স্টাফ রিপোর্টার, নাদিম সরকার
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, আমরা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি তখন প্রধান উপদেষ্টার আমাদের উপর নির্দেশ ছিল আহতদের ব্যাপারে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দেয়া। সেটা আমরা পালন করার চেষ্টা করেছি এবং করে যাচ্ছি। ইতিপূর্বে আপনারা দেখেছেন পাঁচটা দেশ থেকে চিকিৎসকরা এসেছেন আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য । আমাদের চেষ্টা ছিল যে ছেলেগুলো হাত,পা, চোখ হারিয়েছে তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবাটা দেয়া। আপনাদের নিশ্চয়ই জানা আছে যে সময়ে আমরা দায়িত্বটা গ্রহণ করি তখন টাকশালে কোন ডলার ছিল না। উপরন্তু আমাদের উপর ছিল লোনের বোঝা। কিন্তু আমরা কখনওই আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে কার্পণ্য করি নি। আমরা ইতোমধ্যে ৩০ জন আহতকে ব্যাংকক এবং সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছি। আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত বলবো না, শুধু এতটুকুই বলবো ৩০ জনের ভেতর মুসা নামের আহতের জন্য আমাদের ইতোমধ্যে ৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। আর কবে নাগাদ তার রিকভারি হবে সেটা আমরা জানি না। তবে মার্চ তার আরেকটা অপারেশন হবে। হাসান নামের একজনের ব্রেইন ইনজুরি ছিল তার জন্য ইতোমধ্যে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৩৬ লাখের বেশি খরচ হয়েছে। সে এখনও কোমায় আছে। কবে নাগাদ সুস্থ হবে তাও বলা যাচ্ছে না। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্বাধীনতার এত বছর পরেও বাংলাদেশে এখনো একটা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নেই। আমাদেরকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনতে হয়েছে ব্যাংকক থেকে, সিঙ্গাপুর থেকে। কখনো কখনো আমাদের ব্যাংকক থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনতে হয়েছে। প্রতিবারে ষাট লাখ টাকারও অর্থ ব্যয় হয়েছে। কিন্তু আমরা কখনো অর্থের কথা চিন্তা করিনি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে যেভাবে হোক আমাদের সন্তানগুলোকে সুস্থ করে তোলা।
আজ ০২ ফেব্রুয়ারি রোববার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিকাল পাঁচটায় অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন।
মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল সহযোগী অধ্যাপক ডোনাল্ড ইউ বলেন, আমরা ২৭৮ জনের মত আহত রোগী দেখেছি এবং বলতে হচ্ছে আমার চিকিৎসা জীবনের সবচেয়ে অন্যরকম অভিজ্ঞতা। এত বেশি চোখের ইনজুরি আমরা আমাদের চিকিৎসা জীবনেও কোনোদিন দেখিনি।এবং এটি আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। কিছু কিছু রোগীর বয়স নয় থেকে ১০ বছর। অনেকের চোখে বন্দুকের প্যালেটের কারণে মারাত্মকভাবে আঘাত পেয়েছেন। এছাড়া আহত রোগীদের ক্রিটিক্যাল ফেইজে বাংলাদেশের চিকিৎসকগণ সার্ভিস যে চিকিৎসা দিয়েছে সেটাকে আমি মিরাকল বলবো। অনেক ক্ষেত্রেই যারা চোখে আঘাত পেয়েছেন তারা সাহায্যের বাইরে। কিন্তু কিছু রোগী আমরা শনাক্ত করেছি যাদের সিঙ্গাপুরে নিয়ে গেলে উন্নতি করা সম্ভব। আমরা সাত, আটজন রোগীকে শনাক্ত করেছি তাদের চিকিৎসা সিঙ্গাপুরে হলে তাদের চোখের অবস্থার আরও উন্নতি করা সম্ভব। কিছু কিছু আহত আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে যেটা আমার জন্য সত্যিই হৃদয়বিদারক। আমি বাংলাদেশ সরকারকে কে অনুরোধ করবো যাতে তাদের জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ সাইকোলজিক্যাল চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে অনেকেরই এ বাস্তবতাটা মেনে নিতে হবে যে কেউ কেউ এক বা দুই চোখ সম্পূর্ণভাবে হারিয়েছেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, আজ আমরা প্রায় দুই মাস পর আমরা প্রিন্ট এবং ইলেকট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ ভাইদের সাথে কথা বলার জন্য মিলিত হয়েছি। আহত যোদ্ধাদের সুচিকিৎসা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব মনে করে আমরা কখনো মিডিয়ার সামনে নিয়মিত বা বিরতি দিয়ে আসি নি। আজকে আমরা দুই মাস পর মিডিয়ার সামনে এসেছি এ কারণে যে আপনাদের মাধ্যমে আমরা স্পষ্ট করতে চাই যে, আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যাপারে আমাদের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই। আহত যোদ্ধাদের কষ্টের কথা যেভাবে সিঙ্গাপুরের ডাক্তার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডাক্তার অনুভব করেছেন, আমরা স্বাধীন ও মুক্তদেশের নাগরিক হিসেবে আহত যোদ্ধাদের প্রতি আরো অনেক বেশি ঋণগ্রস্ত, অনেক বেশি কৃতজ্ঞ। তাদের এই সম্মানের বিষয়ে সতর্ক ছিলাম এবং আছি বিধায় এ বিষয়ে আমরা খোলাখুলি আলোচনা করিনি। আহতদের যথাযথ চিকিৎসা করাটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব মনে করে আমরা যথাসাধ্য আমাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। এছাড়া আহত যোদ্ধাদের যে সকল বিষয় নিয়ে মনোবেদনা এবং ক্ষোভ তৈরি হয়েছে সেই বিষয়গুলোতে আমরা মনোযোগ দিয়েছি এবং দিচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আহত যুদ্ধের পক্ষ থেকে যে বিষয়গুলো উত্থাপিত হয়েছে হয়েছে সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুইটা জিনিস করণীয় আছে। প্রথমে যে বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে সেটি হচ্ছে আহত যোদ্ধাদের ক্যাটাগরাইজ করা নিয়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে এ বি সি ডি নামে চারটা ক্যাটাগরি করা হয়েছে। এ ক্যাটাগরি নিয়ে আহত যোদ্ধাদের ভেতর যাদের আপত্তি আছে আমরা বলতে চাই তারা চাইলে সেটা নিয়ে রিভিউ করতে পারে এবং সেটা করা সম্ভব। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলতে চাই এটা আমরা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে তৈরি করেছি। আহত যোদ্ধাদের সেটা নিয়ে কোন আপত্তি থাকলে তারা রিভিউ করতে পারে এবং আমরা আমাদের এক্সপার্ট টিম দিয়ে সেটা বিবেচনা করব।
এছাড়া আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করার বিষয়ে বলতে চাই আপনারা ইতিমধ্যে বিদেশি ডাক্তারসহ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং জরুরি রেসপন্স সেবা সম্বন্ধে আপনারা সবার মতামত শুনেছেন। আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়েছি এবং দিচ্ছি। বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যাপারে অনেকের ভেতর কষ্ট আছে এবং কষ্ট থাকতে পারে। আমরা সেগুলোর উপর শ্রদ্ধাশীল। বিদেশে গমন এবং উচ্চতর চিকিৎসার ব্যাপারে যে সকল আবেদন থাকবে সেগুলো আমরা আমাদের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নিব। আজকে এখানে উপস্থিত সিঙ্গাপুরের ডাক্তার বলেছেন ইতিমধ্যে তারা সাত আট জনকে সিঙ্গাপুরে রেকমেন্ড করেছেন চিকিৎসা নেওয়ার ব্যাপারে। উনাদের সুপারিশের আলোকে আমরা তাঁদের চিকিৎসার ব্যাপারে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিব।
আহতদের ফিজিওথেরাপির ব্যাপারে তিনি আরো বলেন আমরা আহত যোদ্ধাদের ফিজিওথেরাপির ক্যাপাসিটি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছি। আমরা চায়না থেকে রোবোটিক ফিজিওথেরাপির যন্ত্রপাতি আনছি। তবে আশা করছি তবে সেটা বেশি মানুষের প্রয়োজন হবে না।
তিনি আরো বলেন, আহতদের বাকি যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে সেগুলো আসলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত নয়। আমরা দায়িত্ব এড়াচ্ছি না। আহত যোদ্ধাদের পুনর্বাসনসহ সবক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় পরবর্তীতে এ সকল পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত থাকবেন তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে আহতদের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত চিকিৎসবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮