সি:স্টাফ রিপোর্টার -চট্টগ্রাম ব্যুর।।
আমাদের ভাষা সৈনিক যারা ছিলেন তাদের মধ্যে বদিউল আলম চৌধুরী অন্যতম ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক -শিক্ষা ও আইসিটি- মো. শরীফ উদ্দিন।
তিনি বলেন- ১৯৪৭ সালে বৈষম্যমূলক যে ভাষাভাষী ছিল সেটা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চেয়েছি এবং ২০২৪ সালে এসেও আমরা সেটা প্রমাণ করতে পেরেছি বাংলাদেশ বৈষম্যের কোনো ঠাঁই নেই। নতুন বাংলাদেশ হবে বৈষম্যমুক্ত। যে বাংলাদেশ হবে, সেখানে সবধরনের সংস্কার হবে৷ তারমধ্যে একটি সংসস্কার হবে সাংস্কৃতিক সংস্কার। সেই সংস্কৃতির একটি অংশ হলো ভাষার। আর আমাদের ভাষা সৈনিক যারা ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম বদিউল আলম চৌধুরী।
তিনি ১০ অক্টোবর-বৃহস্পতিবার- সন্ধ্যায় নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট হলে ভাষা সৈনিক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক মরহুম বদিউল আলম চৌধুরীর ১৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মৃত্যু বার্ষিকী উদযাপন পরিষদ আয়োজিত স্বরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
মৃত্যু বার্ষিকী উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক কাজী শাহাদাত হোসাইনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিযাম উদ্দিনের পরিচালনায় এতে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক একুশে পদক প্রাপ্ত এম এ মালেক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের সাধারণ সম্পাদক লায়ন নজমুল হক চৌধুরী- বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী- চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের -সিডিএ- সদস্য সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি- বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট মফিজুল হক ভুঁইয়া- মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান।
এসময় এডিসি শরীফ উদ্দিন বলেন- আমরা ধরে নিতে পারি, আমরা যে মাতৃভাষায় কথায় বলছি, এ মাতৃভাষায় কথা বলার পেছনে যারা শহীদ হয়েছেন- যারা কাজ করেছেন- তাদের কারণে আজ এ মাতৃভাষা। আর সেই মাতৃভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পেয়েছি।
তিনি আরো বলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হলো- সমাজের সকল ক্ষেত্রে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা। ভাষা আন্দোলন কেন হয়েছে? পুরো পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলতো। ভাষাভাষীর দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে যে ভাষাটি ছিল, সেই ভাষায় যারা কথা বলতো তাদের শতাংশ ছিল মাত্র ২৮ শতাংশ। আর পঞ্চম অবস্থায় ছিল উর্দু ভাষা। আর এ উর্দু পঞ্চম অবস্থানে থেকে তৎকালীন পাকিস্তানে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান মিলে চেয়েছিল রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু।
সেটা বাংলাদেশের মানুষ তৎকালীন সময়ে মেনে নেয়নি। আর সেটা মেনে না নেওয়ার ফলে যে আন্দোলনটা তৈরি হয়েছিল। সেই আন্দোলনের সফলতার কারণে আমরা আমাদের এ স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। আমাদের বাংলাদেশের যে অস্তিত্ব, আমাদের ইতিহাস সেটার ভিত্তি ভাষা আন্দোলনের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কারণ ৪৭ এর পরে প্রথম কোনো মেসিব আন্দোলন হয়ে থাকে সেটি একমাত্র ভাষা আন্দোলন ছিল।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে এম এ মালেক বলেন- মরহুম বদিউল আলম চৌধুরী ১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি তমুদ্দন মজলিসের প্রবীণ সদস্য ছিলেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে যুক্তফ্রন্টকে বিজয়ী করার পেছনে তাঁর অবদান অতুলনীয়। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সামাজিক কর্মকান্ডেও সক্রিয় ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান মুসলিম এডুকেশন সোসাইটির আজীবন সদস্য ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামে তার অনেকগুলো পদচিহ্ন রেখে গেছেন। এই স্মরণ সভায় এতগুলো মানুষ তাকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছে এটাই বদিউল আলম সাহেবের বড় পাওয়া। এই সভার মাধ্যমে উনার সম্বন্ধে অনেকেই জানতে পেরেছে। চট্টগ্রামবাসী বদিউল আলম চৌধুরীকে আজীবন স্মরণ করবেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে লায়ন নজমুল হক চৌধুরী বলেন- বদিউল আলম চৌধুরী যেটা ভালো মনে করতেন সেটাই করতেন- অন্যায়ের সাথে কোন কম্প্রোমাইজ করতেন না। তিনি ভালো সংগঠক ছিলেন। তিনি একজন পীর ভক্ত মানুষ ছিলেন। তিনি কুখ্যাত সেটানিক ভার্সেস প্রতিরোধ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলন পরিষদের প্রথম সহ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি হযরত মঈনুদ্দীন শাহ -রহঃ- মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক ও হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রহঃ) দরগাহ ও মসজিদের কার্যকরী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ সরকারের চাঁদ দেখা কমিটি ও ঈদ জামাত কমিটির সদস্য ছিলেন।
এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন- বদিউল আলম চৌধুরী একজন শিক্ষা অনুরাগী ছিলেন। চট্টগ্রামে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গঠন করেছেন। তার ইচ্ছা ছিল, তিনি সেটা পেরেছেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। তিনি উত্তর কাট্টলী নূরুল হক চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা- ঐতিহ্যবাহী সেন্ট প্ল্যাসিড্স হাই স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও কাট্টলী নূরুল হক চৌধুরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুনঃ প্রতিষ্ঠাতা ও দীর্ঘ ১৮ বছর সভাপতি ছিলেন। তিনি ভাষা সৈনিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বদিউল আলম চৌধুরী মানুষের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছেন। তিনি ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন।
সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি বলেন, বদিউল আলম চৌধুরী ১৯৭৯ সালে সম্মিলিত বিরোধী দল গণফ্রন্টের মনোনীত প্রতিনিধি হিসাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তিনি সৎ ও ঈমানদার মানুষ ছিলেন। তিনি সবসময় ভালো কাজে উৎসাহ দিতেন। বর্তমান সময়ে তার মতো মানুষের খুব দরকার ছিল।
এডভোকেট মফিজুল হক ভুঁইয়া বলেন, যে দেশে গুনিজনকে সম্মান করে না সে দেশে গুণির জন্ম হয় না। বদিউল আলম চৌধুরী চট্টগ্রামের অলংকার ছিলেন। ভবিষ্যতে একজন বদিউল আলম চৌধুরী সৃষ্টি করা যাবেনা। উনাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো এখন সময়ের দাবি।
মানবাধিকার কর্মী জিয়া হাবীব আহসান বলেন, বদিউল আলম চৌধুরী একজন সুফি সাধক ছিলেন। তিনি একজন পীরের খাদেম ছিলেন। তিনি মসজিদ মাদ্রাসা ও সমাজের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন। তিনি শুধু সমাজসেবা করেছেন- চাইলে বড় ব্যবসায়ী হতে পারতেন। এমন একজন গুণী মানুষের নামে চট্টগ্রামের একটি সড়কের নামকরণের দাবি জানাচ্ছি।
এতে উপস্থিত ছিলেন মরহুমের সন্তান নাছরিন কাওছার চৌধুরী, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল- এডভোকেট কানিজ কাওছার চৌধুরী রিমা ও এডভোকেট মাহমুদ উল আলম চৌধুরী মারুফ সহ বিপুল সংখ্যক শুভানুধ্যায়ী। এতে বক্তব্য রাখেন রাজনীতিবিদ হারুন জামান- খোরশেদ আলম- বিশিষ্ট আইনজীবী মঈন উদ্দিন- জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ সভাপতি আজিজুল হক চৌধুরী, এড. দেলোয়ার হোসেন- এড. নাছির উদ্দীন চকোরী- আমরা চাটগাঁবাসীর সাধারণ সম্পাদক এবিএম ইমরান- এড. জায়েদ বিন রশীদ, এড. ইয়াসির আরাফাত প্রমূখ।