তৌহিদ বেলাল।।
কক্সবাজার জেলার পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টি, জোয়ারের পানি ও প্রবল পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজার সদর উপজেলা, ঈদগাঁও, চকরিয়া, পেকুয়া, রামু ও মহেশখালী উপজেলার নিম্নাঞ্চল ব্যাপক প্লাবিত হয়েছে। এতে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ফলে এলাকাসমুহের বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে, অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছেন।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানান, সোমবার রাত ৯ টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ১৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই বৃষ্টিপাত আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার প্রধান নদী বাঁকখালি, মাতামুহুরি ও ঈদগাঁওর ফুলেশ্বরীসহ ছোট বড় প্রায় সব নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। গত ৩ দিনের অবিরাম বর্ষণ ও পার্বত্য অববাহিকার মাতামুহুরি, বাকঁখালি ও ফুলেশ্বরী নদীর পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট এ বন্যায় পাঁচ লক্ষাধিক লোকের ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এর ফলে এলাকাসমুহের লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নদীর পানিতে তলিয়ে গিয়ে ও ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে এপর্যন্ত দুই শিশুসহ ৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এদের মধ্যে চকরিয়া উপজেলার বরইতলি এলাকায় দেয়াল চাপা পড়ে তিনজন, মাতামুহুরি নদীতে ডুবে এক যুবক রয়েছে।
অন্যদিকে সোমবার বিকেলে উখিয়া উপজেলার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে মা-মেয়ে মারা গেছেন। এরা হলেন, ওই ক্যাম্পের আনোয়ারের স্ত্রী জান্নাত আরা ও তাদের দুই বছরের মেয়ে মাহিমা আক্তার।
সোমবার সন্ধ্যায় মাতামুহুরী নদীর পানি চিরিংগা পয়েন্টে বিপদসীমার প্রায় ৪ ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে জানা গেছে।
অপরদিকে, সোমবার সকাল ৯টার দিকে মাতামুহুরী নদীর লক্ষ্যারচর হাজিপাড়া পয়েন্টে লাকড়ি ধরতে নদীতে ঝাঁপ দেয় শাহ আলম। এসময় লাকড়ি ধরে কূলে ফেরার সময় পানির তীব্র স্রোতে তিনি তলিয়ে যান। শাহ আলম ওই এলাকার জাকের হোসাইনের পুত্র। ঘটনার প্রায় দুই ঘণ্টা পর তার মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয় লোকজন।
এছাড়া চকরিয়া উপজেলার বরইতলি ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পূর্ব ভিলিজারপাড়ায় মাটির ঘরের দেয়াল ধসে একই পরিবারের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো- আনোয়ার হোসেনের দুই শিশু মোহাম্মদ সাবিত (৫) ও তাবাচ্ছুম (১)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ছালেকুজ্জামান।
চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালি, বরইতলি, কৈয়ারবিল, পূর্ব বড় ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা, সাহারবিল, কোনাখালি, চিরিংগা, কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, লক্ষ্যারচর, বদরখালী, হারবাং, ঢেমুশিয়া, বিএমচরসহ ১৮ টি ইউনিয়ন ও চকরিয়া পৌরসভা এলাকার শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। বদরখালি, পশ্চিম বড় ভেওলা ও ঢেমুশিয়া এলাকায় স্লুইসগেট বন্ধ করে মাছ চাষ করায় জলাবদ্ধতায় শতকরা ৮০ ভাগ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে চকরিয়ার হারবাং, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, কৈয়ারবিল ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের কারণে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব এলাকায় সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পাহাড়ের ঢালে অবৈধভাবে বসবাসকারী লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা মো. জামিল মোরশেদ জানান, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পানির তোড়ে কোনাখালীর কন্যারকুম এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে বানের পানি দেদারছে লোকালয়ে প্রবেশ করছে ।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অনেক ইউনিয়নে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার-১ আসনের এমপি ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম বলেন, ‘পানিবন্দী মানুষগুলো যাতে খাবারের সঙ্কটে না পড়েন সেজন্য জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীকে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান জানান, ভারি বর্ষণের ফলে সৃষ্ট বন্যায় জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এতে ওইসব এলাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এই ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিম্নাঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনদের আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানের জন্য বলা হচ্ছে। সেখানে তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার মজুদ রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন ডিসি।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮