
মোহাম্মদ কেফায়েত উল্লাহ
খাগড়াছড়ি থেকে।।
গত কয়দিনের টানা বৃষ্টিতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি। বিশেষত গতকাল দুপুরের পর থেকে শুরু হওয়া অবিরাম ভারী বর্ষণে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড় ধ্বস ও জলাবদ্ধতা দেখা দেয় প্রকটভাবে।
টানা বৃষ্টির ফলে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, মহালছড়ি ও দীঘিনালা উপজেলায় মারাত্মক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় এবং মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাপমারা এলাকায় খাগড়াছড়ি টু ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে। জলাবদ্ধতা ও পাহাড় ধ্বসের কারণে আন্ত:জেলা ও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে জেলা সদরের সাথে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাপমারা এলাকায় পাহাড় ধ্বসের কারণে রাত ১২ থেকে সকাল ০৯ টা পর্যন্ত খাগড়াছড়ি টু চট্টগ্রাম-ঢাকা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিলো। জেলার সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সহায়তায় যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করা হয়েছে ইতোমধ্যে।
এদিকে টানা বৃষ্টির ফলে জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। খাগড়াছড়ি পৌরসভার ৬ টি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে। খাগড়াছড়ি বাস টার্মিনাল- কলেজ পাড়া- খবং পুড়িয়া- বাঙ্গালকাঠি- মুসলিম পাড়া- মহিলা কলেজ সড়ক- বটতলী- গোলাবাড়ি-গঞ্জপাড়া- শান্তি নগর- মাস্টার পাড়া, মিলনপুর ও মধুপুর এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। জেলা সদরের চেঙ্গি নদীর কুল ঘেষে নিম্নাঞ্চল পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। সদর উপজেলার মাইসছড়ি ইউনিয়নের অনেক এলাকা ডুবে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
মাইনি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দীঘিনালা উপজেলার বোয়ালখালী- মেরুং- লংগুদু- বেতছড়ি- কবাখালিসহ অনেক এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে পর্যটন কেন্দ্র সাজেক ও বাঘাইছড়ি উপজেলা। পাহাড়ি ঢলের কারণে চেঙ্গি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত হয়েছে মহালছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল। ফলে রাঙ্গামাটির সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের। ঘরবন্ধী হয়ে পড়েছে জেলার কয়েক হাজার পরিবার।
খাগড়াছড়ি জেলার স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল থেকেই ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে তৎপরতা শুরু করে। এখনো সতর্কতা জারি করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ত্যাগ করে আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে।
খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপ সহকারী পরিচালক মোঃ জাকের হোসেন জানান- আমরা সব সময় প্রস্তুত আছি। গত রাত ১২ টার দিকে মাটিরাঙ্গার সাপমারা এলাকায় পাহাড় ধ্বসের খবর পেয়ে সকাল ৮ টা পর্যন্ত কাজ করেছি। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আমাদের ফায়ার সার্ভিসের টীম কাজ করে যাচ্ছেন।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়- পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকিতে থাকা এলাকার আশ্রয়কেন্দ্র গুলো প্রস্তুত রয়েছে।
শুকনো খাবার মজুদ রাখা আছে। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকির পাশাপাশি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
জেলা প্রশাসন- উপজেলা প্রশাসন ও মেয়রসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্লাবিত অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন।