দৈনিক আজকের বাংলা ডেস্ক।।
নিয়ন্ত্রণে এসেছে রাজধানীর বঙ্গবাজারের আগুন । সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনীসহ ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিটের প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
মঙ্গলবার ৪ এপ্রিল দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে এ বার্তায় জানানো হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানিয়েছে, বঙ্গবাজারের আগুন ১২টা ৩৬ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এখন শুরুতেই ডাম্পিংয়ের কাজ করবেন। পরে আগুনের সূত্রপাত ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানবেন।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। আর ৬টা ১২ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বঙ্গবাজারই দেশের সব থেকে বড় পাইকারি কাপড়ের মার্কেট। ঈদকে কেন্দ্র করে রোজা শুরুর পর থেকেই ধীরে ধীরে জমে ওঠে এ মার্কেটের ব্যবসা। এ বছরও জমতে শুরু করেছিল বঙ্গবাজারের কেনাবেচা। কিন্তু হঠাৎ লাগা আগুন সব কেড়ে নিয়েছে ব্যবসায়ীদের।
মার্কেটটি ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ – ১০ বার নোটিশ দেয়া হয়েছিল
বঙ্গবাজার মার্কেটটি ২০১৯ সালের ২ এপ্রিল ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর ১০ বার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ।
বঙ্গবাজার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন এ তথ্য জানান।
মঙ্গলবার ৪ এপ্রিল দুপুরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ঘটনাস্থল থেকে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
ডিজি বলেন, ‘২০১৯ সালের ২ এপ্রিল এই ভবনটি অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ আমরা বলেছিলাম, আমরা ঘোষণা করেছিলাম এবং আমরা ব্যানারও দিয়েছিলাম। এরপরে দশবার নোটিশ দিয়েছি যে এই ভবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ফায়ার সার্ভিস বা আমার করণীয় যা যা ছিল তা করেছি। তারপরও এখানে ব্যবসা চলছিল।’
‘আমরা এই মার্কেটের সামনে এরকম ব্যানারও টাঙিয়েছিলাম ২০১৯ সালে। আপনারা মিডিয়া প্রতিনিধিরা অবশ্যই জানেন, এরকম ব্যানার আমরা টাঙিয়েছি, আপনারা দেখেছেন।’
কেউ হতাহত হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজকের ঘটনায় সিভিলিয়ান কেউ এখনো হতাহত হয়েছে বলে আমার জানা নেই, কিন্তু ফায়ারের ৮ জন আহত আছে এবং দুইজন ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে আছে বার্ন ইউনিটে।’
দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলেও দাবি করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে, আমি বলছি আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে, আগুন আর ছড়াবে না। কিন্তু নির্বাপণ করতে আমার আর একটু সময় লাগবে।’
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। আর ৬টা ১২ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
বঙ্গবাজারে আগুন ণিয়ে যা বললেন আইজিপি
বঙ্গবাজারসহ সংলগ্ন অন্তত ৫টি মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে ছিল অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
মঙ্গলবার ৪ এপ্রিল আগুন নিয়ন্ত্রণের পর বেলা সোয়া তিনটার দিকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
তিনি বলেন, আমরা ভোরবেলা আগুনের খবর পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছি। পৌনে সাতটার মধ্যে সকল সিনিয়র অফিসাররা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যোগ দেন। আমরা এসে মারাত্মক আগুন দেখি, ফায়ার সার্ভিস চারদিক থেকে কাজ করছে।
আমরাও রাজারবাগ থেকে ৫টা ওয়াটার ক্যানন এনে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কাজ শুরু করি। আমাদের ওয়াটার রিজার্ভার থেকে প্রায় ২ লাখ লিটার পানি সাপ্লাই দিয়েছি, আমাদের প্রায় ২ হাজার ফোর্স অত্র এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছে।
ফয়ার সার্ভিসের কর্মীরা অত্যন্ত পরিশ্রম করেছে। র্যাব-বিজিবিসহ তিন বাহিনীর সদস্যরা একযোগে দায়িত্ব পালন করেছে। সবকিছু মিলিয়ে আমরা কিছুক্ষণ আগে আগুন নিয়ন্ত্রণের খবর পেয়েছি।
পুলিশ সদর দপ্তরে আগুন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের একটি ব্যারাকে আগুন লেগেছে। আমাদের সকল সদস্য নিরাপদে বের হতে পেরেছে। মালামাল বের করতে পারিনি। তবে ডকুমেন্টস ও মালামাল কী-কী ক্ষতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে হবে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন কী অবস্থা, এখানে হাজার হাজার মানুষ। হামলার খবর পেয়ে আমরা সাথে সাথেই গিয়েছি, এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। পরে জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনাটা যখন ঘটেছে, আগে থেকে প্রস্তুতি ছিল না। আস্তে আস্তে আমরা শক্তি বৃদ্ধি করেছি, পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছি। এখন পুরো পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ট্রাফিক ব্যস্থাপনাও ঠিক রেছি, যার কারণে এত বড় ঘটনার পরও ঢাকার ট্রাফিক সচল ছিল।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নাশকতার কোনো ঘটনা থাকলে তদন্তে বের হয়ে আসবে। আমরা সেই রিপোর্টের অপেক্ষায় থাকব। সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবশ্যই নেবো।