মোঃ আসিফুজ্জামান আসিফ
সিনিয়র ষ্টাফ রিপোর্টার।।
রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধনের জন্য জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শীর্ষস্থানীয় ২০ পত্রিকার সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফিং করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে শফিকুল আলম বলেন-প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান রাষ্ট্র মেরামত করার জন্য মস্ত বড় সুযোগ এনে দিয়েছে। বাংলাদেশকে নতুন শিখরে নেওয়ার জন্য এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। তবে এর জন্য জাতীয় ঐক্যের খুব প্রয়োজন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধান উপদেষ্টাকে তারা বলেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকার যেন যৌক্তিক সময় পর্যন্ত থাকেন। এই যৌক্তিক সময় আসলে কতটা সময়- সে বিষয়ে ড. ইউনূস সম্পাদকদের কাছে জানতে চান। এই সময়টাতে কী কী মৌলিক কাজ সরকারের করা উচিত- এ বিষয়েও পরামর্শ চান তিনি।
বৈঠকে সম্পাদকদের পক্ষ থেকে আসা পরামর্শ তুলে ধরে প্রেস সচিব আরও বলেন-সংবিধান সংশোধন-সংবিধান পুনর্লিখন-আইন কমিশন-সংবিধান কমিশন-মিডিয়া কমিশন ও পুলিশ কমিশন গঠনের কথা এসেছে। পুলিশকে কিভাবে আরও কার্যকরভাবে কাজে লাগানো যায় এবং নির্বাচন কমিশন সংস্কারের কথা এসেছে।
এছাড়া সম্পাদকরা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের ভুলত্রুটি নিয়ে লেখার অনুরোধ জানিয়ে ড. ইউনূস সম্পাদকদের বলেন-আপনারা লিখেন। আমাদের দোষ-ত্রুটি হলে তা নিয়ে লিখেন। আমরা আপনাদের কথা শুনতে চাই। মতামত জানতে চাই।
প্রেস সচিব সচিব বলেন-ড. ইউনূস বার বার বলেছেন-তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন এবং মুক্ত-প্রাণবন্ত ও গতিশীল গণমাধ্যম দেখতে চান।
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে শফিকুল আলম বলেন-সরকার দেশে একটা গতিশীল গণমাধ্য দেখতে চায়। এর জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবটুকু করা হবে। একইঙ্গে তিনি সরকার দেশে মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন। মতবিনিময় সভায় সম্পাদকরা সাংবাদিকদের জন্য যেসব কালাকানুন আছে সেগুলো বাতিল বা সংশোধন করার প্রস্তাব করেন।
সরকারের পক্ষ থেকে মিডিয়ার -গণমাধ্যম- ওপর কোনো ধরনের চাপ নেই উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম মজুমদার বলেন-একটি প্রাণবন্ত ও মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য মিডিয়া কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। এই কমিশন আমাদের দেশে মিডিয়া কিভাবে চলবে তা ঠিক করবে।
তিনি বলেন-সাংবাদিকতা করতে গিয়ে কেউ যেন বিপত্তির মুখে না পড়েন- বাধার সম্মুখীন না হন- তা নিশ্চিতে এই কমিশন গঠনের প্রস্তাব এসেছে। সরকার এই কমিশন গঠনের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার আরেক উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীরও উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস সচিব জানান- মোট ২২ জন সম্পাদককে মতবিনিময়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাদের মধ্যে দুজন বিদেশে থাকায় আসতে পারেননি।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান-নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির-দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, সংবাদ সম্পাদক আলতামাশ কবির-ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন-ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ-বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সম্পাদক ইনাম আহমেদ, কালের কণ্ঠের হাসান হাফিজ-আমাদের সময় সম্পাদক আবুল মোমেন-ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান-বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, প্রতিদিনের বাংলাদেশের মুস্তাফিজ শফি-দেশ রূপান্তরের মোস্তফা মামুন-কালবেলা সম্পাদক সন্তোষ শর্মা।
এ ছাড়া দৈনিক আজাদী সম্পাদক এমএ মালেক, দৈনিক পূর্বকোণ সম্পাদক ডা. ম. রমিজউদ্দিন-দৈনিক করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার -বাসস-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।