগরীর সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি রফিকুল আলম, কাজী মিজানুর রহমানসহ অনেকেই এসময় নদী ও খাল দূষণ রোধের জন্য প্রশাসনিক কঠোরতার দাবী জানান। তারাও খাল ও নদী তীরবর্তী চোখে পড়ার মতো স্থানে নোটিশ বোর্ড ঝুলিয়ে দেয়ার পরামর্শ দেন। বলেন- যে বা যারাই ময়লা আবর্জনা নদী বা খালে ফেলবে। তাকে তাৎক্ষণিক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, কোড নাম্বারঃ ৯২