মো.ইমরান হোসেন,
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি।।
গাজীপুরে মহানগরীর দক্ষিণ সালনা এলাকায় বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক কলেজ ছাত্রীকে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে এক মসজিদের ইমামের বিরুদ্ধে। এসময় বাধা দিতে গেলে ওই ছাত্রীর মা ও এক বোনকেও কুপিয়ে আহত করেছে সে। নিহত কলেজ ছাত্রী রাবেয়া আক্তার (২১) মহানগরীর দক্ষিণ সালনা এলাকার মো.আব্দুর রউফের মেয়ে। এ ঘটনায় আহত ওই কলেজ ছাত্রীর মা বিলকিস বেগম ও ছোট বোন খাদিজাকে (১৫) গুরুতর আহতাবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘাতক ইমাম মো.সাইদুল ইসলাম ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানার মহেশতারা গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানাযায়,
গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন দক্ষিণ সালনা এলাকার আবদুর রউফ তার স্ত্রী চার মেয়ে রাবেয়া আক্তার (২১), হাবিবা (১৮), খাদিজা (১৫), জান্নাত (১৩) ও এক ছেলেকে নিয়ে বসবাস করেন। রাবেয়া আক্তারের বাবা কুমিল্লা জেলার হোমনার শ্রীমদ্দি এলাকার আব্দুর রউফ দক্ষিণ সালনা বাজারে প্লাস্টিক শো রুমে চাকরি করেন। তার বড় মেয়ে রাবেয়া আক্তার ২০২০ সালে জয়দেবপুর সরকারী মহিলা কলেজ হতে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। সে স্টুডেন্ট ভিসায় ইউরোপে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভিসাসহ আনুসাঙ্গিক কার্যক্রম প্রসেসিং করতে থাকে। তার ছোট দুই মেয়ে খাদিজা ও জান্নাতকে কোরআন শিক্ষার জন্য স্থানীয় টেকিবাড়ী সাকিনস্থ টেকিবাড়ী জামে মসজিদের ইমাম মো. সাইদুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়। আব্দুর রউফের ছোট দুই মেয়েকে পড়ানোর জন্য বাসায় যাওয়া-আসার সুবাদে তার বড় মেয়ে রাবেয়া আক্তারের দিকে কু-নজর পড়ে মসজিদের ইমাম সাইদুল ইসলামের। কিছুদিন পরে রাবেয়া আক্তারকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় সাইদুল ইসলাম। রাবেয়ার পরিবার সরাসরি ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং তাকে বাসায় এসে পড়ানোর জন্য নিষেধ করে।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাবেয়াকে নানাভাবে উত্যাক্ত করতে থাকে মসজিদের ইমাম সাইদুল ইসলাম। সম্প্রতি লেখাপড়ার পাশাপাশি রাবেয়া স্থানীয় তেলিপাড়া এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি নেয়। ওই প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়ার পথে রাবেয়াকে উত্ত্যক্ত করতে ও প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে সাইদুল। এ ব্যাপারে রাবি আক্তার
তার বাবা-মাকে জানালে তারা সাইদুলকে উত্ত্যক্ত করতে পুনরায় নিষেধ করে। এতে আরও বেশি ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে সাইদুল।
ওসি আরো জানান, সোমবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে সাইদুল ছুরি নিয়ে রাবেয়া আক্তারের বাড়িতে যায়। সে রাবেয়ার কক্ষে ঢুকে তার মাথায়, গলায়, হাতে, পায়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। এসময় আহত রাবেয়ার ডাক-চিৎকারে তার মা বিলকিস বেগম ও ছোট বোন খাদিজা দৌড়ে রাবেয়ার কক্ষে গিয়ে তাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে গেলে তাদেরকেও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায় সাইদুল। পরে আহতদের ডাকচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত সাড়ে আটটার দিকে রবেয়া আক্তারকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত নিহতের মা ও ছোট বোনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়।
মুমূর্ষ অবস্থায় বিলকিস বেগম আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ।
এদিকে ঘটনার পর থেকে ঘাতক ইমাম সাইদুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন। তিনি পার্শ্ববর্তী টেকিবাড়ী জামে মসজিদের ইমামতি করতেন সেই সাথে ছোট ছেলে- মেয়েদের কোরআন শেখাতেন।
এ ব্যাপারে নিহতের পিতা বাদী হয়ে সাইদুল ইসলামকে আসামি করে মঙ্গলবার সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) সদর থানার ওসি জিয়াউল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন । ইতিমধ্যে রাবেয়াকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। আসমিকে ধরতে পুলিশ অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছেন।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮