এস চাঙমা সত্যজিৎ
বিশেষ প্রতিনিধি।।
শাসকগোষ্ঠীর অন্যায় নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কাউন্সিলে অঙ্কন চাকমাকে সভাপতি ও অমল ত্রিপুরাকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত ২৪-২৫ মার্চ ২০২৩ খাগড়াছড়িতে দুই দিনব্যাপী পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ২৬তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)’র সংগঠক ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি অংগ্য মারমা। পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠীর পরিচালিত নিষ্ঠুর দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের জেলা-উপজেলার প্রতিনিধিসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক অংশ গ্রহণ করেন। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফ, ডিওয়াইএফ, শ্রমজীবী ফ্রন্ট (ইউডব্লিউডিএফ), হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের নেতৃবৃন্দ।
কাউন্সিলের ব্যানারের ছিল তিনটি প্রধান শ্লোগান “পার্বত্য চট্টগ্রামে বন পরিবেশ ধ্বংস, খনিজ সম্পদ লুন্ঠনের পায়ঁতারা ও ইসলামিকরণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোল! শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস নৈরাজ্য-গোয়েন্দা নজরদারি-সেনা খবরদারি চলবে না! নির্বিচারে ধরপাকড়, নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন, খুন-গুম ও হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা-হুলিয়া অব্যাহত ভূমি বেদখল ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ এক হও, রুখে দাঁড়াও”।
পিসিপি’র আপোষহীন সংগ্রামকে বিকশিত ও গতিশীল করতে হলে নতুন নেতৃত্বকেও গতিশীল হতে হবে বলে মন্তব্য করে অংগ্য মারমা বলেন, বিগত সময়ে পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত আপোষহীন সংগ্রামের কারণে সরকার ২০১৭ সালে স্ব স্ব মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করতে বাধ্য হয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে হলে ছাত্র যুবসমাজকে আরো দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুনয়ন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুনীল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র সাবেক সভাপতি ও ইউপিডিএফ সংগঠক বিপুল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা, ইউনাইটেড ওয়ার্কাস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের দপ্তর সম্পাদক সাবিনা চাকমা। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা।
পিসিপি’র সাবেক সভাপতি ও বর্তমান ইউপিডিএফ সংগঠক বিপুল চাকমা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা এবং উত্থান সহজ ছিল না। শাসকগোষ্ঠী ও জাতির দালাল-প্রতিক্রিয়াশীলদের নানা প্রতিবন্ধকতা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ তার নীতি আদর্শ সমুন্নত রেখেছে। ১৯৯৭ সালে ‘পার্বত্য চুক্তির’ সন্নিকটে পিসিপি কেন্দ্রীয় সম্মেলনের বিপরীতে ছাত্র সমাজের মধ্যে সুবিধাবাদী ও আপোষকামী অংশটি স্বায়ত্তশাসনের বিরোধিতা করে আপোষ চুক্তির পক্ষে অবস্থান নেয় এবং পিসিপি’র নাম ভাঙিয়ে পাহাড়ি ছাত্র সমাজকে বিভ্রান্ত, দ্বিধা-বিভক্ত করা হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বর্তমান নেতৃত্বে নানা দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা রয়েছে। নতুন নেতৃত্বকে সে সকল দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে তুলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে, ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করে শাসকগোষ্ঠীর অন্যায় দমন-পীড়ন, নির্যাতন, অব্যাহত ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন সকল ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে ।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ জাতীয় আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মন্তব্য করে বিপুল চাকমা বলেন, পিসিপি’র শুধুমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন হিসেবে আন্দোলন করছে তা নয়, দেশে ক্রিয়াশীল অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সাথে যৌথভাবে জাতীয় বিভিন্ন আন্দোলনে ভূমিকা পালন করছে । পাহাড়ের গণ্ডি পেরিয়ে পিসিপি জাতীয় পর্যায়ে ভাবমূর্তি ও সুনাম অর্জন করেছে। আগামীতেও পিসিপির নেতা-কর্মীকে যোগ্য ও দক্ষ হয়ে জাতীয় গুরু দায়িত্ব কাঁধে নিতে হবে।
কেন্দ্রীয় সভাপতি সুনয়ন চাকমা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ একটি গতিশীল সংগঠন। এই সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে নতুন নেতৃত্ব নব গতিতে ছাত্র সমাজকে আপোষহীন সংগ্রামের ধারায় যুক্ত করবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে লড়াইয়ের ইতিহাসে পিসিপি একটি ব্র্যান্ড। এই ব্র্যান্ডকে করায়ত্ত্ব করতে পিসিপি’র নাম ভাঙিয়ে অনেক ভুঁইফোড় সংগঠন বিতর্কিত কার্যক্রম চালাচ্ছে। পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াইয়ে আন্দোলনরত পিসিপি’র সাথে এদের পার্থক্য ত্যাগ আর সংগ্রামের। পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান সংকটে এসব সংগঠনকে চেনা গেছে।
তিনি বলেন, পূর্ণস্বায়ত্তশাসন অর্জনের লক্ষ্যে পিসিপি লড়াই সংগ্রাম করছে এ সংগ্রামে পিসিপি বিজয়ী হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত জনগণের বিজয় হবে, আর পরাজিত হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ পরাজিত হবে। তাই এই আপোষহীন মুলধারা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদে যুক্ত হওয়া সংগ্রামের ও গৌরবের।
হিল উইমেন্স ফেডারেশন সভাপতি নীতি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমান্ত সড়কের নামে বন-পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এই বছর ৮টির অধিক ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা ঘটনা ঘটেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে যৌন সন্ত্রাস চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই যৌন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে ছাত্র, যুবক ও নারী সমাজকে সংগ্রামে এগিয়ে আসতে হবে।
কাউন্সিলে প্রমোদ জ্যোতি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে সেনা ছাউনী দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। যাহাতে এ অঞ্চলে জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার অর্জন করেত না পারে।
তিনি বলেন, পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে অর্জিত হয়েছে। পাহাড়ি জনগণকেও প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে জাতির অধিকার অর্জন করতে হবে।