আরিফ আহমেদ
বিশেষ প্রতিবেদক।।
যেখানেই ড্রেনের ময়লা পরিষ্কার করতে যাচ্ছে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা- সেখানেই উঠে আসছে চাক চাক জমাট বাধা সাদাটে মাটির স্তুপ। ভাত- টয়লেটের বর্জ্য- পলিথিন ইত্যাদি মিলে জমাট বেঁধে পাথরের মত আকৃতি তৈরি হয়েছে। প্রতিটি ড্রেনের তলদেশ থেকে উঠে আসছে টনকে টন এই বর্জ্য। যেন সেপ্টিট্যাঙ্ক ও ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার হয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন -বসিক- এর প্রতিটি ড্রেন। যে কারণে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ড্রেন উপচে সড়কে মহাসড়কে উঠে আসে নর্দমার নোংরা পানি। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা জানালেন- বেশিরভাগ বস্তি বা টিনসেড বাসাবাড়ি এবং বিশেষ করে হোটেল রেষ্টুরেন্টের আশেপাশের ড্রেনগুলো পুরোপুরি সেপ্টিট্যাঙ্ক ও ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। হোটেলগুলোর যতরকম ময়লা আবর্জনা সবই পাওয়া যাচ্ছে ড্রেনের ভিতর। আবার তাদের টয়লেটের মল-মুত্রের বর্জ্যও সরাসরি ড্রেনের সাথে সংযোগ দেয়া। এগুলো পরিষ্কার করতে হলে মেথরপট্টি থেকে লোক আনতে হবে। সাধারণ পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দিয়ে এটা সম্ভব নয় বলে জানান বরিশাল সিটি করপোরেশনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কয়েকজন পরিচ্ছন্ন কর্মী।
সরেজমিনে ১৮ আগস্ট রবিবার বরিশাল সিটি করপোরেশন আওতাধীন এলাকার পুলিশ লাইন- সদর রোডসহ আশপাশের এলাকায় ড্রেনের স্লাব সরিয়ে ভিতর থেকে ময়লা আবর্জনা টেনে বের করতে দেখা গেছে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের। ময়লা আবর্জনা বের করে তারা ব্যস্ত সড়কের একপাশে জমা করে রাখছেন। যাতে ময়লা পানি গড়িয়ে পুনরায় ড্রেনে চলে যায়। তাদের জমাকৃত ময়ার স্তুপে উঠে আসতে দেখা যায় প্লাস্টিকের ছোট ছোট চা- শরবত ও পায়েসের কাপ এবং গ্লাস। রয়েছে পলিথিন, বোতল, দলাবাধা ভাত, হাড়গোড়। এমনকি স্তূপকৃত টয়লেটের দলাও উঠে আসছে সড়কের উপর।
জানা যায়, বরিশাল জিলা স্কুলের সামনে ফুটপাতের স্লাব সরিয়ে ১৭ আগস্ট সকাল থেকে এই কাজের সূচনা করে বরিশাল সিটি করপোরেশন। সিইও ইসরাইল তালুকদার এর নির্দেশনা অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের দায়িত্বে ১০০- ১১০ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ড্রেনগুলোর জলাবদ্ধতা দূর করতে কাজ করছে বলে জানান পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ইউসুফ। ইতিপূর্বে পলাতক মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত একইসাথে বরিশাল সিটি করপোরেশন আওতাধীন ৩০টি ওয়ার্ডের ১৬৭ সড়ক ও ৯৫ টি ড্রেন নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ শুরু করেছিলেন। সে কাজের কি অবস্থা তা এখন আর কেউই কিছু জানেন না বলে জানান ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। তবে ইউসুফ বলেন- এটা প্রকৌশলীরা বলতে পারবেন। বর্তমান কাজের সাথে ঐ নির্মাণ ও সংস্কার কাজের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান তিনি।
বসিকের উন্নয়ন কাজের সাথে সম্পৃক্ত সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী আব্দুল মোতালেব জানান, উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। সবগুলো কাজই চলমান আছে। তবে পটপরিবর্তন ও বৃষ্টির কারণে এই মুহূর্তে কাজে ধীরগতি হচ্ছে।
মোতালেব আরো বলেন- এই মুহূর্তে নর্দমা পরিষ্কার কাজের সাথে ঐ কাজের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা সিটি করপোরেশনের রুটিন কাজের ধারাবাহিকতায় নগরীর তাৎক্ষণিক জলাবদ্ধতা দূর করতে পরিচ্ছন্ন অভিযান চলছে।
উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিকতায় ৩ টি প্রকল্পে ১৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে দ্রুত এগিয়ে চলছে বলে জানান তিনি ।
যদি নগরীর কোথাও দৃশ্যমান কোন কাজের অগ্রগতি এখনো চোখে পড়েনি। দেখা যায়নি সড়ক বা ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট কাজের কোনো ঠিকাদার বা কর্মীকে।
এ বিষয় বরিশালের নগর চিন্তাবিদ কাজী মিজানুর রহমান বলেন- বিগত সরকারের উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিকতা অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। প্রতিটি কাজের পিছনে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কোথাও সবটা- কোথাও আংশিক বরাদ্দ পরিশোধ হয়েছে। তাই এসব কাজ দ্রুত তদারকি করতে হবে।
কাজী মিজানুর রহমান আরো বলেন- ড্রেনগুলোর সাথে বাসাবাড়ি বা হোটেল রেষ্টুরেন্টের টয়লেট ও বর্জ্য সংযোগ থাকলে তা অবশ্যই বন্ধ করে দিতে হবে। প্রয়োজনে ঐসব বাসাবাড়ি বা হোটেল রেষ্টুরেন্টে মালিককে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সাবেক মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিলেন বলে জানান তিনি।