মামুন মিঞা
ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি।
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর একটি সেতু না থাকায় চরাঞ্চলের চারটি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে চলছে জীবন।
প্রতিদিন নৌকা কিংবা ট্রলারে করে ঝুঁকি নিয়ে খরস্রোতা নদ পাড়ি দিচ্ছেন ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, নারী-পুরুষসহ হাজারো মানুষ। সন্ধ্যার পর পারাপারের কোনো নৌকা-ট্রলার না থাকায় সকাল পর্যন্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকেন বাসিন্দারা।
ফলে এ সময় জরুরি রোগীরা পড়েন মহাবিপাকে। অথচ নদের ওপর একটি সেতু হলে ঘুচে যাবে দীর্ঘদিনের এ ভোগান্তি। কিন্তু কবে হবে বহুল কাঙ্খিত স্বপ্নের সেতু,তা জানেন না এলাকাবাসী।
সদরপুর উপজেলার স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, সদরপুর উপজেলা চরমানাইর ও চরনাসিরপুর ইউনিয়ন, ভাঙ্গা উপজেলার নাসিরাবাদ ইউনিয়ন ও মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার সন্যাসীর চর ইউনিয়ন থেকে দরগাবাজার ঘাট হয়ে ভাঙ্গা ও সদরপুর উপজেলা সহ নানান জায়গায় যেতে পাড়ি দিতে হয় আড়িয়াল খাঁ নদ।
চরের হাজারো মানুষ ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে স্হানীয় প্রশাসনের কাছে সেতু নির্মানের দাবি জানিয়েও কোনো কাজ হয় নি।
এখানে সেতু নির্মান হলে অতিরিক্ত ট্রলার ভাড়া না গুনেই সহজেই স্কুল-কলেজে যেতে পারবে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি এই অঞ্চলের উৎপাদিত কৃষিপন্য বাজারজাত করতে ভোগান্তিতে পড়তে হবে না কৃষকদের।
এই অঞ্চলে সেতু না থাকার ফলে স্বাস্থ্য সেবা, আইনি সেবা, ফায়ার সার্ভিস সেবাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার মানুষ। এই ইউনিয়ন গুলো নদীর কারনে উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এখানে প্রতিঃনিয়ত বাড়ছে মাদক, জুয়া, চুরি ডাকাতিসহ অনেক অনৈতিক কর্মকান্ড।
দরগাবাজার ঘাটে সেতু হলেই সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলার সাথে সরাসরি সড়ক পথে যুক্ত হতে পারবে এই চরাঞ্চলটি। শুধু তাই নয় এই অঞ্চলের সড়ক ব্যবহার করে সদরপুর ও ভাঙ্গার অনেক যাত্রী পদ্মাসেতু হয়ে কম সময়ে ঢাকা যাতায়াত করতে পারবে।
সদরপুর উপজেলার চরমানাইর ইউনিয়নের ভ্যান চালক সালাউদ্দিন মুন্সি বলেন, এখানে সেতু হলে আমাদের রাস্তাঘাটও উন্নত হবে। আমরা চলাফেরা করে অনেক শান্তি পাবো। এলাকায় ফায়ারসার্ভিসের গাড়ি, পুলিশের গাড়ি, এম্বুলেন্সসহ যেকোন গাড়ি সহজে প্রবেশ করতে পারবে।
চর নাসিরপুর ইউনিয়নের কৃষক বারেক মৃধা বলেন, আমরা আমাদের উৎপাদিত কৃষি পন্য সময় মতো বাজারে নিতে পারিনা। অনেক টাকা ট্রলার ভাড়া ও ভ্যান ভাড়া দিয়ে বাজারে নিতে হয়। এতে করে আমরা আমাদের পন্যের যে দাম পাই তাতে আমাদের পোশায় না। একটা সেতু হলে কতো সহজে আমরা বাজারে যেতে পারতাম।
ভাঙ্গা উপজেলার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের আছিরন নেছা বলেন,"একবার গভীর রাতের আমার এক ভাবীর প্রসব বেদনা উঠেছিলো। সেই রাতে ঘাটে গিয়ে ট্রলার পাইনি। কতো কষ্ট করেছি সেই রাতে। পরে ভোরবেলা ট্রলার চালক কে খবর দিয়ে এনে তাকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে"। ভাগ্য ভালো সে ভাবি বা তার সন্তান মারা যায়নি।
মাদারীপুর শিবচর উপজেলার সন্যাসীর চর ইউনিয়নের বাসিন্দা আকিদুল হক বলেন, আমরা এই ঘাট দিয়ে ভাঙ্গা ও সদরপুরে নানান কাজে যাই। একটু রাত হলেই ট্রলার পাইনা। এমনও হয়েছে রাতে ট্রলার না পেয়ে আশেপাশের কোন বাড়িতে মিনতি করে রাত থাকতে হয়েছে। এই এলাকায় সেতু না থাকায় পুলিশ আসতে পারে না। তাই এই এলাকায় চুরি, ডাকাতি ও মাদক অনেক বেড়ে গিয়েছে।
সেতু নিয়ে কথা বলেন দুই স্কুল শিক্ষার্থী হাসিবুল ও রুনা। তারা বলেন,"পরিক্ষার সময় ট্রলার মিস হয়ে যাওয়ায় আমরা সময় মতো পরিক্ষা দিতে পারি না। একটু বৃষ্টি হলেই ঘাটে ট্রলার না থাকায় স্কুলেও যেতে পারি না। এতে করে লেখাপড়ায় আমরা পিছিয়ে পড়ছি"।
ভাঙ্গা উপজেলার নাসিরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর খান বলেন,"এখানে সেতুর অভাবে যারা অসুস্থ রোগী তারা ঠিক ভাবে তাদের চিকিৎসা সেবাটা পায় না। আমি মনে করে আমাদের এই সদরপুর থানার দুইটি ইউনিয়ন চর নাসিরপুর ও চর মানাইরসহ ভাঙ্গা থানায় আমার নির্বাচনীয় এলাকা নাসিরাবাদের কিছু অংশ মিলে সকলের প্রানের দাবি এই সেতুটা। দরগাবাজারে এই সেতুটা হলে জনগন কে দূর্ভোগ পোহাতে হবে না। আমার পক্ষ থেকে জোড়ালো দাবি যাতে কর্তৃপক্ষ এই দিকে একটু নজর দিয়ে জনগণের কষ্ট লাঘব করতে সক্ষম হয়।
এ বিষয়ে সদরপুর উপজেলা প্রকৌলশী মো: আব্দুল মমিন বলেন," আমাদের পরিকল্পনা আছে- যদি আমাদের কোন প্রকল্প বা ডিপিপির মাধ্যমে এটা অনুমোদিত হয় তবে আগামীতে এই সেতুটা আমরা এলজিইডির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার সদাসর্বদা চেষ্টা করবো। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে উর্ধ্বতনদের সাথে আলোচনা করেছি। আশা করছি শীঘ্রই ভালো কোন সংবাদ জনসাধারণ পাবে"।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮