
স্টাফ রিপোর্টার- মেহেরপুর।।
বৈচিত্র্যপূর্ণ ছয় ঋতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশ। আর এক একটি ঋতুর রয়েছে একেক ধরনের বৈশিষ্ট্য। বাংলার প্রকৃতির ঋতু বৈচিত্র্যে এখন শীতকাল। মেহেরপুরে রাত থেকে কুয়াশায় ঢাকার পর সকালে মিষ্টি রোদ- আবার সন্ধার পর হিমেল হাওয়া আর হাড় কাঁপানো শীত।
সবমিলিয়ে প্রকৃতি এখন পৌষ মাসের শীতের দাপটে। তাইতো মেহেরপুরে কদর বেড়েছে খেজুর রসের। মিষ্টি সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়ালেই গাছে গাছে দেখা মিলছে গাছিদের কর্মব্যস্ততা। দুপুরের পর থেকে সন্ধা অবধি খেজুরের গাছ ঝুড়ে মাটির কলসি- অ্যালুমিনিয়ামের ঘড়া অথবা প্লাস্টিকের বোতল ঝুলানো। ভোরবেলা আবার গাছ থেকে রস নামানো- রস বিক্রি অবশেষে রস থেকে গুড় তৈরি। যেন কোন বিরাম নেই গাছিদের।
মেহেরপুরের সদর- গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার অধিকাংশ গ্রামে খেজুর রস সংগ্রহের প্রস্তুতি হিসেবে গাছ ঝোড়া হয় পুরো হেমন্ত জুড়ে। পরে শুকানো গাছে নল লাগিয়ে রস সংগ্রহ শুরু হয়।
গত কয়েকদিনে মেহেরপুরের আমদহ- বামনপাড়া- রায়পুর- গোভীপুর- হরিরামপুর- শ্যামপুর- বেলতলা পাড়া- নওপাড়া- লক্ষ্মীনারায়নপুর- মাইলমারী- হিন্দা- হিজলবাড়ীয়া- পশ্চিম মালশাদহ- গোপালনগর- হাড়িয়াদহ- ধানখোলা- জুগিন্দা- হিজুলী- আজান গ্রাম- খোকসা- হাড়াভাঙ্গা- নওদাপাড়া- বেতবাড়ীয়া ও গোয়ালগ্রামসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে কয়েকজন গাছির রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির ব্যস্ততা চোখে মেলে।
মাইলমারী গ্রামের গাছি মোফাজ্জেল হক জানান- আশ্বিন মাসের ১০ থেকে কার্তিক মাসে গাছ ঝোড়া শুরু হলেও মেহেরপুরে ধান কাটা মাড়াইয়ে ব্যস্ততার কারণে তা দেরিতে শুরু হয়েছে। এবছর তিনি ৩০ টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে রস ও গুড় তৈরি অব্যাহত রেখেছেন।
নওপাড়া গ্রামের বাবর আলী জানান- এবার ৫০ টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন। প্রতি গাছ বাবদ গাছের মালিককে দিতে হবে এ সিজনের জন্য ১ কেজি করে গুড়। তিনি ১ দিন বাদে বাদে -প্রতিদিন- ২৫ টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। যা থেকে প্রতিদিন রস ও গুড় বিক্রি করে আয় করে থাকেন প্রায় ৩ হাজার টাকা। এভাবেই গত ২০ বছর ধরে সংসার চলে।
শ্যামপুর গ্রামের শামীম জানান- এবছর প্রায় ২০টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন। ৩ বছর ধরে ভাইয়ের সাথে শিক্ষা নিয়েই এ কাজ চলমান রেখেছেন।
বেলতলা পাড়ার আব্দুল কুদ্দুস জানান- প্রায় ৬ বছর ধরে ১০-১৫ টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করলেও এবার ৩০ টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছেন।
মেহেরপুরের গাছিরা প্রতি ৫ লিটার রস ২’শ থকে ৩’শ টাকা এবং প্রতি ১ কেজি গুড় সাড়ে ৩’শ টাকায় বিক্রি করে থাকে। শীতকালীন পিঠা পায়েস তৈরিতে খেজুরের রস ও গুড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
গাছিদের সাথে আলাপকালে তিনারা জানান- অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাস থেকে এখানে রস সংগ্রহ শুরু হয়েছে। যা আগামী ফাগুন মাস পর্যন্ত চলবে।
তবে নানা কারণে মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকার খেজুর গাছগুলে কর্তন করে উজাড় করে ফেলা হচ্ছে। এবিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি জরুরি। নইলে অচিরেই হারিয়ে যাবে মেহেরপুরের ঐতিহ্য খেজুরের রস- গুড় ও পাটালি।