Dhaka , Wednesday, 15 October 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
চট্টগ্রামে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে কানাডার সহযোগিতা চাইলেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন চাঁদাবাজির মামলায় বিএনপি নেতার জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় আইনজীবীর উপর হামলার চেষ্টা, সংবাদ সংগ্রহে বাধা তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নে রূপগঞ্জে দলীয় জনসভা সদরপুরে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ ধরায় ৭ জেলের কারাদণ্ড। কালিহাতীতে বাক প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণ: অবশেষে গ্রেফতার ধর্ষক ইসমাইল সরাইলে মাসব্যপি টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচীর উদ্বোধন হাটহাজারীতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ, তিন ফার্মেসীকে জরিমানা। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের মিনিবার ফুটবল মেগা ফাইনাল অনুষ্ঠিত নোয়াখালীতে বাসে গ্যাস নেওয়ার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আহত ৪ ভোলাকোট ইউনিয়ন শিক্ষক সমিতির কমিটি গঠন মতিন সভাপতি  হারুন সাধারণসম্পাদক   যশোরে ১০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ এক মাদক কারবারি গ্রেফতার শার্শায় আরোও এক ভ্যানচালকের মরদেহ উদ্ধার ঈদগাঁওতে বন্দুকসহ পুলিশের হাতে আটক ১ রূপগঞ্জে জোরপূর্বক ব্যবসায়ীর জমি ঘরে দখলের চেষ্টা কক্সবাজারে টেকসই মৎস্যচাষ উন্নয়নে দিনব্যাপি কর্মশালা অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজে উদ্বোধন হলো JUSC Sports Club গর্জনিয়া–কচ্ছপিয়া লাইন পরিচালনা কমিটি অনুমোদন দিল কক্সবাজার জেলা সিএনজি, অটোরিকশা ও টেম্পো সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন- রেজিষ্ট্রেশন নং-১৪৯১ রামগঞ্জে আলোচিত মা মেয়ে হত্যার সন্দেহভাজন আরেক আসামি গ্রেফতার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর ডোর টু ডোর প্রকল্পের মাধ্যমে জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে হবে:- মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সাভার আশুলিয়ায় প্রতারণা মামলায় ভারতীয় নাগরিক গ্রেপ্তার রামগঞ্জে আলোচিত মা-মেয়ে হত্যাকান্ডে খুনিদের ফাঁসির দাবিতে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন নোয়াখালীতে রাস্তায় প্রকাশ্যে যুবককে গলা কেটে হত্যা নোয়াখালীতে বিএনপি নেতার উদ্যোগে সড়ক সংস্কার ঠাকুরগাঁও হরিপুরে ঘন কুয়াশায় শীতের আগমনী বার্তা নোয়াখালীতে সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে গৃহবধূকে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার-১ সরাইল,ব্যাটালিয়ন(২৫বিজিবি) কর্তৃক বিপুল পরিমাণের অবৈধ মালামাল আটক সুন্দরগঞ্জে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলছে কর্মবিরতি ‘সমন্বিত উদ্যোগ, প্রতিরোধ করি দুর্যোগ’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে হাটহাজারীতে দুর্যোগ প্রশমন দিবস উদযাপন সাবেক প্রধান শিক্ষক আবু তাহের চৌধুরীর ইন্তেকালঃ বিভিন্ন মহলের শোক নরসিংদীর পলাশে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত

চট্টগ্রাম নগরীতে অবৈধ ব্যাটারি রিকশার দৌরাত্ম্য, নিষিদ্ধ ৫০ হাজার অটোরিকশা

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 11:33:02 am, Sunday, 20 April 2025
  • 236 বার পড়া হয়েছে

চট্টগ্রাম নগরীতে অবৈধ ব্যাটারি রিকশার দৌরাত্ম্য, নিষিদ্ধ ৫০ হাজার অটোরিকশা

ইসমাইল ইমন চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৫০ হাজার বিদ্যুৎ খেকো গতিদানব ব্যাটারি চালিত রিকশা। এইসব অটোরিকশা নিষিদ্ধ করলেও চট্টগ্রাম মহানগরীর অলিগলি হতে মুল সড়ক জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত এই সব অটোরিকশা। অলিগলি ছেড়ে মূল সড়কে অনেকটা ‘নিয়ন্ত্রণহীন’ চলছে বেপরোয়া এসব যানবাহন।
চট্টগ্রাম ও ঢাকা মহানগরে চলাচলে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অদৃশ্য কোন এক শক্তির বলে এসব গাড়ি দেদারছে চলছে চট্টগ্রাম মহানগরীতে। আর এ চলাচলকে আরও বেগবান করতে কয়েকটি সংগঠন মিলে গড়ে তুলেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অভিযোগ রয়েছে অবৈধ এসব গাড়ি চলতে দেয়া বাবদ নগরীতে প্রতিদিন চাঁদাবাজি হয় কমপক্ষে ৭০ লাখের অধিক টাকা।
এ বিষয়ে সিএমপির উপ–পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক–পশ্চিম) তারেক আহমেদ জানান, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। কাজেই নগরীতে এগুলোর চলাচল সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি। অবৈধ ব্যাটারি রিকশার দৌরাত্ম্য বন্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। এক্ষেত্রে আমাদের নির্দেশনা হলো রাস্তায় এই গাড়ি দেখামাত্রই ধরা, জরিমানা করা। তবে এখানে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। জব্দ গাড়িগুলো রাখার মতো আমাদের পর্যাপ্ত জায়গা (ডাম্পিং প্লেস) নেই। ফলে গাড়ি ধরে জরিমানা করে একদিন পর ছেড়ে দেয়া হয়। যেদিন ধরে সেদিনও ছেড়ে দিতে হচ্ছে। যে কারণে মনে হচ্ছে চালকরা রাস্তায় এই অবৈধ গাড়ি নামানোর সাহস পাচ্ছে।

ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগরে অন্তত ৫০ হাজার ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা রয়েছে। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করছে ট্রাফিক পুলিশ। ৫ আগস্টের আগে জব্দ করা ব্যাটারিচালিত রিকশা ৩ হাজার ৩৫০ টাকা জরিমানা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হতো। এখন জব্দ করলে ২১ দিন পর ৭৫০ টাকা জরিমানা নিয়ে ছাড়া হয়।
সূত্রমতে, কোনো রকম সরকারি অনুমোদন ও রাজস্ব আদায় ছাড়াই চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে। দৈনিক অটোরিকশা প্রতি ১৩০–১৪০ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও আবার এই চাঁদার পরিমাণ ১৭০–১৮০ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাটারিচালিত রিকশায় দুই ধরনের ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর মধ্যে কেউ কেউ ১৩০ ভোল্টের ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারি ব্যবহার করে। আবার কেউ কেউ ২৩০ ভোল্টের ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারি ব্যবহার করে থাকে। এই দুই ধরনের ব্যাটারি চার্জ দিতে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ বিল খরচ হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বাকি টাকা গ্যারেজ মালিকের মুনাফা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, বায়েজিদ, খুলশী, কোতোয়ালী, পাহাড়তলী, হালিশহর, আকবরশাহ থানা এলাকায় সবচেয়ে বেশি চলে ব্যাটারি চালিত রিকশা। এর মধ্যে চান্দগাঁও থানাধীন মৌলভীবাজার থেকে কালুরঘাট ব্রিজ এবং ওয়াসা রোড, পাঠাইন্না গোদা থেকে হামিদচর, ওসমানিয়াপুল থেকে সিএন্ডবি এর আশেপাশের পুরো এলাকা মিলে ১০–১২ হাজার ব্যাটারি রিকশা চলাচল করছে।
বাকলিয়া থানাধীন এক্সেস রোড, চকবাজার ধনিয়ারপুল থেকে সৈয়দ শাহ রোড ও বড় কবরস্থান হয়ে পুলিশ বিট, আব্দুল লতিফ হাট থেকে চেয়ারম্যান ঘাট এবং আন্দরকিল্লা ও টেরিবাজার থেকে কালামিয়া বাজার পর্যন্ত পাঁচ হাজার রিকশা চলাচল করে। চকবাজার এলাকার ডিসি রোড, কে বি আমান আলী রোড, নবাব সিরাজউদ্দৌলা রোড এবং এক্সেস রোডে চলাচল করে কয়েক হাজার ব্যাটারি রিকশা।
খুলশী থানাধীন জালালাবাদ থেকে ওয়্যারলেস হয়ে সেগুনবাগান রেল স্কুল ও মামা–ভাগিনার মাজার পর্যন্ত, বিজিএমইএ ভবনের সামনে থেকে ঝাউতলা বাজার হয়ে আমবাগান রেলগেট ও সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে পলিটেকনিক মোড় পর্যন্ত ৪/৫ হাজার ব্যাটারি রিকশা চলাচল করছে।
বায়েজিদ, খুলশী এলাকা ও পাঁচলাইশের হিলভিউসহ আশেপাশের এলাকায় ব্যাটারি রিকশা চলাচল করে। বায়েজিদ থানাধীন জামশেদ শাহ মাজার রোড, কুলগাঁও আবাসিক এলাকা হতে খাজা রোড, অক্সিজেন মোড় থেকে আতুরার ডিপু, চন্দ্রনগর, আরেফিন নগর, বাংলা বাজার টেক্সটাইল মোড় ও হিলভিউ আবাসিক এলাকা, রৌফাবাদ কলোনি, বাংলাবাজার বশর কোম্পানির গ্যারেজ পর্যন্ত ৩–৪ হাজার ব্যাটারি রিকশা চলছে।

নগরীর হালিশহর বড়পুল ও পাহাড়তলী থানাধীন ফইল্যাতলী বাজার থেকে সবুজবাগ পেট্রোল পাম্পের মুখ, হালিশহর বি–ব্লক শাহজাহান বেকারির সামনে থেকে আশপাশের পুরো এলাকা, শারীরিক শিক্ষা কলেজ থেকে সাগরপাড়, বণিকপাড়া হরি মন্দির, আইয়ুব খানের গ্যারেজ থেকে পাহাড়তলী থানা এলাকার সাগরিকা রোড, বেপারিপাড়া কাসেম কোম্পানির গ্যারেজ হয়ে আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকার ২৯টি সড়ক পর্যন্ত ১৫ হাজারের অধিক ব্যাটারি রিকশা চলাচল করছে।
ডবলমুরিং থানাধীন বিল্লাপাড়া পুলিশ বিট হয়ে ৯নং ব্রিজ ও ভাঙ্গা ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ব্যাটারি রিকশা চলাচল করছে। এছাড়াও ইপিজেড থানাসহ অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সড়কে আরও পাঁচ হাজারের মত ব্যাটারি রিকশা চলাচল করছে বলে জানিয়েছে গ্যারেজ মালিকরা। স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ রিকশার গ্যারেজের নামে অনুমোদন নিয়ে বিদ্যুতের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এই সব ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চার্জিং ষ্টেশন করা হচ্ছে। অনেক অটোরিকশা বেপরোয়া চলে তবে সেগুলোর কোন সুনির্দিষ্ট লাইন পাওয়া যায়নি।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অযান্ত্রিক এসব যানবাহন যাত্রী এবং অন্যান্য গাড়ির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এই গাড়ির যে কাঠামোতে তৈরি, এর সঙ্গে গতি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে রাস্তায় হামেশা দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে মহানগর পুলিশ এসব রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করে। কিন্তু তা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
সুজন নামে আরেকজন চালক বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে ব্যাটারিচালিত রিকশা ‘টো’ করলে ৩ হাজার ৩৫০ টাকা জরিমানা দিলেই ছেড়ে দিত ট্রাফিক পুলিশ। এখন ২১ দিন পর ৭৫০ টাকা জরিমানা দিয়ে আনতে হয়।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব ব্যাটারিচালিত রিকশার কোনো অনুমোদন দেয়নি বিআরটিএ। ফলে এসব অবৈধ যানবাহন।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়। বিদ্যুৎ ঘাটতির সময়ে অবৈধ এই যানবাহন চলতে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত হচ্ছে না। এ ছাড়া এই বাহন নিরাপদও নয়। সাধারণ রিকশার অবকাঠামো কিছুটা পরিবর্তন করে তৈরি এসব রিকশা বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। এতে প্রায়ই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে।
উল্লেখ্য, ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ চকবাজারের খালে পড়ে মায়ের কোল থেকে ছিটকে নিখোঁজ শিশুটির মরদেহ ১৫ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশায় বাসায় ফেরার পথে নালায় পড়ে মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে শিশুটি। এ সময় রিকশাচালক পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন মা ও দাদিকে উদ্ধার করে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রামে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে কানাডার সহযোগিতা চাইলেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন

চট্টগ্রাম নগরীতে অবৈধ ব্যাটারি রিকশার দৌরাত্ম্য, নিষিদ্ধ ৫০ হাজার অটোরিকশা

আপডেট সময় : 11:33:02 am, Sunday, 20 April 2025

ইসমাইল ইমন চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৫০ হাজার বিদ্যুৎ খেকো গতিদানব ব্যাটারি চালিত রিকশা। এইসব অটোরিকশা নিষিদ্ধ করলেও চট্টগ্রাম মহানগরীর অলিগলি হতে মুল সড়ক জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত এই সব অটোরিকশা। অলিগলি ছেড়ে মূল সড়কে অনেকটা ‘নিয়ন্ত্রণহীন’ চলছে বেপরোয়া এসব যানবাহন।
চট্টগ্রাম ও ঢাকা মহানগরে চলাচলে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অদৃশ্য কোন এক শক্তির বলে এসব গাড়ি দেদারছে চলছে চট্টগ্রাম মহানগরীতে। আর এ চলাচলকে আরও বেগবান করতে কয়েকটি সংগঠন মিলে গড়ে তুলেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অভিযোগ রয়েছে অবৈধ এসব গাড়ি চলতে দেয়া বাবদ নগরীতে প্রতিদিন চাঁদাবাজি হয় কমপক্ষে ৭০ লাখের অধিক টাকা।
এ বিষয়ে সিএমপির উপ–পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক–পশ্চিম) তারেক আহমেদ জানান, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। কাজেই নগরীতে এগুলোর চলাচল সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি। অবৈধ ব্যাটারি রিকশার দৌরাত্ম্য বন্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। এক্ষেত্রে আমাদের নির্দেশনা হলো রাস্তায় এই গাড়ি দেখামাত্রই ধরা, জরিমানা করা। তবে এখানে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। জব্দ গাড়িগুলো রাখার মতো আমাদের পর্যাপ্ত জায়গা (ডাম্পিং প্লেস) নেই। ফলে গাড়ি ধরে জরিমানা করে একদিন পর ছেড়ে দেয়া হয়। যেদিন ধরে সেদিনও ছেড়ে দিতে হচ্ছে। যে কারণে মনে হচ্ছে চালকরা রাস্তায় এই অবৈধ গাড়ি নামানোর সাহস পাচ্ছে।

ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগরে অন্তত ৫০ হাজার ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা রয়েছে। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করছে ট্রাফিক পুলিশ। ৫ আগস্টের আগে জব্দ করা ব্যাটারিচালিত রিকশা ৩ হাজার ৩৫০ টাকা জরিমানা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হতো। এখন জব্দ করলে ২১ দিন পর ৭৫০ টাকা জরিমানা নিয়ে ছাড়া হয়।
সূত্রমতে, কোনো রকম সরকারি অনুমোদন ও রাজস্ব আদায় ছাড়াই চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে। দৈনিক অটোরিকশা প্রতি ১৩০–১৪০ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও আবার এই চাঁদার পরিমাণ ১৭০–১৮০ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাটারিচালিত রিকশায় দুই ধরনের ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর মধ্যে কেউ কেউ ১৩০ ভোল্টের ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারি ব্যবহার করে। আবার কেউ কেউ ২৩০ ভোল্টের ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারি ব্যবহার করে থাকে। এই দুই ধরনের ব্যাটারি চার্জ দিতে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ বিল খরচ হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বাকি টাকা গ্যারেজ মালিকের মুনাফা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, বায়েজিদ, খুলশী, কোতোয়ালী, পাহাড়তলী, হালিশহর, আকবরশাহ থানা এলাকায় সবচেয়ে বেশি চলে ব্যাটারি চালিত রিকশা। এর মধ্যে চান্দগাঁও থানাধীন মৌলভীবাজার থেকে কালুরঘাট ব্রিজ এবং ওয়াসা রোড, পাঠাইন্না গোদা থেকে হামিদচর, ওসমানিয়াপুল থেকে সিএন্ডবি এর আশেপাশের পুরো এলাকা মিলে ১০–১২ হাজার ব্যাটারি রিকশা চলাচল করছে।
বাকলিয়া থানাধীন এক্সেস রোড, চকবাজার ধনিয়ারপুল থেকে সৈয়দ শাহ রোড ও বড় কবরস্থান হয়ে পুলিশ বিট, আব্দুল লতিফ হাট থেকে চেয়ারম্যান ঘাট এবং আন্দরকিল্লা ও টেরিবাজার থেকে কালামিয়া বাজার পর্যন্ত পাঁচ হাজার রিকশা চলাচল করে। চকবাজার এলাকার ডিসি রোড, কে বি আমান আলী রোড, নবাব সিরাজউদ্দৌলা রোড এবং এক্সেস রোডে চলাচল করে কয়েক হাজার ব্যাটারি রিকশা।
খুলশী থানাধীন জালালাবাদ থেকে ওয়্যারলেস হয়ে সেগুনবাগান রেল স্কুল ও মামা–ভাগিনার মাজার পর্যন্ত, বিজিএমইএ ভবনের সামনে থেকে ঝাউতলা বাজার হয়ে আমবাগান রেলগেট ও সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে পলিটেকনিক মোড় পর্যন্ত ৪/৫ হাজার ব্যাটারি রিকশা চলাচল করছে।
বায়েজিদ, খুলশী এলাকা ও পাঁচলাইশের হিলভিউসহ আশেপাশের এলাকায় ব্যাটারি রিকশা চলাচল করে। বায়েজিদ থানাধীন জামশেদ শাহ মাজার রোড, কুলগাঁও আবাসিক এলাকা হতে খাজা রোড, অক্সিজেন মোড় থেকে আতুরার ডিপু, চন্দ্রনগর, আরেফিন নগর, বাংলা বাজার টেক্সটাইল মোড় ও হিলভিউ আবাসিক এলাকা, রৌফাবাদ কলোনি, বাংলাবাজার বশর কোম্পানির গ্যারেজ পর্যন্ত ৩–৪ হাজার ব্যাটারি রিকশা চলছে।

নগরীর হালিশহর বড়পুল ও পাহাড়তলী থানাধীন ফইল্যাতলী বাজার থেকে সবুজবাগ পেট্রোল পাম্পের মুখ, হালিশহর বি–ব্লক শাহজাহান বেকারির সামনে থেকে আশপাশের পুরো এলাকা, শারীরিক শিক্ষা কলেজ থেকে সাগরপাড়, বণিকপাড়া হরি মন্দির, আইয়ুব খানের গ্যারেজ থেকে পাহাড়তলী থানা এলাকার সাগরিকা রোড, বেপারিপাড়া কাসেম কোম্পানির গ্যারেজ হয়ে আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকার ২৯টি সড়ক পর্যন্ত ১৫ হাজারের অধিক ব্যাটারি রিকশা চলাচল করছে।
ডবলমুরিং থানাধীন বিল্লাপাড়া পুলিশ বিট হয়ে ৯নং ব্রিজ ও ভাঙ্গা ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ব্যাটারি রিকশা চলাচল করছে। এছাড়াও ইপিজেড থানাসহ অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সড়কে আরও পাঁচ হাজারের মত ব্যাটারি রিকশা চলাচল করছে বলে জানিয়েছে গ্যারেজ মালিকরা। স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ রিকশার গ্যারেজের নামে অনুমোদন নিয়ে বিদ্যুতের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এই সব ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চার্জিং ষ্টেশন করা হচ্ছে। অনেক অটোরিকশা বেপরোয়া চলে তবে সেগুলোর কোন সুনির্দিষ্ট লাইন পাওয়া যায়নি।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অযান্ত্রিক এসব যানবাহন যাত্রী এবং অন্যান্য গাড়ির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এই গাড়ির যে কাঠামোতে তৈরি, এর সঙ্গে গতি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে রাস্তায় হামেশা দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে মহানগর পুলিশ এসব রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করে। কিন্তু তা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
সুজন নামে আরেকজন চালক বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে ব্যাটারিচালিত রিকশা ‘টো’ করলে ৩ হাজার ৩৫০ টাকা জরিমানা দিলেই ছেড়ে দিত ট্রাফিক পুলিশ। এখন ২১ দিন পর ৭৫০ টাকা জরিমানা দিয়ে আনতে হয়।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব ব্যাটারিচালিত রিকশার কোনো অনুমোদন দেয়নি বিআরটিএ। ফলে এসব অবৈধ যানবাহন।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়। বিদ্যুৎ ঘাটতির সময়ে অবৈধ এই যানবাহন চলতে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত হচ্ছে না। এ ছাড়া এই বাহন নিরাপদও নয়। সাধারণ রিকশার অবকাঠামো কিছুটা পরিবর্তন করে তৈরি এসব রিকশা বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। এতে প্রায়ই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে।
উল্লেখ্য, ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ চকবাজারের খালে পড়ে মায়ের কোল থেকে ছিটকে নিখোঁজ শিশুটির মরদেহ ১৫ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশায় বাসায় ফেরার পথে নালায় পড়ে মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে শিশুটি। এ সময় রিকশাচালক পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন মা ও দাদিকে উদ্ধার করে।