পাবনা প্রতিনিধি ।।
পাবনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল চত্বরে এসে থামে একটি অটোরিকশা। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ১টা। এরপর এক যুবক অটোরিকশা থেকে নেমে ‘সেহরী সেহরী’ বলে ডাকতে শুরু করেন। তাঁর ডাকে আশপাশ থেকে চলে আসেন রিকশাচালক, ছিন্নমূল মানুষ ও পথচারীরা।
এরপর সবার হাতে খাবারের প্যাকেট তুলে দেন ওই যুবক। তাঁর নাম দেওয়ান মাহবুব। বাসা পাবনা পৌর শহরের শিবরামপুর মহল্লায়। তাঁর একটি সংগঠন আছে। সেখান থেকে মানুষের আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে গত ৪ বছর ধরে প্রতি রমজান মাসে তিনি সাহ্রি বিতরণ করে আসছেন।
কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল চত্বর থেকে অন্তত মোড়, রায় বাহাদুর গেট, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, এ আর কর্নার, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র সহ অন্তত সাতটি পয়েন্টে সাহ্রি বিতরণ করেন মাহবুব। নৈশ প্রহরী, রিক্সাচালক, ছিন্নমুল, পথচারী মানুষ, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও স্বজনদের মাঝে এই সাহ্রি বিতরণ করা হয়।
দেওয়ান মাহবুব বলেন, বিভিন্ন মানুষের দান ও আর্থিক সহায়তার টাকা দিয়ে প্রতিদিন বাজার করা থেকে রান্না ও প্যাকেটিংয়ের কাজ নিজেরাই করি। প্রতি রাতে গাড়ি ভাড়া দিতে হয় ৫০০ টাকায়। সব মিলিয়ে প্রতি প্যাকেট খাবারের খরচ পড়ে ৬০ টাকা। এভাবে রাত ১টা থেকে তিনটা পর্যন্ত ২০০ থেকে ২৫০ প্যাকেট সাহ্রি বিতরণ করেন।’
রিকশাচালক সদর উপজেলার বাগচীপাড়ার নাজমুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাত জেগে রিকশা চালাতে গিয়ে বাড়িতে সাহ্রি খাওয়া যায় না। মাহবুব ভাই প্রতি রাতে সাহ্রি দিয়ে যান। সেটা খেয়ে রোজা থাকেন।’
শহরের আব্দুল হামিদ সড়কের অফিসের নৈশপ্রহরী সাইদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, সাদ্দাম হোসেন সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাড়ি দূরে। রাত জেগে প্রহরীর কাজ করি। সাহ্রি খাওয়ার মতো অবস্থা থাকে না। গত চার বছর ধরে মাহবুব ভাই আমাদের সাহ্রি দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা তাঁর অপেক্ষায় থাকি। সাহ্রি পেয়ে আমাদের খুব উপকার হয়। তার এই কাজটাকে আমরা স্যালুট জানাই।’
দেওয়ান মাহবুব বলেন, ২০১১ সালে আমরা তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন করেছি। সেই সংগঠনের উদ্যোগে সপ্তাহে দুইদিন শুক্র ও মঙ্গলবার বিনা মূল্যে অসহায় মানুষদের ওষুধ বিতরণ করা হয়।
এছাড়া বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যে টিউবওয়েল স্থাপন, নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য সেলাই মেশিন, মুরগি ও ছাগল বিতরণ করা হয়। বেকার মানুষকে স্বাবলম্বী করতে পুকুরে মাছচাষের জন্য মাছের পোনা ও খাদ্য সরবরাহ করা হয়।
করোনাকালে ২২টি লাশ দাফন করা হয়েছে। কোরবানির ঈদে সমাজের গরিব মানুষে মধ্যে গরুর গোশত বিতরণ করা হয়। আর এ সব করা হয় সমাজের মানবিক মানুষের দানের টাকায়।