
মোঃ সৌরভ হোসাইন (সবুজ)
স্টাফ রিপোর্টার সিরাজগঞ্জ।।
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের গাড়াদহ দক্ষিনপাড়া গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৪ টি ঘরের মধ্যে ৭ টি ঘর ইতিমধ্যে বিক্রি হয়েছে । সম্প্রতি ঘরগুলো সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ করেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।এর পরেই সুবিধাভোগীরা ঘর বিক্রি করে চলে যায় । বর্তমানে ঘর গুলোতে কিনে নিয়ে অন্যরা বসবাস করছেন ।
শাহজাদপুর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের গাড়াদহ দক্ষিনপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৪টি ঘর নির্মাণ করা হয় । একটি ঘর নির্মাণে সরকার বরাদ্দ ছিলো এক লাখ ৭১ হাজার টাকা।পাশাপাশি ঘরের জন্য জমি বরাদ্দ আছে ২ শতাংশ ।এখন পর্যন্ত শাহজাদপুর উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের মোট ২৫১ টি ঘর সুবিধাভোগীদের মধ্যে বিতরন সম্পন্ন হয়েছে ।
সরজমিনে বুধবার দুপুরে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে এসব ঘর বিক্রির বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে ।প্রতিটি ঘর বিক্রি হয়েছে মাত্র ৮০ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায়।
সেখানে প্রতিটি ঘরে গিয়ে কথা বলে জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী ১৪ নম্বর ঘরের আবদুস সালাম ও তার স্ত্রী সেলিনা দম্পতি । অথচ এই ঘরটি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ১লাখ টাকা দিয়ে কিনে শিরিনা বেগম তাঁর পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। ১০ নম্বর ঘরের সুবিধাভোগী বেল্লাল হোসেন ও তার স্ত্রী সারা খাতুন দম্পতি ।বর্তমানে এই ঘরটি ৮০ হাজার টাকায় কিনে বসবাস করছেন মোঃ আনু ও সাবিনা বেগম দম্পতি। ৮ নম্বর ঘর অবদুর রশিদ দম্পতির বরাদ্দ পেলেও ঘরটি ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকায় কিনে বসবাস করছেন জাহের আলীর পরিবার । ৯ নম্বর ঘর মো: ঠান্ডু দম্পতি পেলেও সে ঘরে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় কিনে পিঞ্জিরা খাতুন তার সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন।
১৩ নম্বর ঘর রফিকুল ইসলাম ও মোছাঃ ফুলমালা দম্পতি পেলেও ১ লাখ টাকা দিয়ে কিনে নাজমুল হোসেন তার পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। ১৬ নম্বর ঘর বিধবা রেশমা খাতুন বরাদ্দ পেলেও সে ঘর ১ লাখ টাকায় কিনে হাফিজুল উসলাম ও নাছিমা খাতুন দম্পতি বসবাস করছেন। ১৭ নম্বর ঘরটি জহুরুল ইসলাম ও আফরোজা বেগম দম্পতি বরাদ্দ পেলেও সে ঘর ১লাখ ১১ হাজার টাকায় কিনে হালিমা বেগম তার পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন।
এলাকাবাসী বলছেন ১০ নম্বর ঘরের সুবিধাভোগী বেল্লাল হোসেন ও তার স্ত্রী সারা খাতুনের গাড়াদহ ফুটবল খেলার মাঠের পাশে বড় বাড়ি রয়েছে ।
মোঃ আনু ও সাবিনা বেগম দম্পতি টাকা দিয়ে ঘর কিনে বসবাসের কথা স্বীকার করে বলেন, আমাগোরে ঘরবাড়ি কিছু নাই, আমাগোরে কোন মানুষ নাই, তাই দৌড়াদৌড়ি করেও একটা ঘর পাইনাই । এহুন ঋন কইরা স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ঘর কিনা বসবাস করছি।
১৪নম্বর ঘরের সুবিভাভোগী আবদুস সালামের স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, ঘর বিক্রির বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।ঘর বিক্রির একটি টাকাও আমরা পাইনি সব ডিজিটাল ভিশন বিদ্যানিকেতনের(কেজি স্কুল) পরিচালক জুয়েল আহম্মেদ নিয়েছে । সেই এসব বিষয়ে জানে ।
স্থানীয় ডিজিটাল ভিশন বিদ্যানিকেতনের(কেজি স্কুল) পরিচালক জুয়েল আহম্মেদ বলেন,একটি ঘর কেনা বেচা সময় আমি মধ্যস্ততায় ছিলাম।তবে কোন টাকার বিষয়ে আমি জানি না ।
সহকারী কমিশনার(ভূমি) লিয়াকত সালমান বলেন, ঘর বিক্রির বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি ।আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রির সত্যতা পাওয়া গেছে ।দ্রতই আমরা মাঠে গিয়ে ব্যাবস্থা নেব ।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন দৈনিক আজকের বাংলাকে বলেন, সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রি করা আইনত অপরাধ।যাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কেবলমাত্র তারাই ঘরে বসবাস করতে পারবেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর কোনোভাবেই বিক্রি বা হস্তান্তরের সুযোগ নেই।বিষয়টি তদন্ত করে তালিকা থেকে অভিযুক্তদের নাম বাদ দেওয়া হবে ।