শরীয়তপুর প্রতিনিধি।।
শরীয়তপুরে জাজিরা শাখার কৃষি ব্যাংক ম্যানেজার আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারকে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেয়াসহ ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী ও প্রানে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।
এবিষয়ে গত বুধবার-০১ জানুয়ারি- জাজিরা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন আমির ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন নামের এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার রবিউল ইসলাম জাকির। অভিযোগের বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন- জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-ওসি- আল আমিন।
স্থানীয়- পুলিশ ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে জাজিরা উপজেলার পালেরচর বাজার সংলগ্ন পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধের কাজ করছে মের্সাস আমির ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রবিউল ইসলাম জাকির। গত ৩১ ডিসেম্বর বিকেলের দিকে একটি প্রাইভেটকার নিয়ে সেখানে যান জাজিরা শাখা কৃষি ব্যাংকের ম্যানেজার আনিসুর রহমান, উপজেলার কাজীরহাট এলাকার বাসিন্দা জালাল বেপারীর ছেলে মিলন বেপারী ও বড়কান্দি রামকৃষ্ণপুর এলাকার বাসিন্দা দানেশ মাদবরের ছেলে নান্টু মাদবরসহ অজ্ঞাত আরও দুজন। তারা সেখানে গিয়ে নিজেদের র্যাব পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগী রবিউল ইসলামের কাছে চলমান প্রকল্পের কাগজপত্র দেখাতে বলেন। পরে রবিউল তাদের কাগজপত্র দেখানোর পরেও তারা বলেন, এসব ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে কোন লাভ নাই। এখানে কাজ করতে হলে আমাদের ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। নয়তো কোন কাজ চলবে না। এসব কথার প্রতিবাদ করায় অভিযুক্ত আনিসুর রহমান রবিউলের পরিহিত শার্টের কলার ধরে টানতে থাকেন আর বাকী অভিযুক্তরা মারধর করতে থাকে ও রবিউলের কাছে থাকা টাকা ভর্তি একটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। পরে যখন রবিউলকে টেনে নিয়ে প্রাইভেটকারে উঠানোর চেষ্টা করা হয় তখন স্থানীয় কয়েকজন মাছ ব্যবসায়ী তাকে উদ্ধার করে নিরাপত্তা দেন। বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ হওয়ার পরে থানার তদন্ত কর্মকর্তা অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আনিসুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তার সাথেও অসদাচরণ করেন বলে জানা যায়।
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী রব মাদবর বলেন, “আমি হঠাৎ দেখতে পাই ম্যানেজার রবিউলকে কয়েকজন মিলে টেনে নিয়ে গাড়ীতে ভরতাছে। তখন আমি এলাকাবাসীদের নিয়ে তাকে উদ্ধার করি।”
এছাড়া প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘হঠাৎ করে কয়েকজন লোক এসে ম্যানেজার রবিউলকে ধরে নিয়ে যেতে চায়। তখন আমরা বাধা দিতে গেলে তারা আমাদের র্যাবের পরিচয় দেয়।’
বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী রবিউল ইসলাম জাকির বলেন, “আমি প্রতিদিনের মত প্রকল্পের কাজে ছিলাম। বিকেলের দিকে হঠাৎ প্রাইভেটকার নিয়ে ৩-৪ জন লোক আসেন। এসেই র্যাব পরিচয় দিয়ে আমাকে বলেন, ‘তোর কাজের কাগজপত্র দেখা। এরপর আমি কাগজপত্র দেখানোর সাথে সাথে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন এবং আনিসুর রহমান নামের লোকটি আমার শার্টের কলার ধরে টানতে থাকে আর বাকীরা আমাকে মারধর করতে থাকে। এসময় আমার সাথে থাকা একটি ব্যাগে ৩ লাখ ৭ হাজার টাকাসহ ব্যাগটি কেড়ে নিয়ে যায়। পরে যখন আমাকে তাদের গাড়ীতে উঠানোর চেষ্টা করে তখন এলাকাবাসী আমাকে টেনে ছাড়িয়ে রাখে। এরপর আমি ঘটনার বিষয়ে আমার মালিকের সাথে আলোচনা করে থানায় অভিযোগ করেছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার দাবী করি।”
এবিষয়ে অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আনিসুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি সেখানে রিলাক্সের জন্য গিয়েছিলাম। আমার সাথে আমার ড্রাইভার ছিল। ওখানে গিয়ে দেখতে পাই সেখান থেকে মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। সে বিষয়ে ওখানকার দায়িত্বে থাকা একজনের কাছে জানতে চেয়েছিলাম এভাবে মাটি কাটা উচিৎ কিনা। মাটি-বালু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে চেয়েছি। এছাড়াও তাৎক্ষণিকভাবে আমি এডিসি রেভিনিউ মহোদয়কে জানাই। পরে তিনি আমার নাম্বার ইউএনওকে দিলে ইউএনও মহোদয় আমাকে ফোন দিয়ে জানালেন তারা এর আগে সেখানে মোবাইল কোর্ট করেছেন। এরপরও আগের মত তারা মাটি কাটছিল। পরে আমি ওদের মৌখিকভাবে বলে আসছি আপনারা এটা কইরেন না, তাহলে আমাদের বেড়ীবাঁধের ক্ষতি হবে। পরে এসে জানতে পারি আমার বিরুদ্ধে র্যাব পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ হয়েছে।”
জানতে চাইলে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, “উনি আমাকে জানিয়েছেন ওখান থেকে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। পরে আমি তাকে বলেছি আমরা মোবাইল কোট করেছি। এরপরও যদি মাটি নেয়া হয় তাহলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আমির ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী আমির হোসেন বলেন, “আমার ম্যানেজারকে অন্যায়ভাবে মারধর করা হয়েছে ও তার কাছে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। আমরা থানায় একটি অভিযোগ করেছি। আশা করি ন্যায় বিচার পাবো।”
শরীয়তপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ তারেক হাসান বলেন, এই ঘটনা সম্পর্কে আমি শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে যেহেতু থানায় অভিযোগ হয়েছে। সেহেতু বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীই দেখবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শরীয়তপুর জেলার আঞ্চলিক ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার(ডিজিএম) মো: মেহেদী হাসান ও ফরিদপুর অঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার(জিএম) মো: খোরশেদ আলম সাথে। এই কর্মকর্তারা বলেন, “যদি তিনি এধরনের কাজ করে থাকেন এবং তা তদন্তে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আল আমিন বলেন, “আমরা কৃষি ব্যাংক জাজিরা শাখার ব্যবস্থাপকসহ আরও ২-৩ জনের নামে একটি চাঁদাবাজির অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।