
সুমন স্টাফ রিপোর্টার।।
রূপগঞ্জে দাবিকৃত যৌতুকের টাকা না পেয়ে কাজল রেখা নামের এক বাকপ্রতিবন্ধি গৃহবধুকে হাত-পা বেঁধে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে স্বামীসহ শশুর বাড়ির লোকজন। এ ঘটনায় স্বামী ও শাশুড়িকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার (১৬ অক্টোবর) সকাল ৬টার দিকে উপজেলার পিতলগঞ্জ এলাকার শীতলক্ষ্যা নদী থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নৌকার মাঝিরা ওই গৃহবধুকে উদ্ধার করেন। আটককৃতরা হলেন গৃহবধুর স্বামী জুলহাস মিয়া ও শাশুড়ি সাহেরা খাতুন।
অপর দিকে, যৌতুকের দাবিতে নাসিমা নামের আরেক গৃহবধুকে শাশুরী ও ননদ মিলে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার (১৫ অক্টোবর) রাতে উপজেলার আতলাপুর এলাকায় ঘটে এ নির্যাতনের ঘটনা।
বাকপ্রতিবন্ধি গৃহবধু কাজল রেখার বোন আলেয়া বেগম অভিযোগ করে জানান, তাদের বাবা আম্বর আলী। বাড়ি উপজেলার কেন্দুয়া এলাকায়। তারা এক ভাই তিন বোন। বোনদের মধ্যে বাকপ্রতিবন্ধি কাজল রেখা। প্রায় ৭ বছর আগে পিতলগঞ্জ এলাকার মিব্বর আলীর ছেলে জুলহাস মিয়ার সঙ্গে কাজল রেখাকে বিয়ে দেন। বিয়েতে যৌতুক হিসেবে এক লাখ টাকা, এক ভরি স্বর্ণ, সেলাই মেশিনসহ আসবাবপত্র বোন জামাইকে দেন। বিয়ের পর তাদের সংসারে তানজিলা (৪) নামের মেয়ে সন্তান হয়।
গত কয়েক মাস ধরেই বাকপ্রতিবন্ধি বোন কাজল রেখাকে যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলো স্বামী জুলহাস মিয়াসহ শশুর বাড়ির লোকজন। যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় স্বামীসহ শশুর বাড়ির লোকজন কাজল রেখাকে একাধীকবার শারিরিক নির্যাতনও করে। এ নিয়ে স্থানীয় ভাবে চেয়ারম্যান ও মেম্বারসহ গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিচারও হয়েছে। নির্যাতনের কথা শুনে শনিবার বিকেলে স্বামীর বাড়ি পিতলগঞ্জ থেকে মেয়ে কাজল রেখাকে আনতে যান তাদের মা আকলিমা বেগম। পরে মায়ের কাছে কাজল রেখাকে দেয়নি স্বামীসহ শশুর বাড়ির লোকজন।
ভোর ৬টার দিকে পিতলগঞ্জ এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীতে বাকপ্রতিবন্ধি কাজল রেখার হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেহ ভাসতে দেখে নৌকার মাঝি মুনসুর মিয়া স্থানীয়দের সহযোগীতায় গিয়ে উদ্ধার করেন এবং দেখতে পান জীবিত রয়েছে। পরে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে মৃত্যুর আশঙ্কা কেটে যায়।
অপর ঘটনায় গৃহবধু নাসিমা আক্তার অভিযোগ করে জানান, তিনি উপজেলার চারিতালুক এলাকার সহিদুল্লাহ মাষ্টারের মেয়ে। পার্শবতী আতলাপুর এলাকার রেহান উদ্দিনের ছেলে শরীফ উদ্দিনের সঙ্গে নাসিমা আক্তারের প্রেম করে বিয়ে হয়। বিয়ের পর সিনহা আক্তার (১৪) নামের এক মেয়ে সন্তান হয়। দীর্ঘ দিন ধরেই শাশুরী ও ননদসহ শশুর বাড়ির লোকজন নানা ভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছে। তাদের নির্যাতনের কারনে একমাত্র মেয়ে সিনহা আক্তারকে বাল্য বিয়ে দেন তিনি। শনিবার রাতে শাশুরী ফুল মেহের ও ননদ রোজিনা আক্তার মিলে নাসিমা আক্তারকে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা চালায়। পরে তার আত্নচিৎকারে আশ-পাশের মানুষ এগিয়ে এসে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, উভয় ঘটনার ব্যপারে রূপগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত করে দোষিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।