অরবিন্দ রায়
স্টাফ রিপোর্টার।।
গাজীপুরে থামছেই না পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ। এতে শ্রমিকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সোমবার জিরানি বাজারে অ্যামাজন নিটওয়ার্ক নামে একটি কারখানায় অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। গাজীপুর মহানগরী পানিশালি এলাকায় ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড কারখানা শ্রমিক বিক্ষোভের কারনে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গাজীপুর মহানরীর চক্রবর্তী এলাকায় সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। এ কারণে আশেপাশে প্রায় ২০ টি পোশাক কারখানা ছুটির ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়াও একই এলাকায় বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এতে ঢাকা - টাঙ্গাইল মহা সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। ডরিন ফ্যাশন ও বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি এক পর্যায়ে সংঘর্ষে ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।
গাজীপুরে পোশাক শিল্পের শ্রমিক অসন্তোষ
সুষ্ঠু সমাধান করে স্হায়ী ভাবে বন্ধ করা হোক। দিনের পর দিন গাজীপুরে পোশাক শিল্পের শ্রমিক অসন্তোষ বেড়েই চলছে। এক গার্মেন্টস কারখানার সমাস্যার হলে অন্য গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। পোশাক শিল্পে শ্রমিক বিক্ষোভের কারনে অনেক কারখানা অচল হয়ে পড়ে। গার্মেন্টস কারখানা অচল হয়ে পড়লে মালিক- শ্রমিকদের ক্ষতির পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের বাধার সৃষ্টি করে।
গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও বেতন বৃদ্ধি দাবিতে আন্দোলন বেশি হয় । গার্মেন্টস কারখানায় সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করতে মালিক- শ্রমিক নেতা- ও শ্রমিকদের আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন । কিন্তু গাজীপুর একের পর এক গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ হলে কারখানার মালিকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি শ্রমিক ছাঁটাইয়েট ফলে বেকারত্বের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।
শ্রমিক বিক্ষোভের ফলে ঢাকা -ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আশুলিয়া, চান্দরা, সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা আন্দোলনের গত ১৬ নভেম্বর শনিবার থেকে ১৮ নভেম্বর সোমবার পর্যন্ত বিক্ষোভ করে। মহাসড়কে যানজট বেড়ে গেলে হাজার হাজার জনগণের ভোগান্তি বেড়ে যায় । কোন কোন গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে গার্মেন্টস কারখানা ভাংচুরের ঘটনাও ঘটছে।
গার্মেন্টস শিল্পের সম্প্রসারণের ফলে নারী,পুরুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সমাজের উন্নয়ন হয়েছে। পোশাক শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পোশাক শিল্পে নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ফলে পরিবারের ও সামাজিক ভাবে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। নারীদের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি কারনে সন্তান ও পরিবারের চাহিদা পূরন করতে পারছেন। নারীদের কর্মসংস্থানের কারনে তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি পাশাপাশি সন্তানদের স্কুলে পড়ালেখা করাতে পারছেন। এতে দেশের নিরক্ষতার সংখ্যা কমে সাক্ষরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উওরাঞ্চলের মানুষে এক সময় প্রতিবছর মঙ্গা কষ্ট করতো । গার্মেন্টসের কারখানায় উওরবঙ্গের অনেক মানুষ চাকরি করায় দেশে আর মঙ্গা দেখা যায় না। উত্তরাঞ্চলে এক পরিবার থেকে মা- বাবা, ভাই - বোন সহ সক্ষম বেশিরভাগ মানুষ গাজীপুর, কোনাবাড়ী, চান্দরা, আশুলিয়া সহ বিভিন্ন স্থানে গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করতে আসে।ফলে উওরাঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হয়েছেন।
বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানা বেশিরভাগই গড়ে উঠেছে গাজীপুর ।
গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে টি অ্যান্ড জেড গ্রুপের পাঁচটি কারখানা অ্যান্ড জেড অ্যাপারেলস লিমিটেড, বেসিক ক্লোথিং লিমিটেড, অ্যাপারেলস প্লাস, বেসিক নীটওয়্যার লিমিটেডের দুই হাজারের বেশি শ্রমিকরা ঢাকা - ময়মনসিংহ সড়ক গত ১৬ নভেম্বর শনিবার সকাল থেকে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেছিল ঢাকা -ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রকার সকল যানজট বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ, সেনাবাহিনী সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়ার দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শ্রমিকরা তাদের দাবিকে উপেক্ষা করে। শ্রমিকরা রাতে ও মহাসড়কে অবস্থান করে থাকে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ৫৩ ঘণ্টা পর কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতিতে সড়ক অবরোধ তুলে নেয়া হয় । শ্রমিকদের অবরোধে কারণে স্থবির হয়ে পড়ে গাজীপুরের জনজীবন। ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। হাজার হাজার যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় কারণে সাধারণ মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
অবরোধে অ্যাম্বুলেন্স সহ বিভিন্ন কাঁচামালের পণ্যবাহী আটকা পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এমনকি নির্ধারিত সময়ে বিদেশগামী যাত্রীরা বিমানবন্দরে উপস্থিতি হতে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি- সদর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা- সেনাবাহিনী- থানা পুলিশের কর্মকর্তাদের শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ তুলে নেবার সহযোগিতা- আন্তরিকতা ছিল।
গার্মেন্সস কারখানার আশেপাশের কারখানা তিন দিনে প্রায় ৪৫টি শিল্প কারখানা সাময়িক বন্ধ করে রাখা হয়েছিল বলে জানা যায়। সোমবার তৃতীয় দিন দুপুরে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, আমরা তিন মাস ধরে বেতন পাই না। মালিক পক্ষ বার বার বেতন দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও বেতন দিচ্ছেন না। এতদিন আমরা অপেক্ষা করেছি। । আর অপেক্ষা করতে পারছি না। আমরা বাসা ভাড়া দিতে পারছি না। বাজার করে খাবার টাকা নেই, আমাদের পিট দেওয়ালে ঠেকে যাবার কারনে অবরোধ করতে বাধ্য হয়েছি।
পোশাক শিল্পের ভবিষ্যত নিয়ে সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে শন্কা দেখা দিয়েছে। পোশাক শিল্পের অস্হিশীল পরিস্থিতির কারনে বিদেশিরা মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। পোশাক শিল্পের কোন সমস্যা দেখা দিলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান করা প্রয়োজন। অবহেলার কারণে পোশাক শিল্পের বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পকে বাঁচাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পোশাক শিল্পের মালিক, শ্রমিক নেতা, সাধারণ শ্রমিক, স্হানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল। গাজীপুরে পোশাক শিল্পে একের পর এক শ্রমিক বিক্ষোভ চলছে। স্হায়ী ভাবে বন্ধ হচ্ছে না শ্রমিক বিক্ষোভ।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮