
মোঃ মিজানুর রহমান, সাতকানিয়া প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ছনখোলা এলাকায় মসজিদের মাইকে ডাকাত ঘোষণা দিয়ে ২ জামায়াত কর্মীকে পরিকল্পিতভাবে মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত দুজনের মাথায় পর্যায়ক্রমে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। নিহত নেজাম উদ্দিন (৪৫) ও আবু ছালেক (৪৪) এর ময়না তদন্ত শেষে স্থানীয় আনেয়ারুল উলুম আলিম মাদ্রাসার মাঠে নামাজে জানাজা শেষে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার(৪ মার্চ) রাত সাড়ে ৭টার দিকে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়। নিহত নেজাম উদ্দিন(৪৫) উপজেলার মধ্যম কাঞ্চনা এলাকার মাহমুদুল হকের ছেলে এবং আবু ছালেক(৪৪) কাঞ্চনা ইউনিয়নের গুরগুরি এলাকার আবদুর রহমানের ছেলে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাত ১০টার দিকে নেজাম আরো কয়েকজন নিয়ে ছনখোলা এলাকায় গেলে সাবেক এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য নজরুল ইসলাম মানিকের লোকজন মসজিদের মাইকে ডাকাত ডাকাত বলে ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো করে।
তারা নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেকের উপর হামলা চালায়। এ সময় কয়েক রাউন্ড গুলিও ছোড়া হয়। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হলে নেজাম উদ্দিন ও তার সাথে থাকা আবু ছালেককে গণপিটুনি দিয়ে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত দুজনের মাথায় পর্যায়ক্রমে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন স্থানীয় কয়েকজন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ব্যক্তিরা হলেন আব্বাস উদ্দিন (৩৮), ওবায়দুল হক (২২), নাসির উদ্দিন (৩৮) ও মোঃ মামুনুর রশিদ (৪৫)। আহতরা বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পার্ক ভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নেজাম উদ্দিন আওয়ামী শাসনামলে বিভিন্ন রাজতৈনিক মামলার আসামি হয়ে দেশ ছেড়ে সৌদি আরবে ছিলেন আর আবু ছালেক চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের সম্মুখযোদ্ধা। সম্প্রতি এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য নজরুল ইসলাম মানিকের মাছের খামার ও ইটভাটায় লুটের ঘটনায় নেজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় মানিকের স্ত্রী জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগও করেছিলেন। তাদের পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে ডেকে নেওয়া হয়েছিল বলে কেউ কেউ জানিয়েছেন।
জামায়াতে ইসলামী কাঞ্চনা ইউনিয়নের সেক্রেটারি জায়েদ হোছেন জানান, নিহত ব্যক্তিরা জামায়াতের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। একটি সালিস বৈঠকের কথা বলে তাদের এওচিয়া এলাকায় ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত দুজনের মাথায় পর্যায়ক্রমে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনা নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। বিবৃতিতে সাতকানিয়া উপজেলা জামায়াতের আমির, সেক্রেটারি, এওচিয়া ও কাঞ্চনা জামায়াতের আমির, সেক্রেটারি মাওলানা কামাল উদ্দিন, মুহাম্মদ তারেক হোছাইন, আবু বক্কর, ফারুক হোসাইন, মাওলানা আবু তাহের, জায়েদ হোসেন জানান, গত সোমবার রাতের ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা গ্রামটি বহু আগে থেকেই সন্ত্রাস কবলিত এলাকা। এওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম প্রকাশ মানিক চেয়ারম্যান ছনখোলা গ্রামের পাহাড়, পাহাড়ি গাছ ও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে নিতে একাধিকবার সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এলাকার মানুষ তার অত্যাচার নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে বয়কট করে। তৎকালীন আওয়ামী সরকার ও প্রশাসনের সহযোগিতার কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনি। ৫ আগস্টের পর সে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করলেও তার বাহিনী এখনো থেকে যায়। তার ভাই হারুন ও মমতাজের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই সন্ত্রাসীগণ এখনো নানা অপকর্মে জড়িত। গত সোমবার রাতে পরিকল্পিতভাবে ব্যবসায়ী নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেককে বিচারের কথা বলে ডেকে এনে মাইকে ডাকাত আখ্যা দিয়ে গণপিটুনির নামে চেয়ারম্যান মানিকের নির্দেশে তার ভাইদের পরিকল্পনায় দুজনকে হত্যা করা হয়। অবিলম্বে চিহ্নিত খুনিদের গ্রেপ্তার, ঘটনার গডফাদারদের বিরুদ্ধে মামলা ও বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত না করে আসল হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ জাহেদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, আটটি গুলির খোসা ও একটি সিএনজি টেঙি জব্দ করেছে পুলিশ। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।