অরবিন্দ রায়
স্টাফ রিপোর্টার।।
নরসিংদীর মনোহরদী ঐতিহ্যবাহী হাতিরদীয়ার কলার হাট দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সপ্তাহে দুই দিন বসে এই কলার হাট। যেখানে প্রতি হাটে বিক্রি হয় ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার কলা। এ অঞ্চলের কলার সুনাম থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এখান থেকে কলা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। বিষমুক্ত এসব কলা বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে কৃষকরাও।
নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার দুরে হাতিরদীয়া বাজারে রোববার ও বুধবার বসে এ কলার হাট। প্রায় অর্ধশত বছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী কলার হাটে বিভিন্ন জাতের কলা বিক্রি করে আসছেন কৃষকরা। মনোহরদী উপজেলার হাতিরদীয়া, চালাকচর, গড়বাড়ি, মানিকপুর, সোলমানিয়াসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকরা তাদের বাগানের কলা এই হাটে এনে বিক্রি করে।
ভোর থেকে রিকশা ও ভ্যানে করে সাগর, চিনি চম্পা, সবরিসহ বিভিন্ন জাতের কলা এনে সারি সারি করে সাজিয়ে রাখা হয় এ হাটটিতে। এরপর বেপারিদের সাথে দর-কষাকষি করে কলা বিক্রি করতে হয় কৃষকদের। জাত ও আকার ভেদে এই হাটে কলার প্রতি কাঁদি বিক্রি হয় ৩ শ’ থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত। সকাল ৮টা থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত এই হাটে চলে কলা কেনাবেচা । যেখানে দুই ঘণ্টার এই হাটে বিক্রি হয় ১০ লাখ টাকার কলা।
হাটে কলা বিক্রেতাদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, তাদের পূর্বপুরুষদের আমল থেকে হাতিরদীয়ার এই হাটে কলা বিক্রি করে আসছে। দূর-দূরান্ত থেকে হাটে পাইকাররা কলা কিনতে আসায় কৃষকরা ভালো দামও পাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী এই কলার হাটটিতে হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হলেও হাটের জায়গা সংকুলান না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় অনেককেই। হাটটির ঐতিহ্য ধরে রাখতে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নতসহ হাটের আকার বাড়ানোর দাবি স্থানীয়দের।
হাটে কলা নিতে আসা এক ব্যাপারী জানান, তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে এই হাটে কলা কিনতে এসেছেন। সপ্তাহের দুই হাটেই তিনি এখান থেকে কলা কিনে ঢাকার বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করেন। হাটের পাশে সড়কটি প্রশস্ত হলে যাতায়াতে অনেকটা সুবিধা হতো।
নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর নরসিংদীতে ২ হাজার ৩শ’ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় জেলার বিখ্যাত অমৃত সাগর কলা। জেলার ছয়টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কলার আবাদ হয় মনোহরদী, শিবপুর ও পলাশ উপজেলায়। এ অঞ্চলের কলা বিষমুক্ত ও সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদা রয়েছে অনেক।
নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক দীপক কুমার দেব জানান, ঐতিহ্যবাহী এই হাট ছাড়াও জেলায় ছোটবড় আরও বেশ কয়েকটি কলার হাট রয়েছে। যেখানে বিক্রি হয় জেলার বিখ্যাত অমৃত সাগরসহ বিভিন্ন জাতের কলা। জেলার কলার আবাদ বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা করা যাচ্ছে।