মোঃ মাসুদ রানা মনি
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি।।
লক্ষ্মীপুরে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে তবে এখনো ব্যাপক এলাকায় বন্যার পানি রয়ে গেছে। খাল- নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় বন্যার পানি সরতে দেরী হচ্ছে। দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে উপদ্রুত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে জ্বর- সর্দি-কাশি- চর্মরোগ ও ব্যাপক ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ।
কালো বর্ণ ধারণ করা পচা পানি গায়ে লাগলেই চুলকানি দেখা দিচ্ছে। জেলার অনেক মানুষই এই পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে পায়ে ক্ষত- হাতে খোসপাঁচড়া দেখা দিচ্ছে। পাশাপাশি ঘরে ঘরে জ্বর ও ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে । মধ্যম বয়সী নারী পেয়ারা বেগম -৪৮-।নিজেই সংসার চলান । স্বামী ভারসাম্যহীন রোগী। বন্যার পানির সাথে থাকতে থাকতে পায়ে ঘা হয়েছে তার। ১১ দিন ধরে জ্বর। কাশি তো লেগেই আছে। হাঁটাচলা দূরের কথা- এখন ঠিকমতো দাড়াতেই পারছেন না চল্লিশ ছুঁই ছুঁই এ নারী। বাধ্য হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালের মেঝেতে বিছানা করে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পেয়ারা বেগমের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা টুমচর গ্রামে। তিনি জানান, দুই সপ্তাহ ধরে বাড়িতে কোমরপানি ছিল। এখনও পানি আছে- তবে অল্প। স্বামী- দুই সন্তান নিয়ে সংসার। বাড়ির চারপাশে পানি থইথই করছে। পানিতে হাঁটাচলার কারণেই তিনি ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হন। শুধু পেয়ারা বেগম নন- লক্ষ্মীপুরের বন্যাকবলিত পাঁচটি উপজেলার হাজার হাজার পরিবার জ্বর, ডায়রিয়া, চর্মসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত। রামগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ এলাকাই এখনো পানির নীচে। গত দুই দিনে একটু পানি কমেছে। এ উপজেলার প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরেই জ্বর সর্দি ও চর্ম রোগ দেখা দিয়েছে। চর্ম রোগের জন্য ব্যবহৃত টেটমোসোল সহ বিভিন্ন ঔষধ সামগ্রী হাসপাতাল গুলোতে সরবরাহ কম বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
গত কয়েকদিন জ্বর ও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের ভিড় দেখা গেছে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে। ১০০ শয্যার হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে মোট শয্যা ১০টি। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি ছিল ১০৫ জন। এর মধ্যে শিশু ৭৬ ও নারী ১৯ জন।
সরেজমিনে দেখা যায়- ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গাদাগাদি করে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। শয্যা না পেয়ে রোগীদের জন্য মেঝেতে বিছানা পাতা হয়েছে। হাসপাতালে তথ্যমতে, এক সপ্তাহ ধরে ডায়রিয়া- জ্বর ও পানিবাহিত রোগে সদর হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এই সময়ের মধ্যে বহির্বিভাগ ও ভর্তি মিলিয়ে প্রায় এক হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা অরূপ পাল জানিয়েছেন- বন্যার পর এক সপ্তাহ ধরে লক্ষ্মীপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত রোগীদের ৮০ ভাগই শিশু। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ডায়রিয়া রোগীদের কেউ কেউ। অনেকে ঘরে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. আহাম্মদ কবীর বলেন- বন্যার কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। জেলার ৫৮টি মেডিকেল টিম সেবা দিচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন। পানিবন্দী থাকা অনেক মানুষ ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এ ছাড়া নবজাতক- শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। তাই তাদের দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া দরকার ।