প্রিন্ট এর তারিখঃ জুলাই ১, ২০২৫, ৬:৩১ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ৩০, ২০২৫, ৩:০৮ পি.এম
ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতিকে ইউপি চেয়ারম্যান চাঁ’দা না দেওয়ায় প’রিষ’দে আ’টদিন ধ’রে তা’লাব’দ্ধ, সেবা থেকে ব’ঞ্চিত হাজারো মানুষ

মো. নাঈম হাসান ঈমন,
ঝালকাঠি প্রতিনিধি: চেয়ারম্যানের কাছে দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদে তালা ঝুলিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। ফলে গত আট দিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দপদপিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নাজমুল আহসান নান্টু মল্লিক চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বাবুল মৃধার কাছে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। দাবি না মানায় ২২ জুন দলবল নিয়ে এলাকায় অস্ত্রশস্ত্রের মহড়া দেন এবং পরদিন ২৩ জুন ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। চাঁদা না দিলে ‘মব সৃষ্টি করে’ চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বাবুল মৃধার প্রাণনাশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকেই আত্মগোপনে থাকছেন চেয়ারম্যান। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন এমনকি বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। চেয়ারম্যানের অভিযোগ, প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে তাকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।
ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতিসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বাবুল মৃধা বলেন, “২০ জুন তারা আমার কাছে দশ লাখ টাকা দাবি করেন। প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেছে চাঁদা না দিলে রাস্তাঘাটে আমাকে পেলে মেরে ফেলবে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেবে। তারা দলবল নিয়ে ২২ জুন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন এবং ২৩ জুন ইউনিয়ন পরিষদে তালা ঝুলিয়ে দেন। এই কাজে স্থানীয়রা আপত্তি জানালে তাদেরকেও দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।” অভিযোগে আরও উল্লেখ, তালা ঝুলানোর কাজে নাজমুল আহসান নান্টু মল্লিকের সঙ্গে ছিলেন তার ভাই ইকবাল মল্লিক, রিপমন মল্লিক, উজ্জল মল্লিক ও জসিম হাওলাদার।
স্থানীয় বাসিন্দা সালেহা বেগম বলেন, “চেয়ারম্যান বাবুল মৃধা দলমত নির্বিশেষে কাজ করেছে। তার কাছে কিছু চেয়ে পায়নি এমন কেউ নেই। কিন্তু এখন কিছু লোক তার বিরুদ্ধে কি জন্য এমন করছে তা জানি না। তবে ইউনিয়ন পরিষদ বন্ধ থাকায়, চেয়ারম্যান না থাকায় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ হচ্ছে।”
৩নং ওয়ার্ড মেম্বার হারুন খন্দকার জানান, ইউনিয়ন পরিষদ তালাবদ্ধ থাকায় জনসাধারণের সেবা কার্যত বন্ধ রয়েছে। “কি কারণে তালা দেওয়া হয়েছে তা জানি না। তবে এ নিয়ে কথা বলাও এখন ঝুঁকিপূর্ণ।” সংরক্ষিত (১,২,৩) ওয়ার্ড মেম্বার আয়শা আক্তার রিনা বলেন, আমি জেনেছি বিএনপির নেতাকর্মীরাই পরিষদে তালা ঝুলিয়েছে, এতে জনগণের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে।
অভিযুক্ত ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নাজমুল আহসান নান্টু মল্লিক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “কোনো চাঁদা চাইনি। “ইউনিয়নের পাবলিক অবরুদ্ধ করে রেখেছে। বিনা ভোটের চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর, সারা বাংলায় একজনও নেই, উনি থাকবে কিসের জন্য?” চেয়ারম্যানের কাছে চাঁদা দাবীর প্রশ্নে তিনি বলেন, “কোয়াইট ইম্পসিবল। আমার এলাকায় এসে জিজ্ঞেস করেন, প্রশাসনের কাছে জিজ্ঞেস করেন, নট এ সিঙ্গেল পাই- উনাকেই নয় ৫ আগস্টের পরে কোনো ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে একটি টাকার বিষয়েও অভিযোগ আনতে পারবে না।”
নলছিটি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিসুর রহমান হেলাল খান বলেন, “কিছু ফ্যাসিস্ট তাড়াতে কিছু ত্যাগ করতে হয়। দপদপিয়া ইউনিয়নের বিষয়টি প্রশাসনিক ব্যাপার, এটি প্রশাসন দ্রুত সমাধান করবে বলে আশা করি।”
নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, “আমি লিখিতভাবে কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে মৌখিকভাবে খবর পেয়েছি কিছু লোক ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়টি তালাবদ্ধ করে রেখেছে। সেবা প্রত্যাশী বা অন্য কারো লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বাবুল মৃধার দেওয়া অভিযোগ দপ্তরটি গ্রহণ করেছে।
উল্লেখ্য, দপদপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে অপসারণ এবং গ্রেপ্তারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে ২৩ জুন সকালে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের জিরো পয়েন্ট এলাকায় কর্মসূচি পালন করে বিএনপির নেতারা। এরপর পরই তারা ইউনিয়ন কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বাবুল মৃধা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ইউনিয়নের সভাপতি।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, কোড নাম্বারঃ ৯২