Dhaka , Sunday, 16 February 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
পাইকগাছায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে চেয়ারম্যানের পদত্যাগ  রামগঞ্জে  ২দিন ব্যাপী ফ্রি চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্প উদ্বোধন  চট্টগ্রামে বনাঢ্য আয়োজনে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৫’র উদ্বোধন রূপগঞ্জে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ আওয়ামী পন্থীদের পূর্ণবাসনের অভিযোগ ববিতে, ভাংচুরকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি উপাচার্যের  নরসিংদীর রায়পুরায় গৃহবধূ হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার দাবিতে মানববন্ধন বাংলাদেশকে বিপজ্জনক বর্জ্যের ভাগাড় হতে দেওয়া যাবে না- পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অপারেশন ডেভিল হান্টেও ধরাছোঁয়ার বাইরে মাদকসম্রাট জসিম বাহিনীর মূলহোতা জসিম রামগঞ্জে জুলাই বিপ্লবে শহীদ ৬ পরিবারকে সম্মাননা ও প্রনোদনা প্রদান নীলফামারীতে ছাত্রদলের ফরম বিতরণ ও কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত গাজীপুরে ৩ ট্রাকের সংঘর্ষে, নিহত ৩ বিশ্বজাকের মঞ্জিল” ওরশে আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় বৃদ্ধের মৃত্যূ ছাত্র আন্দোলনে হামলা মামলার আরেক আসামি গ্রেপ্তার পটিয়ায় ঘুনে ধরা রাষ্ট্রকে ঢেলে সাজাতে ৩১দফার বিকল্প নেই কালিয়াকৈরে বোয়ালী বিএনপির কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত  বাংলাদেশ বৌদ্ধ যুব পরিষদের সিলেটে শীতবস্ত্র বিতরণ চট্টগ্রাম ১৪ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সর্বস্তরের দায়িত্বশীল সমাবেশ  মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির যৌথ প্রস্তুতি সভা  ভাতিজার চু’রি’কা’ঘা’তে চাচা নি’হ’ত রামগঞ্জে বিষ্ণুপুর তরুন স্পোটিং ক্লাবের শিক্ষক ও গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান মণিরামপুরে ইসলামী আন্দোলনের কমিটি গঠন, সভাপতি ইবাদুল ইসলাম, সম্পাদক শামছুদ্দিন আজাদী  ‘আনন্দ অ্যাকাডেমি ফর পারফর্মিং আর্টস’-এর উদ্বোধন করলেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আ ফ ম খালিদ হোসেন রচিত ইসলামী বিধিবিধান গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন কাউখালীতে ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অপারেশন ডেভিল হান্ট” অভিযানে ১৩ জন গ্রেফতার বড় ব্যবসায়ীরা নিজেদের ফায়দা নিতে গিয়ে অন্যদের ধ্বংস করেছে- ডা. শাহাদাত হোসেন জাতিসংঘের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আ’লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে-  মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী মোহাম্মদপুরের হাইক্কার খাল উদ্ধারের উদ্যোগ ডিএনসিসির, সরেজমিনে পরিদর্শনে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ অপারেশন ডেভিল হান্ট, নোয়াখালীতে ৬দিনে ৬৫জন গ্রেপ্তার সিদ্ধিরগঞ্জে মসজিদ ভেঙে ফেলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল

মেহেরপুরে ইবি ছাত্রী উর্মি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে শংসয়

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 08:00:13 pm, Saturday, 8 October 2022
  • 172 বার পড়া হয়েছে

মেহেরপুরে ইবি ছাত্রী উর্মি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে শংসয়

জুরাইস ইসলাম,মেহেরপুর।।

স্বামীর বাড়িতে নৃশংসভাবে হত্যাকাÐের অভিযোগে ইবি ছাত্রী নিশাত তাসনিম উর্মির মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। সুরতহাল রিপোর্টে হত্যাকাÐের আশংকা থাকলেও মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় পুলিশ ও নিহতের পরিবার। তবে সেই ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তার এবং পুলিশের পক্ষ থেকে পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য ধু¤্রজালের সৃষ্টি করেছে। অপরদিকে ভিসেরা রাসায়নিক পরীক্ষাগারে না পাঠিয়ে আইন বহির্ভূতভাবে আটকে রাখা হয় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে। আবার টাকা দিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পক্ষে নেওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। তাহলে কি ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নয় ছয় হতে পারে ? এমন আশংকা করছে নিহতের পরিবার ও স্বজনরা।
গেল ৮ সেপ্টেম্বর রাতে মেহেরপুরের গাংনীর কাথুলী মোড় পাড়ায় স্বামীর বাড়িতে ইবি ছাত্রী উর্মিকে নির্যাতন ও শ^াসরোধে হত্যা করা হয়। এমন অভিযোগে নিহতের পিতা গাংনী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার আসামি হিসেবে নিহত ইবি ছাত্রীর স্বামী ও শ^শুর জেল হাজতে রয়েছেন।
জানা গেছে, গত ৮ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে গাংনী হাসপাতালে উর্মির মরদেহ নিয়ে যায় তার স্বামীর পরিবারের লোকজন। আত্মহত্যা বলে তারা দাবি করলেও নিহতের পরিবার ও পুলিশের সন্দেহ হয়। প্রাথমিকভাবে তারা এটিকে হত্যাকাÐ বলে চিহ্নিত করে। ওই রাতেই পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে। এতে উঠে আসে শরীরের বিভিন্ন স্থানে হত্যাকাÐের বিষয়ে সন্দেহজনক আঘাতের নানা চিহ্ন। পরদিন ৯ সেপ্টেম্বর নিহতের পিতা গোলাম কিবরিয়া বাদি হয়ে গাংনী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। উর্মির মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মেহেরপুর জেনারেল হাসপতালে প্রেরণ করে গাংনী থানা পুলিশ।
ময়ানাতদন্তের শুরু থেকেই নানা আলোচনা, টাকা দিয়ে ময়নাতদন্ত ম্যানেজ করার গুঞ্জন এবং প্রাথমিক ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দিয়ে চিকিৎসকের অনীহার বিষয়টি সমালোচনায় রুপ নেয়। ভিসেরা নমুনা রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই পুর্নাঙ্গ ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে এমন দাবি করে আসছিলেন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মকলেছুর রহমান পলাশ। তবে রাসায়নিক পরীক্ষাগারে উর্মির ভিসেরা পাওয়া যায়নি।
গেল ৩০ সেপ্টেম্বর খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, উর্মির ভিসেরা কৌটাবদ্ধ অবস্থায় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালেই পড়ে আসে। তাহলে আরএমও কেন বার বার দাবি করছেন ভিসেরা রিপোর্টের জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে ? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলে হাসপাতাল থেকে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তার উপর দায় চাপানো হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে নমুনা নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন তারা। কিন্তু এ দায় পুলিশের নয় বলে বিষয়টি স্পষ্ট করেন গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি আরো বলেন, হাসপাতাল থেকে নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিক ময়নাতদন্ত রিপোর্টের সাথে ভিসেরা নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠাতে একটি চিঠি ইস্যু করবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই চিঠি না পাওয়া পর্যন্ত পুলিশের কিছু করার নেই।
ওসির বক্তব্যের পর আরও ধু¤্রজাল সৃষ্টি হয়। হাসপাতালের আরএমও বলছেন ভিসেরা রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলেই পুর্নাঙ্গ ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে। অথচ সেই ভিসেরা ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেন পাঠানো হয়নি ? এর রহস্য কী ? তাহলে কি আসামি পক্ষ টাকা দিয়ে সব ম্যানেজ করছে বলে যে গুঞ্জন রয়েছে তাই সত্যি হতে যাচ্ছে ? এমন প্রশ্ন মামলার বাদির।
এদিকে ভিসেরা রিপোর্ট না পাঠিয়ে হাসপাতালে ফেলে রেখে পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করার বিষয়টি নজরে আসে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রীক মিডিয়ার সাংবাদিকদের। তখন তড়িঘড়ি করে প্রাথমিক ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও পুলিশের কাছে চিঠি ইস্যু করা হয় গত ১ অক্টোবর। সেই চিঠির নির্দেশনা পেয়ে উর্মির মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা গাংনী থানার এসআই শাহীন মিয়া নমুনা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। নিয়মানুযায়ী ভিসেরা রিপোর্ট ৭২ ঘন্টার মধ্যে রাসায়নিক পরীক্ষাগারে প্রেরণের কথা। অথচ ২২ দিন কেন নমুনা আটকে রাখা হলো তার সদুত্তোর মেলেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
এই প্রাথমিক ময়ানাতদন্ত রিপোর্ট নিয়েও আরেক সংশয় সৃষ্টি হয়েছে বাদি পক্ষে। ভিসেরা পাঠাতে সময়ক্ষেপণ, রিপোর্ট পাঠানো নিয়ে পুলিশের উপর দায় চাপানো, ময়নাতদন্তকারী ডাক্তারের অসম্পূর্ণ মতামত প্রদান এবং ভিসেরা হাসপাতালে ফেলে রাখার বিষয়টি ধু¤্রজালের সৃষ্টি করেছে। তবে কেন এতোদিন ফেলে রাখা হলো ? কেনইবা মতামত রিজার্ভ করা হল ? এমন প্রশ্নের উত্তর চেয়ে বারবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও ডাঃ বেলাল হোসেন সুমন কল রিসিভ করেননি।
তবে বিষয়টি নিয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন আরএমও ডাঃ মকলেছুর রহমান। তিনি দাবি করেন, মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা যখন ভিসেরা নিতে আসেন তখন চিঠি করে দেওয়া হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে না চাওয়া পর্যন্ত চিঠি করা হয় না।
তবে এ দাবি মিথ্যা বলে জানিয়েছেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা গাংনী থানার এসআই শাহীন মিয়া। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মোবাইলে কয়েকবার যোগাযোগ করেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভিসেরা পাঠানোর চিঠি দেয়নি। চিঠি না পেলে পুলিশের কিছুই করার থাকে না।
ভিসেরা কেন ২২ দিন আটকের রাখা হল ? নমুনা না পাঠিয়ে আপনি কেন বারবার বলেছেন যে পাঠানো হয়েছে ? নমুনা এতদিন রাখা যায় কি না ? এতদিন রাখলে নমুনা ধ্বংস হয় কি না ? এসব প্রশ্নের জবাবে ডাঃ মকলেছুর রহমান জানান, আসলে আমি ভেবেছিলাম ভিসেরা চলে গেছে। কিন্তু অফিস থেকে যে পাঠানো হয়নি তা আমার জানা ছিল না। কারণ এতোদিন পড়ে থাকার কথা নয়।
পুলিশের দায়িত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে এখানে যতগুলো ভিসেরা পাঠানো হয়েছে তার প্রত্যেকটি পুলিশের পক্ষ থেকে চাওয়ার পরই দেওয়া হয়েছে। আগে থেকে চিঠি করলে সেই চিঠি পড়ে থাকে। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে যখন নমুনা নিতে আসা হয় তখন চিঠি করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে মামলার বাদি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিয়ে যা হচ্ছে তা রীতিমতো আমার কাছে ভয়ংকর বিষয়। আমি তো সন্তান হারিয়েছি। নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি সকলের কাছেই পরিস্কার। একটি নিশ্চিত বিষয় নিয়ে কেন এত ধু¤্রজাল তা বুঝতে পারছি না। তবুও চিকিৎসক ও পুলিশের প্রতি আমার আস্থা রয়েছে।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডাঃ জওয়াহেরুল আলম বলেন, কোনভাবেই ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বদলানো যায় না। এ বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি।
প্রসঙ্গত, গাংনীর বাঁশবাড়ীয়া গ্রামের গোলাম কিবরিয়া ও চিৎলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক লায়লা আরজুমান বানুর বড় মেয়ে নিশাত তাসনিম উর্মির বিয়ে হয় গাংনীর কাথুলী মোড় পাড়ার ব্যবসায়ী হাসেম শাহের ছেলে প্রিন্সের সাথে। প্রিন্স কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ আর উর্মি ইবি ফোকলোর স্ট্যাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত। তাদের ১৩ মাস বয়সী এক পুত্র সন্তান রয়েছে। গেল ৮ সেপ্টেম্বর রাতে উর্মিকে পিটিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তার পরিবার। এমন অভিযোগে তাদের নামে মামলা দায়ের করে নিহতের পরিবার। ওই মামলায় উর্মির স্বামী ও প্রিন্সকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে গাংনী থানা পুলিশ। বর্তমানে তারা মেহেরপুর জেলা কারাগারে হাজতবাসে রয়েছেন। মামলার অপর আসামি প্রিন্সের মা পলাতক রয়েছেন।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

পাইকগাছায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে চেয়ারম্যানের পদত্যাগ 

মেহেরপুরে ইবি ছাত্রী উর্মি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে শংসয়

আপডেট সময় : 08:00:13 pm, Saturday, 8 October 2022

জুরাইস ইসলাম,মেহেরপুর।।

স্বামীর বাড়িতে নৃশংসভাবে হত্যাকাÐের অভিযোগে ইবি ছাত্রী নিশাত তাসনিম উর্মির মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। সুরতহাল রিপোর্টে হত্যাকাÐের আশংকা থাকলেও মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় পুলিশ ও নিহতের পরিবার। তবে সেই ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তার এবং পুলিশের পক্ষ থেকে পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য ধু¤্রজালের সৃষ্টি করেছে। অপরদিকে ভিসেরা রাসায়নিক পরীক্ষাগারে না পাঠিয়ে আইন বহির্ভূতভাবে আটকে রাখা হয় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে। আবার টাকা দিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পক্ষে নেওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। তাহলে কি ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নয় ছয় হতে পারে ? এমন আশংকা করছে নিহতের পরিবার ও স্বজনরা।
গেল ৮ সেপ্টেম্বর রাতে মেহেরপুরের গাংনীর কাথুলী মোড় পাড়ায় স্বামীর বাড়িতে ইবি ছাত্রী উর্মিকে নির্যাতন ও শ^াসরোধে হত্যা করা হয়। এমন অভিযোগে নিহতের পিতা গাংনী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার আসামি হিসেবে নিহত ইবি ছাত্রীর স্বামী ও শ^শুর জেল হাজতে রয়েছেন।
জানা গেছে, গত ৮ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে গাংনী হাসপাতালে উর্মির মরদেহ নিয়ে যায় তার স্বামীর পরিবারের লোকজন। আত্মহত্যা বলে তারা দাবি করলেও নিহতের পরিবার ও পুলিশের সন্দেহ হয়। প্রাথমিকভাবে তারা এটিকে হত্যাকাÐ বলে চিহ্নিত করে। ওই রাতেই পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে। এতে উঠে আসে শরীরের বিভিন্ন স্থানে হত্যাকাÐের বিষয়ে সন্দেহজনক আঘাতের নানা চিহ্ন। পরদিন ৯ সেপ্টেম্বর নিহতের পিতা গোলাম কিবরিয়া বাদি হয়ে গাংনী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। উর্মির মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মেহেরপুর জেনারেল হাসপতালে প্রেরণ করে গাংনী থানা পুলিশ।
ময়ানাতদন্তের শুরু থেকেই নানা আলোচনা, টাকা দিয়ে ময়নাতদন্ত ম্যানেজ করার গুঞ্জন এবং প্রাথমিক ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দিয়ে চিকিৎসকের অনীহার বিষয়টি সমালোচনায় রুপ নেয়। ভিসেরা নমুনা রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই পুর্নাঙ্গ ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে এমন দাবি করে আসছিলেন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মকলেছুর রহমান পলাশ। তবে রাসায়নিক পরীক্ষাগারে উর্মির ভিসেরা পাওয়া যায়নি।
গেল ৩০ সেপ্টেম্বর খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, উর্মির ভিসেরা কৌটাবদ্ধ অবস্থায় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালেই পড়ে আসে। তাহলে আরএমও কেন বার বার দাবি করছেন ভিসেরা রিপোর্টের জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে ? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলে হাসপাতাল থেকে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তার উপর দায় চাপানো হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে নমুনা নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন তারা। কিন্তু এ দায় পুলিশের নয় বলে বিষয়টি স্পষ্ট করেন গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি আরো বলেন, হাসপাতাল থেকে নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিক ময়নাতদন্ত রিপোর্টের সাথে ভিসেরা নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠাতে একটি চিঠি ইস্যু করবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই চিঠি না পাওয়া পর্যন্ত পুলিশের কিছু করার নেই।
ওসির বক্তব্যের পর আরও ধু¤্রজাল সৃষ্টি হয়। হাসপাতালের আরএমও বলছেন ভিসেরা রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলেই পুর্নাঙ্গ ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে। অথচ সেই ভিসেরা ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেন পাঠানো হয়নি ? এর রহস্য কী ? তাহলে কি আসামি পক্ষ টাকা দিয়ে সব ম্যানেজ করছে বলে যে গুঞ্জন রয়েছে তাই সত্যি হতে যাচ্ছে ? এমন প্রশ্ন মামলার বাদির।
এদিকে ভিসেরা রিপোর্ট না পাঠিয়ে হাসপাতালে ফেলে রেখে পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করার বিষয়টি নজরে আসে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রীক মিডিয়ার সাংবাদিকদের। তখন তড়িঘড়ি করে প্রাথমিক ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও পুলিশের কাছে চিঠি ইস্যু করা হয় গত ১ অক্টোবর। সেই চিঠির নির্দেশনা পেয়ে উর্মির মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা গাংনী থানার এসআই শাহীন মিয়া নমুনা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। নিয়মানুযায়ী ভিসেরা রিপোর্ট ৭২ ঘন্টার মধ্যে রাসায়নিক পরীক্ষাগারে প্রেরণের কথা। অথচ ২২ দিন কেন নমুনা আটকে রাখা হলো তার সদুত্তোর মেলেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
এই প্রাথমিক ময়ানাতদন্ত রিপোর্ট নিয়েও আরেক সংশয় সৃষ্টি হয়েছে বাদি পক্ষে। ভিসেরা পাঠাতে সময়ক্ষেপণ, রিপোর্ট পাঠানো নিয়ে পুলিশের উপর দায় চাপানো, ময়নাতদন্তকারী ডাক্তারের অসম্পূর্ণ মতামত প্রদান এবং ভিসেরা হাসপাতালে ফেলে রাখার বিষয়টি ধু¤্রজালের সৃষ্টি করেছে। তবে কেন এতোদিন ফেলে রাখা হলো ? কেনইবা মতামত রিজার্ভ করা হল ? এমন প্রশ্নের উত্তর চেয়ে বারবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও ডাঃ বেলাল হোসেন সুমন কল রিসিভ করেননি।
তবে বিষয়টি নিয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন আরএমও ডাঃ মকলেছুর রহমান। তিনি দাবি করেন, মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা যখন ভিসেরা নিতে আসেন তখন চিঠি করে দেওয়া হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে না চাওয়া পর্যন্ত চিঠি করা হয় না।
তবে এ দাবি মিথ্যা বলে জানিয়েছেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা গাংনী থানার এসআই শাহীন মিয়া। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মোবাইলে কয়েকবার যোগাযোগ করেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভিসেরা পাঠানোর চিঠি দেয়নি। চিঠি না পেলে পুলিশের কিছুই করার থাকে না।
ভিসেরা কেন ২২ দিন আটকের রাখা হল ? নমুনা না পাঠিয়ে আপনি কেন বারবার বলেছেন যে পাঠানো হয়েছে ? নমুনা এতদিন রাখা যায় কি না ? এতদিন রাখলে নমুনা ধ্বংস হয় কি না ? এসব প্রশ্নের জবাবে ডাঃ মকলেছুর রহমান জানান, আসলে আমি ভেবেছিলাম ভিসেরা চলে গেছে। কিন্তু অফিস থেকে যে পাঠানো হয়নি তা আমার জানা ছিল না। কারণ এতোদিন পড়ে থাকার কথা নয়।
পুলিশের দায়িত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে এখানে যতগুলো ভিসেরা পাঠানো হয়েছে তার প্রত্যেকটি পুলিশের পক্ষ থেকে চাওয়ার পরই দেওয়া হয়েছে। আগে থেকে চিঠি করলে সেই চিঠি পড়ে থাকে। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে যখন নমুনা নিতে আসা হয় তখন চিঠি করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে মামলার বাদি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিয়ে যা হচ্ছে তা রীতিমতো আমার কাছে ভয়ংকর বিষয়। আমি তো সন্তান হারিয়েছি। নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি সকলের কাছেই পরিস্কার। একটি নিশ্চিত বিষয় নিয়ে কেন এত ধু¤্রজাল তা বুঝতে পারছি না। তবুও চিকিৎসক ও পুলিশের প্রতি আমার আস্থা রয়েছে।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডাঃ জওয়াহেরুল আলম বলেন, কোনভাবেই ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বদলানো যায় না। এ বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি।
প্রসঙ্গত, গাংনীর বাঁশবাড়ীয়া গ্রামের গোলাম কিবরিয়া ও চিৎলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক লায়লা আরজুমান বানুর বড় মেয়ে নিশাত তাসনিম উর্মির বিয়ে হয় গাংনীর কাথুলী মোড় পাড়ার ব্যবসায়ী হাসেম শাহের ছেলে প্রিন্সের সাথে। প্রিন্স কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ আর উর্মি ইবি ফোকলোর স্ট্যাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত। তাদের ১৩ মাস বয়সী এক পুত্র সন্তান রয়েছে। গেল ৮ সেপ্টেম্বর রাতে উর্মিকে পিটিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তার পরিবার। এমন অভিযোগে তাদের নামে মামলা দায়ের করে নিহতের পরিবার। ওই মামলায় উর্মির স্বামী ও প্রিন্সকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে গাংনী থানা পুলিশ। বর্তমানে তারা মেহেরপুর জেলা কারাগারে হাজতবাসে রয়েছেন। মামলার অপর আসামি প্রিন্সের মা পলাতক রয়েছেন।