
মোঃ আসিফুজ্জামান আসিফ,
একটি দেশ বা সমাজের উন্নতি নির্ভর করে সেই দেশের সুশাসন, সঠিক তথ্যপ্রবাহ এবং জনগণের সচেতনতার ওপর। এই তিনটির পেছনে যে শক্তিটি নীরবে কাজ করে, তা হলো সাংবাদিকতা। আর এই সাংবাদিকতার প্রাণ হচ্ছে একজন আদর্শ সাংবাদিক। তিনি শুধু খবর সংগ্রহ করেন না, বরং জাতিকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। গণমাধ্যমের এই নির্ভীক সৈনিক দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
আদর্শ সাংবাদিক/সংবাদকর্মী বলতে আমরা বুঝি সেই ব্যক্তিকে যিনি সততা, নিরপেক্ষতা ও পেশাগত নীতির সঙ্গে সাংবাদিকতা পেশাকে এগিয়ে নিয়ে যান। তিনি কখনো মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেন না, কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন না এবং সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা বজায় রাখেন। একজন আদর্শ সাংবাদিকের কলম হয়ে ওঠে সমাজের দর্পণ, অসত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহসী অস্ত্র।
একজন আদর্শ সাংবাদিক/সংবাদকর্মী দেশের জনগণের কাছে সত্য ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পৌঁছে দেন। বর্তমান ডিজিটাল যুগে যেখানে গুজব ও মিথ্যা খবর মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে পড়ে, সেখানে একজন দায়িত্বশীল সাংবাদিক সত্য যাচাই করে খবর পরিবেশন করেন। এতে গুজব রোধ হয়, সমাজে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, কোনো দুর্যোগের সময় যদি মিথ্যা তথ্য প্রচারিত হয়, তবে তা জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু একজন আদর্শ সাংবাদিক সত্যতা যাচাই করে এমন তথ্য পরিবেশন করেন যা মানুষকে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করে।
দেশে যত ধরনের দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপশাসন রয়েছে—তার বিরুদ্ধেই কলম চালান একজন আদর্শ সাংবাদিক। তিনি প্রশাসনের ভুল নীতিমালা, রাজনীতিকদের কুকর্ম, সমাজের অনৈতিকতা ও দুর্বৃত্তায়নের চিত্র তুলে ধরেন। এতে করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয় এবং জনগণও সচেতন হয়।
বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, অনেক সাংবাদিক তাঁদের জীবন বাজি রেখে দুর্নীতির খবর তুলে ধরেছেন। অনেকেই নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, আবার কেউ কেউ শহীদও হয়েছেন। তবে আদর্শ সাংবাদিকরা কখনো ভয় পান না, কারণ তাদের লক্ষ্য দেশ ও জনগণের কল্যাণ।
গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সাংবাদিকতা রাষ্ট্রব্যবস্থায় অপরিহার্য একটি অঙ্গ। একজন আদর্শ সাংবাদিক সরকারের কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করেন, বিরোধী দল ও সাধারণ জনগণের বক্তব্য তুলে ধরেন এবং একটি ভারসাম্যপূর্ণ সংবাদ পরিবেশন করেন। এতে করে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে ওঠে এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।
একজন আদর্শ সাংবাদিক সমাজের অবহেলিত, নির্যাতিত, বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বর হন। তিনি শিশু শ্রম, নারী নির্যাতন, শিক্ষা বঞ্চনা, স্বাস্থ্য সমস্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তুলে ধরে রাষ্ট্রকে সক্রিয় করতে ভূমিকা রাখেন। তাঁর রিপোর্টগুলো মানুষকে ভাবতে শেখায়, প্রশ্ন করতে শেখায় এবং অধিকারের কথা বলতে শেখায়।
উদাহরণস্বরূপ, কোনো অঞ্চলে শিশুদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা দেখা দিলে সাংবাদিক সেই বিষয়ের ওপর রিপোর্ট তৈরি করে জনমত তৈরি করতে পারেন, যার ফলে সরকারিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
সাংবাদিকতা শুধু সমস্যা তুলে ধরেই থেমে থাকে না; একজন আদর্শ সাংবাদিক সমাজের ইতিবাচক দিকগুলোও তুলে ধরেন। তিনি সমাজে ভালো কাজ করা মানুষদের গল্প বলেন, সাফল্য তুলে ধরেন, উদ্ভাবনী চিন্তাকে প্রচার করেন। এতে করে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হয় এবং একটি আশাবাদী সমাজ গড়ে ওঠে।