
তৌহিদ বেলাল, কক্সবাজার।।
কক্সবাজারের রামু উপজেলার চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদের সচিব স্বরূপা পালের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ইউপি’র দশজন সদস্য। সচিবের অপসারণের দাবিতে এক বছর ধরে পরিষদও বর্জন করছেন তারা।
জানা যায়, ২০১১ সালে চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদে সচিব হিসেবে যোগদান করেন স্বরূপা পাল। দীর্ঘ ১৩ বছর একই জায়গায় চাকরির সুবাধে স্বরূপা পাল ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদে সেবাপ্রার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহার এবং নানা অজুহাতে জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ ও ট্রেড লাইসেন্সের নামে আদায় করছেন বাড়তি অর্থ। পরিষদের সদস্য-সদস্যাদের অগোচরে সরকারি বরাদ্দের নামসর্বস্ব প্রকল্প কমিটি দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করছেন। চেয়ারম্যানের নাম ব্যবহার করে ইউপি সদস্যদের চাপে ফেলে রেজুলেশন খাতায় প্রকল্পের স্বাক্ষর আদায়েরও চেষ্টা করা হয়।
ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব জেনারেটর ও ফটোকপি মেশিন বিগত ৪ বছর যাবত অকেজো-ব্যবহারের অনুপযোগী অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অথচ উক্ত মেশিনগুলো সংস্কারের নামে বিল ভাউচার করে একাধিকবার অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিভিন্ন ট্যাক্স আদায় করে তার কোনো হিসাব প্রদর্শন না করে নিজেই আত্মসাৎ করে আসছেন। সচিবের এই অপকর্মে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার জড়িত বলেও অভিযোগ ইউপি সদস্যদের।
ইউপি সদস্য সাহাব উদ্দিন, নুরুল আমিন, মঈনুল আলম জানান, জনস্বার্থে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও এনজিও হতে বিভিন্ন বরাদ্দের কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো চিঠি এলে সচিব স্বরূপা পাল তা গোপন করে রাখেন। ফলে সরকারি-বেসরকারি নানান সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার দরিদ্র, অসহায় মানুষগুলো।
চাকমারকুল ইউনিয়নের পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যরা জানান, জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে জনগণের সেবা করার শপথ নিয়ে তারা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছেন। কিন্তু সচিব স্বরুপা পালের উশৃঙ্খল আচরণ ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সাধারণ জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা।
ইউপি সদস্য বেলাল উদ্দিন, নুরুল ইসলাম, জামাল উদ্দিন, রাশেদুল হক বলেন, ‘সচিব স্বরূপা পাল একজন স্বেচ্ছাচারি ও দুর্নীতিগ্রস্থ মহিলা। আমরা তার অপসারণের দাবিতে গত ৩০ডিসেম্বর থেকে পরিষদ বর্জন করে আসছি’।
তাঁরা স্বরূপা পালকে অন্যত্র বদলি করে চাকমারকুল ইউপিতে একজন দক্ষ, সৎ, কর্মঠ ব্যক্তিকে সচিব নিয়োগ দেয়ার দাবি জানান।
স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানায়, দেরিতে অফিসে আসেন সচিব। তিনি সেবাগ্রহীতাদের সাথে অশোভন করেন। কেউ জন্ম নিবন্ধনের জন্য গেলে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করেন। পরবর্তীতে ৫০০-৭০০ টাকায় চুক্তি করে নিবন্ধন দেন। ট্রেড লাইসেন্সে অর্থ আদায় করেন বেশি, কিন্তু রশিদে উল্লেখ করেন কম।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সচিব স্বরূপা পাল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে দাবি করেন।
চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার দাবি করেন, সচিবের অনিয়ম দুর্নীতির সাথে তিনি জড়িত নন। মেম্বারগণ বিষয়টি তাকে অবগত করলে সমাধানের চেষ্টা করবেন বলেও জানান তিনি।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা মুস্তফা বলেন, ‘চাকমারকুলের ইউপি সচিব স্বরূপা পালের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।