'আগামী মাসে (মে ২০২৫) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য পুরস্কার হিসেবে ১(এক) লাখ টাকা প্রাইজমানী দেওয়া হবে। ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে ৫৪ লাখ টাকা প্রাইজমানী দেওয়া হবে এই ফুটবল টুর্নামেন্টে। এরপর আমরা ওয়ার্ড ভিত্তিক ক্রিকেট খেলার আয়োজন করবো। প্রতি বছর ৪টা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হবে। নারীদের জন্যও আলাদা টুর্নামেন্ট হবে। নারীদের জন্য এই শহরে পাবলিক স্পেসের অনেক সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এসব আয়োজনের মাধ্যমে বিনোদন ও যুব উন্নয়নের পাশাপাশি কালচারাল ফ্যাসিজমের যে ভয় আছে সেটিকে মোকাবিলা করা হবে। কালচারাল ফ্যাসিজম কিন্ত খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই মোকাবিলা করতে হবে। আমরা সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি ন্যায্য ঢাকা গড়তে পারবো।'
শনিবার (১৯ এপ্রিল ২০২৫) সকালে রাজধানীর বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি মাঠে ডিএনসিসি এবং বনানী স্পোর্টস এরেনা কর্তৃক আয়োজিত 'ক্রিকেট কার্নিভাল-২০২৫' এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ এসব কথা বলেন।
বক্তৃতায় তিনি বলেন, 'এই মাঠটি (বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি মাঠ) একসময় শেখ পরিবারের দখলে ছিল। এটিকে আমরা অবমুক্ত করেছি। আপনারা এখন দেখবেন মাঠের বাহিরে (প্রবেশ মুখে) একটি সাইনবোর্ড লাগিয়েছি সেটিতে লেখা আছে বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি মাঠ। ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশটাই আসলে দখল হয়ে গিয়েছিল। মেটাফোরিক্যালি (রূপকার্থে) এটা অন্য দেশের দখলে ছিল আর প্র্যাক্টিক্যালি (বাস্তবে) এটা তাদের দোসরদের দখলে ছিল। শেখ পরিবার দেশের ন্যাচারাল রিসোর্চ দখল করার পাশাপাশি গত সতেরো বছরে পাবলিক স্পেসগুলোও দখল করেছিল। পাবলিক স্পেস যেখানে মানুষ খেলাধুলা করবে, হাটবে সেগুলোও তারা নাতিপুতিদের নামে দখল করেছে। সাধারণ মানুষের কোন প্রবেশ ছিল না।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে ঘোষণা দিয়েছি ডিএনসিসির আওতাধীন মাঠগুলো কোন ক্লাবের আন্ডারে থাকবে না। ক্লাবের আন্ডারে থাকায় সাধারণ মানুষের এক্সেস (প্রবেশাধিকার) বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পাবলিক স্পেসে মানুষের আসা যাওয়া, শিশুদের খেলাধুলা এগুলো অধিকার। সাধারণ মানুষের অধিকার বঞ্চিত করে কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণির জন্য মাঠ বরাদ্দ থাকলে সামাজিক বৈষম্য হয়, অবিচার হয়। তাই এটি আর করতে দেওয়া হবে না।'
এসময় তিনি উল্লেখ করেন, 'বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি মাঠসহ ডিএনসিসির অনেকগুলো মাঠে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য কেয়ার কিভিং সার্ভিস ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের বিনোদন ও বিকাশের জন্য এই মাঠে বিভিন্ন ব্যবস্থা আছে। এই মডেল অনুযায়ী অন্যান্য মাঠেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এগুলো দেখভালের জন্য স্থানীয় অধিবাসীদের নিয়ে কমিটি করে দেওয়া হবে।'
ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, 'আমি দায়িত্ব নিয়েছি দুই মাস হলো। গত দুই মাসে আমরা কয়েকটি মাঠ উদ্দ্বার করেছি। গত সপ্তাহে মিরপুর প্যারিস রোড মাঠের অবৈধ মেলা আমরা গুড়িয়ে দিয়েছি। এর আগে মিরপুর বাউনিয়ায় ১২ বিঘা একটি মাঠ উদ্ধার করেছি। সেখানে বড়দের জন্য একটি অলিম্পিক সাইজের ফুটবল মাঠের পাশাপাশি শিশুদের জন্যও আলাদা খেলার মাঠ থাকবে। যেসব মাঠ বড় সেখানে আমরা মায়েদের ক্লাব করে দিব যেন তাদের শিশুদের খেলা নিশ্চিত করতে পারে। সিনিয়র সিটিজেনদেরও আমরা মাঠের ব্যবস্থাপনায় যুক্ত করবো। এধরনের মডেল তৈরি করতে আমরা কাজ করছি।'
প্রশাসক বলেন, 'ডিএনসিসি এলাকায় বর্তমানে ২৫টি মাঠের রয়েছে। তবে ড্যাপের নকশা অনুযায়ী শুধু ডিএনসিসি এলাকায় মাঠ ও পার্কের জন্য সাড়ে ৫'শ একর জায়গা রয়েছে। এগুলো সব দখল হয়ে যাচ্ছে। আমরা রাজউকের সাথে এগুলো উদ্ধারে কাজ করছি। এই সাড়ে ৫'শ একর জমির খাজনা খারিজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমরা সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে ঢাকার পাবলিক স্পেসগুলো উদ্ধার করা হবে।'
বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ শিশু-কিশোরদের উৎসাহিত করতে নিজে ব্যাটিং করে 'ক্রিকেট কার্নিভাল-২০২৫' এর শুভ উদ্বোধন করেন। এসময় বিপরীতে বোলিং করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা ক্রিকেটার মোহাম্মদ রফিক। এরপর ডিএনসিসি প্রশাসক অন্যান্য অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যে ছবি আকা হয়েছে সেগুলোর প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের সঙ্গে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি (বিসিবি) ফারুক আহমেদ, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক তারকা ক্রিকেটার মোহাম্মদ রফিক, হাবিবুল বাশার সুমন, জাবেদ ওমর বেলিম ও শাহরিয়ার নাফীস প্রমুখ।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোল্লা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। মোবাইলঃ ০১৯১৮-৪০৪৭৬০, বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৩৩-৩৬১১৪৮