মো.ইমরান হোসেন
স্টাফ রিপোর্টার।।
গাজীপুর ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিতে পোশাক খাতে অস্থিরতা থামছেইনা। বকেয়া বেতন ও নতুন ভাবে বেতন বৃদ্ধি সহ শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি পালনম ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করছে । ফলে এসব অঞ্চলে প্রায় অর্ধশতাধিক পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে। কোথাও কোথাও শ্রমিকদের দাবি ইস্যুকে কেন্দ্র করে কারখানা ভাংচুর- অগ্নিসংযোগ- মহাসড়ক অবরোধ সহ যানবাহন ভাংচুরের ঘটনাও ঘটছে । শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধের ফলে ঢাকা গাজীপুর ময়মনসিংহ ঢাকা টাঙ্গাইলের নবীনগর চন্দ্রা কালিয়াকৈর মহসড়কে তীব্র যানজটে যাত্রী সাধারণের সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পোশাক কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন সহ মহাসড়কে সেনাবাহিনী ও বিজিবি টহল অব্যাহত রয়েছে।
গাজীপুর ও আশুলিয়াসহ দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যে সোমবার -২৩ সেপ্টেম্বর- সন্ধ্যায় সংগঠনের উত্তরা কার্যালয়ে বিশেষ সাধারণ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পোশাক খাতের শ্রমিকদের ১৮ দফার মধ্যে মজুরি এবং বছর শেষে ১০ শতাংশ হারে ‘ইনক্রিমেন্ট বাড়ানোর দাবি কোনোভাবেই না মানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ।
বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সদস্যদের মতামত জানতে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ এ সভা ডাকে।
বিজিএমইএ সভাপতি রফিকুল ইসলাম সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন- সভায় উপস্থিত সদস্যরা একমত হয়েছেন নতুন করে মজুরি বৃদ্ধি ও বছর শেষে ১০ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা হবে না। এর আগে এদিন দুপুরে শ্রম অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে গার্মেন্টস শিল্প সেক্টরে সৃষ্ট শ্রম অসন্তোষ বিষয়ক শ্রমিক ও মালিক প্রতিনিধিবৃন্দের সাথে সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। সেখানে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও বিজিএমইএ সভাপতিসহ উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ১৮টি দাবি কারখানা মালিকদের কাছে তুলে ধরা হয়। মন্ত্রণালয়ের জিজ্ঞাসায় বিজিএমইএ নেতারা বলেন, সদস্যদের মতামত নিয়ে তারা সিদ্ধান্ত জানাবেন। শ্রমিকদের দাবি সংক্রান্ত ১৮টি বিষয় গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বিজিএমইএকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছিল শ্রম মন্ত্রণালয়। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে জরুরি সাধারণ সভা ডেকেছিল বিজিএমইএ।
সাড়ে ৫টায় শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলা এ সভায় বর্তমান নেতৃত্ব ও ঢাকার আশুলিয়া থেকে আসা কারখানা মালিকরা কথা বলেন।
মালিকরা বলেন- সোমবার সকালে গাজীপুর ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে বেশকয়েকটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এর জের ধরে ৫১টি কারখানা বন্ধ হয়েছে- যার মধ্যে ৪৩টি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। আটটি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।
শুরুতে বেতন পরিশোধ ও টিফিন ভাতা দেওয়াসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে শ্রমিকদের দাবি ঘুরপাক খেলেও এখন তাতে যোগ হয়েছে ১৮ দফা।
শ্রমিকদের ১৮ দফার মধ্যে রয়েছে- মজুরি বোর্ড পুনর্গঠনপূর্বক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ। যে সকল কারখানায় ২০২৩ সালে সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি ও এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি তা দ্রুত বাস্তবায়ন। শ্রম আইন সংশোধন করতে হবে।
কোনো শ্রমিকের চাকরি ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর চাকরি থেকে অব্যাহতি দিলে-চাকরিচ্যুত হলে একটি বেসিকের সমান অর্থ প্রদান করতে হবে- এর সাথে সাংঘর্ষিক শ্রম আইনের ২৭ ধারাসহ অন্যান্য ধারাসমূহ সংশোধন।
সকল প্রকার বকেয়া মজুরি অবিলম্বে পরিশোধ। হাজিরা বোনাস -২২৫ টাকা- টিফিন বিল -৫০ টাকা- নাইট বিল -১০০ টাকা- সকল কারখানায় সমান হারে বাড়াতে হবে। সকল কারখানায় প্রভিডেন্ড ফান্ড ব্যবস্থা চালু। বেতনের বিপরীতে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ন্যূনতম ১০ শতাংশ করা। শ্রমিকদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা চালু। বিজিএমইএ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বায়োমেট্রিক ব্ল্যাকলিস্টিং করা যাবে না- বায়োমেট্রিক তালিকা সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে -বায়োমেট্রিক হল আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে কারখানায় প্রবেশাধিকার। আঙ্গুলের ছাপ গ্রহণ না করলে কারখানায় প্রবেশ করতে পারেন না কর্মীরা-। সকল প্রকার হয়রানিমূলক এবং রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার। ঝুট ব্যবসার আধিপত্য বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। কলকারখানায় বৈষম্যবিহীন নিয়োগ প্রদান করতে হবে -নারী-পুরুষ সমান হারে নিয়োগ-। জুলাই বিপ্লবে ‘শহীদ’ এবং আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত। রানা প্লাজা এবং তাজরীন ফ্যাশন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের কল্যাণে তদন্তান্তে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ। শ্রম আইন অনুযায়ী সকল কারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন।
অন্যায্যভাবে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ। নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ ১২০ দিন নির্ধারণ।
অপরদিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একাধিক কারখানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও শ্রমিকদের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে গত দুইদিনে -রোববার ও সোমবার- ২৪ জন শ্রমিককে গ্রেফতার করেছে যৌথ বাহিনী। বিষয়টি গাজীপুর শিল্প পুলিশের -জোন-২- পরিদর্শক নিতাই চন্দ্র সরকার নিশ্চিত করেছেন।