মাজিদ আল মামুন- মেহেরপুর।।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ডানার প্রভাবে গত কয়েকদিন ধরে মেহেরপুরে টানা বৃষ্টি আর ঝড়ো হাওয়ায় আমন ধান ও মাস কলাইসহ সবজি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
শনিবার -২৬ অক্টোবর- সকাল থেকে বিকেল অবধি মেহেরপুরের সর্ববৃহৎ মাঠ ধলার মাঠসহ মাইলমারী- লক্ষীনারায়ণপুর- নওপাড়া-হিজলবাড়ীয়া- হিন্দা- পলাশীপাড়া- করমদী- তেঁতুলবাড়ীয়া- খাসমহল- রংমহল- রামকৃষ্ণপুর- ধলা- হরিরামপুর- জোড়পুকুরিয়া- সহড়াতলা- বেতবাড়ীয়া- হাড়াভাংগা ও চেংগাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ আমন ধান ও মাস কলাই পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। কয়েকদিনের অব্যাহত ঝড়ের কবলে অধিকাংশ আমন ধানের গাছ মাটিতে নুইয়ে পড়েছে।
যার ফলে কৃষকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত ফলন থেকে বঞ্চিত হবে বলে জানান।
কৃষকরা জানান- ঝড়ের আঘাতে আমন ধানের ফুল ঝরে যাওয়াসহ আগাম ধান পানিতে তলিয়ে রয়েছে। তাছাড়া ফুল ও ফল ধরা কলাই ক্ষেতেও পানি জমে রয়েছে।
মুলা ও কপিসহ বিভিন্ন ক্ষেতের বীজ তলাও ডুবে যেতে দেখা গেছে। যেগুলো বাঁচাতে কৃষকরা পানি ছেঁকে কিংবা জমির আইল কেটে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এদিকে আমন ধানের চাষ এলাকা বিশেষ করে নওপাড়ার নবীনপুর ও লক্ষীনারায়ণপুর অংশের খালে বাঁধ সৃষ্টি করে মাছ ধরায় পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেও কেউ কেউ অভিযোগ জানিয়েছেন। যার ফলে ধান ও কলাই ক্ষেত থেকে পানি বেরোতে পারছেনা।
সরেজমিনে উক্ত এলাকায় গিয়ে একাধিক ব্যক্তির সাথে আলাপকালে জানা যায়- মাঠের ফসল বাঁচাতে খালের বাঁধ উন্মুক্ত করার জন্য গত শুক্রবার সন্ধায় মাইকিং করা হলে প্রায় ৮ টি বাঁধ খুলে দেওয়া হলেও কিছু বাঁধ এখনো উন্মুক্ত করা হয়নি। যার ফলে ফসলের মাঠে এখনো পানি জমে রয়েছে।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দীন জানান- বৃষ্টির পানিতে মাইলমারী ফেলার চড়া- ধলার মাঠ ও নওপাড়াসহ কয়েকটি মাঠের ৬’শ ১০ হেক্টর জমির প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ ধান ক্ষেতের আংশিক পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এসব এলাকার কৃষকরা চরমভাবে ক্ষতির মুখে রয়েছে। মাঠের পানি নেমে বা শুকিয়ে যাবার পর ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হবে বলেও তিনি জানান।
কাথুলী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের -মাইলমারী- ইউপি সদস্য কাবের আলী জানান- ধলার মাঠের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় মাইলমারী- লক্ষীনারায়ণপুর ও হিন্দাসহ কাথুলী ইউনিয়নের মাঠের অধিকাংশ আমন ধান ও কলাইসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। যা থেকে ফুল- ফল ও ফলন আশা করা যায়না। এতে করে গ্রামের কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়েছে। কৃষকের এ লোকসান পুষিয়ে দিতে তিনি কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে- চলতি মৌসুমে জেলার সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলায় প্রচুর পরিমাণ জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় ডানা ও বৃষ্টির কারণে কি পরিমাণ জমির ফসল নষ্ট হয়েছে অফিস বন্ধ থাকায় তা জানা সম্ভব হয়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে- ঘূর্ণিঝড় ডানার প্রভাবে মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বয়েছে। যা ইতিমধ্যেই থেমে গেছে। আর ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা না থাকলেও দু’একদিন আকাশ মেঘে ঢাকা থাকতে পারে।