Dhaka , Saturday, 1 November 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
বিপ্লবীর রক্তে রঞ্জিত চট্টগ্রামে লিখিত হয়েছে শোষণ ও বৈষম্য মুক্তির মহাকাব্য: মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন শ্রীপুরে বিএনপির ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ ও আলোচনা সভা কলমের পাশাপাশি কাস্তে হাতে: সংবাদকর্মী মিজানুর রহমানের কৃষিজীবনের নতুন যাত্রা রামু উপজেলা মহিলা দলের মাসিক সভা সম্পন্ন ঘুমধুমে টিভি টাওয়ার রাবার গাছে রোহিঙ্গা যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ বিএনপি ও ধানের শীষ প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে- রফিকুল ইসলাম রূপগঞ্জে বৃহত্তর হাটাব সমাজকল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে মাদক বিরোধী সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল তারেক রহমান যাকে ধানের শীষ প্রতীক দিবেন’ তাকেই বিজয় করতে হবে– খায়রুজ্জামান মধু ব্লাড ক্যানসারে ৪২ বছরেই চিরবিদায় হাইমচর থানার ওসি মহিউদ্দিন সুমন সোনারগাঁয়ে বিএনপির বিশাল জনসভা:মানবিক রাষ্ট্র গঠনে ঐক্যের ডাক তাছিনের চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব নিলেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল শার্শার বাগআঁচড়ায় বিএনপির কর্মি সমাবেশ মাদক কারবারিদের গ্রেফতারের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামে ফতুল্লায় মানববন্ধন — রাস্তা অবরোধ, প্রশাসনের কাছে তীব্র অভিযোগ নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড চালু ১২০০ কেজি অবৈধ সার জব্দ করেছে নগরকান্দা উপজেলা প্রশাসন।ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা।  লাইসেন্স না থাকায় ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা  পাঁচ বছরে ক্লাস না নিয়েই বেতন ভাতা নিচ্ছে ; অনিয়মে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জড়িয়ে থাকার অভিযোগ  আওয়ামীলীগ দেশের গনতন্ত্রকে হত্যা করেছে  : রুহুল কবির রিজভী শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করতে চাই: মনির হোসেন পাইকগাছায় উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী শফিকুল রাজধানী সবুজবাগ থেকে বিদেশি রিভলবারসহ গ্রেফতার দেশের তৃতীয় পায়রা বন্দর সংযোগ সড়ক প্রকল্পে সমন্বহীনতা। উন্নয়ন কাজে স্থবিরতায় হতাশ সচেতন মহল জোরপূর্বক স্ট্যাম্প নেওয়ার অভিযোগে বিতর্ক: পোকখালী ৩নং ওয়ার্ডের জনপ্রিয় মেম্বার সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হাসিনা রেহানা ও তাদের সন্তানরা মিলে ১১ বছরের বাজেট লুটপাট করেছে আবুল খায়ের ভূঁইয়া খুলনায় কার্যকর সাক্ষরতা ও ব্যবহারিক কর্মদক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন রূপগঞ্জে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদে ব্যবসায়ীর সংবাদ সম্মেলন আবারো ভাঙা হবে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে! পরিকল্পনাহীন উন্নয়নে অপচয় হাজার কোটি টাকা নগরকান্দায় আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত নোয়াখালীর সুবর্ণচরে পানিতে ডুবে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মৃত্যু “জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই”-গোলজার আহমদ হেলাল

ডজন মামলার আসামি সাজাপ্রাপ্ত হারুন ঘুরছে প্রকাশ্যে

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 04:33:28 pm, Tuesday, 21 March 2023
  • 60 বার পড়া হয়েছে

কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি।।

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার ডজন মামলার আসামি হারুন ওরফে বডিবিল্ডার হারুন প্রকাশ্যে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ এই আসামি ও তার চক্রের সদস্যদের নানামুখি ষড়যন্ত্র ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। হারুন ও তার অপরাধ চক্রের একাধিক সদস্য বেশ ক’বার গ্রেফতার হলেও আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে এসে আবারো শুরু করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক ব্যবসা।

জানা যায়, হারুনর রশিদ ওরফে বডিবিল্ডার হারুনের বাড়ি কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে। সে ওই এলাকার সর্দারনীপাড়ার মৃত সিদ্দিক আহমদ ও মৃত রহিমা বেগমের পুত্র। তার নানাবাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মিয়ানমার সীমান্তে।

সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় নানাবাড়ি হওয়ার সুযোগে বডিবিল্ডার হারুন ইয়াবা ট্যাবলেট পাচারসহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হারুন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলাসহ বিভিন্ন থানায় এক ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ডিএমপি’র মতিঝিল থানার মামলায় (নং- ৩৩ (১)২১) ৪ বছরের কারাদন্ডাদেশ ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব প্রয়াত জয়নাল আবেদিন বীর বিক্রম, চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী ও চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আনোয়ারের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে সিএমপি’র কোতোয়ালি থানায় মামলা (৭০/১৭) হয় হারুনের বিরুদ্ধে। আইসিটি আইনের ওই মামলার ৫৭ ধারায় ১০ বছরের কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত।

এছাড়াও বডিবিল্ডার হারুনের বিরুদ্ধে পটিয়া থানায় একটি (মামলা নং- ৬/০৫), সাতকানিয়া থানায় একটি (মামলা নং- ৩০/১৭) ও লোহাগাড়া থানায় ৫টি মামলা ( নং- ১৯/১৭, ২৩/১৭, ২৪/১৭, ৪৩/১৭ ও ৪ /১৪) রয়েছে। এগুলো ছাড়াও বিস্ফোরকদ্রব্য ও মাদকদ্রব্যের একাধিক মামলা রয়েছে কক্সবাজারের সীমান্তের থানাগুলোতে। বিশ্বস্ত একটি সূত্র বিষয়টি জানিয়েছে।

হারুনের নিজের এলাকা লোহাগাড়ায় খবর নিয়ে জানা গেছে, একসময়ের শিবির ক্যাডার হারুনের পুরো পরিবার ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক কারবারে জড়িত। তার ভাই মৌলভি দেলোয়ার জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত ও নাশকতা মামলার আসামি। লোহাগাড়া উপজেলা ছাড়াও কক্সবাজারের চকরিয়া, চট্টগ্রামের বাঁশখালি, সাতকানিয়া, পটিয়া ও নগরীর কোতোয়ালি থানায় বেশ ক’টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া মামলা রয়েছে রাজধানীর মতিঝিল এবং কোতোয়ালি থানায়ও। ২০০৫ সালে সরকারি বনাঞ্চলের কাঠচুরির অভিযোগে বন আইনের মামলা দিয়ে শুরু হয় দেলোয়ারের অপরাধ জগতে পা বাড়ানো। এরপর নাশকতা ছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগে মামলা হয় তার বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কথিত বডিবিল্ডার হারুন একজন চিহ্নিত প্রতারক ও ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর আক্রমণকারী, বিভিন্ন জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎকারী ও মাদকদ্রব্য কেনাবেচার একজন স্থানীয় গডফাদার। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর কিছু তদন্তাধীন ও বেশ ক’টা বিচারাধীন আছে। ২০১৭ সালের মে মাসে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার পুলিশ হারুনকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তার সহযোগীদের নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে লোহাগাড়া থানার পুলিশ হারুন ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়। এবিষয়ে উপপরিদর্শক (এসআই) মফিজুল ইসলাম বাদী হয়ে ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। মামলাটির এজাহারে এসআই মফিজ বলেন- আসামীগণ স্বীকার করেছেন যে, তারা আধুনগর সর্দারনী পাড়ার হারুন ওরফে বডি বিল্ডার হারুন, তার ভাই দেলোয়ার ও হেলালসহ অন্যরা রাত্রিকালীন খাওয়া-দাওয়া করে কোথায় ডাকাতি করা যায় তার পরিকল্পনা শেষে ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে লোহাগাড়া থানাধীন বড়হাতিয়া মগদিঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠের পূর্ব পাশে জমায়েত হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরো জানায়, পলাতক আসামি বডিবিল্ডার হারুন ও মিজানুর রহমান চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে আসছে।

শিবির ক্যাডার হারুন এতোটাই দুর্ধর্ষ যে, প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন সামরিক সচিব জয়নাল আবেদিন বীরবিক্রম, স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. আবুরেজা মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি সদস্য আনোয়ার কামালের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রচারের দুঃসাহস দেখায়। এবিষয়ে চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলার বাদী, লোহাগাড়া উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ফজলে এলাহী আরজু এজাহারে উল্লেখ করেন- বিবাদীগণ প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, অশ্লীল, মানহানিকর, কুরুচিপূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট, ফেসবুক ও ইলেকট্রনিক বিন্যাস প্রকাশ ও সম্প্রচার করার মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও মানহানি করেছে।

জানা গেছে, হারুন ও তার সহযোগীরা ২০১৭ সালেই চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানার তৎকালীন ওসির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার শুরু করে। এ ঘটনায় সেসময় ওই থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলার এজাহারে এসআই মো. জাকির শিকদার উল্লেখ করেন, আসামিরা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকে মিথ্যা, অশালীন, মানহানিকর ও কুরুচিপূর্ণ পোস্ট করে অফিসার ইনচার্জ লোহাগাড়া থানা তথা বাংলাদেশ পুলিশের সম্মানহানি করেছে। আসামীরা ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি থেকে প্রতিনিয়ত অশালীন, মিথ্যা, মানহানিকর ও কুরুচিপূর্ণ পোস্ট করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর ৫৭ (২) ধারার অপরাধ করায় তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়।

২০১৭ সালের আরেকটি মামলার বাদী পুলিশের এসআই মো. হেলাল খানের এজাহারের বর্ণনা থেকে জানা যায়, আনুমানিক ২টা ১৫ মিনিটের সময় বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলে আসামি দেলোয়ার হোসেন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পলায়নকালে আমাদের ওপর বল প্রয়োগসহ এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে আসামীরা পুলিশের উপর দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্রসহ আক্রমণ চালায়। সেসময় হারুনের হকিস্টিকের আঘাতে এসআই মো. ফখরুল ইসলামের বাম পায়ে প্রচন্ড আঘাত ও হাড় ভেঙ্গে যায়।

সন্ত্রসী হারুন ও তার সহযোগীরা বছর দুয়েক ধরে কক্সবাজার-চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে চাঁদাবাজি ও ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করে। এমনই একটি স্বনামধন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করার পর হারুনুর রশিদ শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের নানাভাবে হুমকি দেন এবং আরো ২ কোটি টাকা দাবি করেন। এই ঘটনার পর হারুন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন।

লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতিকুর রহমান জানান, হারুনের বিরুদ্ধে আদালতের পাঠানো গ্রেফতারী পরোয়ারা রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বিপ্লবীর রক্তে রঞ্জিত চট্টগ্রামে লিখিত হয়েছে শোষণ ও বৈষম্য মুক্তির মহাকাব্য: মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন

ডজন মামলার আসামি সাজাপ্রাপ্ত হারুন ঘুরছে প্রকাশ্যে

আপডেট সময় : 04:33:28 pm, Tuesday, 21 March 2023

কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি।।

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার ডজন মামলার আসামি হারুন ওরফে বডিবিল্ডার হারুন প্রকাশ্যে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ এই আসামি ও তার চক্রের সদস্যদের নানামুখি ষড়যন্ত্র ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। হারুন ও তার অপরাধ চক্রের একাধিক সদস্য বেশ ক’বার গ্রেফতার হলেও আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে এসে আবারো শুরু করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক ব্যবসা।

জানা যায়, হারুনর রশিদ ওরফে বডিবিল্ডার হারুনের বাড়ি কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে। সে ওই এলাকার সর্দারনীপাড়ার মৃত সিদ্দিক আহমদ ও মৃত রহিমা বেগমের পুত্র। তার নানাবাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মিয়ানমার সীমান্তে।

সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় নানাবাড়ি হওয়ার সুযোগে বডিবিল্ডার হারুন ইয়াবা ট্যাবলেট পাচারসহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হারুন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলাসহ বিভিন্ন থানায় এক ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ডিএমপি’র মতিঝিল থানার মামলায় (নং- ৩৩ (১)২১) ৪ বছরের কারাদন্ডাদেশ ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব প্রয়াত জয়নাল আবেদিন বীর বিক্রম, চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী ও চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আনোয়ারের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে সিএমপি’র কোতোয়ালি থানায় মামলা (৭০/১৭) হয় হারুনের বিরুদ্ধে। আইসিটি আইনের ওই মামলার ৫৭ ধারায় ১০ বছরের কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত।

এছাড়াও বডিবিল্ডার হারুনের বিরুদ্ধে পটিয়া থানায় একটি (মামলা নং- ৬/০৫), সাতকানিয়া থানায় একটি (মামলা নং- ৩০/১৭) ও লোহাগাড়া থানায় ৫টি মামলা ( নং- ১৯/১৭, ২৩/১৭, ২৪/১৭, ৪৩/১৭ ও ৪ /১৪) রয়েছে। এগুলো ছাড়াও বিস্ফোরকদ্রব্য ও মাদকদ্রব্যের একাধিক মামলা রয়েছে কক্সবাজারের সীমান্তের থানাগুলোতে। বিশ্বস্ত একটি সূত্র বিষয়টি জানিয়েছে।

হারুনের নিজের এলাকা লোহাগাড়ায় খবর নিয়ে জানা গেছে, একসময়ের শিবির ক্যাডার হারুনের পুরো পরিবার ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক কারবারে জড়িত। তার ভাই মৌলভি দেলোয়ার জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত ও নাশকতা মামলার আসামি। লোহাগাড়া উপজেলা ছাড়াও কক্সবাজারের চকরিয়া, চট্টগ্রামের বাঁশখালি, সাতকানিয়া, পটিয়া ও নগরীর কোতোয়ালি থানায় বেশ ক’টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া মামলা রয়েছে রাজধানীর মতিঝিল এবং কোতোয়ালি থানায়ও। ২০০৫ সালে সরকারি বনাঞ্চলের কাঠচুরির অভিযোগে বন আইনের মামলা দিয়ে শুরু হয় দেলোয়ারের অপরাধ জগতে পা বাড়ানো। এরপর নাশকতা ছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগে মামলা হয় তার বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কথিত বডিবিল্ডার হারুন একজন চিহ্নিত প্রতারক ও ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর আক্রমণকারী, বিভিন্ন জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎকারী ও মাদকদ্রব্য কেনাবেচার একজন স্থানীয় গডফাদার। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর কিছু তদন্তাধীন ও বেশ ক’টা বিচারাধীন আছে। ২০১৭ সালের মে মাসে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার পুলিশ হারুনকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তার সহযোগীদের নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে লোহাগাড়া থানার পুলিশ হারুন ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়। এবিষয়ে উপপরিদর্শক (এসআই) মফিজুল ইসলাম বাদী হয়ে ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। মামলাটির এজাহারে এসআই মফিজ বলেন- আসামীগণ স্বীকার করেছেন যে, তারা আধুনগর সর্দারনী পাড়ার হারুন ওরফে বডি বিল্ডার হারুন, তার ভাই দেলোয়ার ও হেলালসহ অন্যরা রাত্রিকালীন খাওয়া-দাওয়া করে কোথায় ডাকাতি করা যায় তার পরিকল্পনা শেষে ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে লোহাগাড়া থানাধীন বড়হাতিয়া মগদিঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠের পূর্ব পাশে জমায়েত হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরো জানায়, পলাতক আসামি বডিবিল্ডার হারুন ও মিজানুর রহমান চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে আসছে।

শিবির ক্যাডার হারুন এতোটাই দুর্ধর্ষ যে, প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন সামরিক সচিব জয়নাল আবেদিন বীরবিক্রম, স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. আবুরেজা মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি সদস্য আনোয়ার কামালের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রচারের দুঃসাহস দেখায়। এবিষয়ে চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলার বাদী, লোহাগাড়া উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ফজলে এলাহী আরজু এজাহারে উল্লেখ করেন- বিবাদীগণ প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, অশ্লীল, মানহানিকর, কুরুচিপূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট, ফেসবুক ও ইলেকট্রনিক বিন্যাস প্রকাশ ও সম্প্রচার করার মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও মানহানি করেছে।

জানা গেছে, হারুন ও তার সহযোগীরা ২০১৭ সালেই চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানার তৎকালীন ওসির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার শুরু করে। এ ঘটনায় সেসময় ওই থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলার এজাহারে এসআই মো. জাকির শিকদার উল্লেখ করেন, আসামিরা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকে মিথ্যা, অশালীন, মানহানিকর ও কুরুচিপূর্ণ পোস্ট করে অফিসার ইনচার্জ লোহাগাড়া থানা তথা বাংলাদেশ পুলিশের সম্মানহানি করেছে। আসামীরা ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি থেকে প্রতিনিয়ত অশালীন, মিথ্যা, মানহানিকর ও কুরুচিপূর্ণ পোস্ট করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর ৫৭ (২) ধারার অপরাধ করায় তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়।

২০১৭ সালের আরেকটি মামলার বাদী পুলিশের এসআই মো. হেলাল খানের এজাহারের বর্ণনা থেকে জানা যায়, আনুমানিক ২টা ১৫ মিনিটের সময় বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলে আসামি দেলোয়ার হোসেন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পলায়নকালে আমাদের ওপর বল প্রয়োগসহ এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে আসামীরা পুলিশের উপর দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্রসহ আক্রমণ চালায়। সেসময় হারুনের হকিস্টিকের আঘাতে এসআই মো. ফখরুল ইসলামের বাম পায়ে প্রচন্ড আঘাত ও হাড় ভেঙ্গে যায়।

সন্ত্রসী হারুন ও তার সহযোগীরা বছর দুয়েক ধরে কক্সবাজার-চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে চাঁদাবাজি ও ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করে। এমনই একটি স্বনামধন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করার পর হারুনুর রশিদ শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের নানাভাবে হুমকি দেন এবং আরো ২ কোটি টাকা দাবি করেন। এই ঘটনার পর হারুন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন।

লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতিকুর রহমান জানান, হারুনের বিরুদ্ধে আদালতের পাঠানো গ্রেফতারী পরোয়ারা রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।