Dhaka , Sunday, 8 December 2024
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের গাছ কর্তনের অভিযোগ গাছ জব্দ প্রশাসনের।। দুই দশকেও সংস্কার হয়নি রামগঞ্জ -লক্ষ্মীপুর  ওয়াপদা সড়ক।। পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় তিন ভুয়া র‌্যাব সদস্য গ্রেফতার।। পাঠ্যপুস্তক বিকৃত করে শিক্ষার্থীদের ভুল শিক্ষা দেয়া হয়েছে -ড. আব্দুল মঈন খান।। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে সিটিজেন্স ফোরামের শুভ উদ্বোধন করলেন সিএমপি কমিশনার।। রূপগঞ্জে আহত সাংবাদিককে দেখতে গেলেন কাজী মনির।।  হাতিয়া ছাত্র ফোরাম, ঢাকা’র নেতৃত্বে নাসিম-শাকিল।। সরাইল মুক্ত দিবস পালিত।। তিতাসে ইউনিক মডেল স্কুলে অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত।।  নোয়াখালীতে থানা থেকে লুট হওয়া ৫৭৬টি বুলেট উদ্ধার।। পাবনায় মেরিন একাডেমির ক্যাডেট পাসিং আউট প্যারেড সম্পন্ন।। মহিষমারী মধ্যপাড়ায় ইসলামী সুন্নী মহা সম্মেলন অনুষ্ঠিত।। ঘন কুয়াশার চাদরে ঠাকুরগাঁও বাড়ছে শীতজনিত দুর্ভোগ।। তিতাসে বিএনপির কর্মী সমাবেশে জনতার ঢল।। ভোলায় জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড অনুষ্ঠিত।। নোয়াখালীর কবিরহাটে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী খাল কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন।। জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খাল খনন কর্মসূচিকে পুনরুজ্জীবিত করার আহ্বান- চসিক মেয়র ডা.শাহাদাত হোসেন।। কিশোরগঞ্জে ছোট ভাইয়ের হাতে বড় ভাই খুন।। কৃষিবিদ শামীমের বিরুদ্ধে সংবাদের প্রতিবাদে মোংলায় বিক্ষোভ মিছিল।। রামগঞ্জে লায়ন্স ক্লাব বাংলাদেশের ত্রান বিতরণ।। সাধারণ মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে ব্যারিস্টার কায়সার কামালের অর্থায়নে নির্মিত ব্রীজ উদ্বোধন।। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সরাইল থানা ওসি’র  প্রশংসনীয় উদ্যোগ।। বরইকান্দি ও ২৮ নং ওয়ার্ড ফুটসাল টুর্নামেন্টের ট্রফি এবং জার্সি উন্মোচন।। রামগঞ্জে রতনপুর গুলবাগ যুব ফাউন্ডেশনের উদ্বোধন।। সিদ্ধিরগঞ্জে স্কুল ক্যাণ্টিনের ভাড়া আত্মসাত করেন ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা।। বেতাগীতে হোসনাবাদ ইউনিয়নে আলু লতা নিয়ে দ্বন্ধে ভাতিজার হাতে  চাচা মৃত্যু।। রূপগঞ্জ পূর্বাচলে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ২৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বক্তব্যে -শিক্ষা উপদেষ্টা।। ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশের সিরিজ হাত ছাড়া।। লক্ষ্মীপুরে পৃথক দুর্ঘটনায় কৃষক দল নেতাসহ ২ জনের মৃত্যু।। তিতাসে বিএনপির প্রস্তুতিসভা অনুষ্ঠিত।।

ঝালকাঠিতে জমজমাট ভাসমান আমড়ার হাট দেশের চাহিদা মিটিয়ে নৌপথে যাচ্ছে বিদেশে।।

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 05:21:04 am, Sunday, 13 October 2024
  • 22 বার পড়া হয়েছে

ঝালকাঠিতে জমজমাট ভাসমান আমড়ার হাট দেশের চাহিদা মিটিয়ে নৌপথে যাচ্ছে বিদেশে।।

মো. নাঈম হাসান ঈমন

ঝালকাঠি প্রতিনিধি।।

   

  

পুষ্টিগুণে ভরপুর- সুস্বাদু- টক-মিষ্টি ফল আমড়া। কাঁচা ও পাকা—দুই অবস্থায়ই ফলটি খাওয়ার উপযোগী। আশ্বিন ও কার্তিক মাসে পরিপক্ব আমড়া পাওয়া যায়। তবে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে এর বহুবিধ বাণিজ্যিক ব্যবহারও আছে- খাওয়ার সুযোগও হয় সারা বছর। ঝালকাঠির পেয়ারার সুখ্যাতি ছিল। এবার যোগ হলো আমড়ার নাম। জেলার ২ শতাধিক গ্রামে আমড়া গাছ লাগিয়ে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন সেখানকার চাষিরা। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই জমে উঠেছে ঝালকাঠির আমড়ার বাজার। ভিমরুলী ও আটঘর কুরিয়ানার ভাসমান হাটে এখন তাজা আমড়ার সমারোহ।

 

জেলার কৃত্তিপাশা ইউনিয়নজুড়ে দেখা গেছে আমড়ার চাষ। ভীমরুলি- শতদশকাঠি- খেজুরা- আতাকাঠিসহ প্রায় অর্ধশত গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে এখন আমড়া চাষ হয়। অন্য জেলার আমড়ার তুলনায় মিষ্টি হওয়ায় এই জেলার আমড়ার চাহিদা বাড়ছে। সারা দেশে এসব আমড়ার বিপুল চাহিদা রয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর অনেক পণ্যের মতো আমড়ারও ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে; যে কারণে অনেক শিক্ষিত ও বেকার যুবক চাকরির অপেক্ষায় না থেকে পৈতৃক বাগানের হাল ধরেছেন; যুক্ত হয়েছেন আমড়া চাষে। কেউ কেউ তাদের বাগানকে আরও সম্প্রসারণ করছেন। ফলে বাড়ছে উৎপাদনও। সব মিলিয়ে এসব আমড়া এখন ঝালকাঠি, পিরোজপুরসহ এই অঞ্চলের মানুষের আয়ের অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে; যা তাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা এনে দিচ্ছে।

 

ঝালকাঠি শহরতলির কীর্তিপাশা মোড় থেকে দুটি যাত্রীবাহী বাসের বাংকারে প্রতিদিন প্রায় অর্ধশতাধিক বস্তা আমড়া চট্টগ্রাম হয়ে নৌপথে যাচ্ছে বিদেশে। দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশেও যাচ্ছে ঝালকাঠির আমড়া, দাবি আমড়া চাষিদের। স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে- এ বছর আমড়ার ভালো ফলন হয়েছে। অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় এ জেলায় দিন দিন বাড়ছে আমড়ার চাষ।

 

জেলার মধ্যে ভিমরুলী গ্রামের ভাসমান হাটটি সবচেয়ে বড়। প্রতিবছর এখানে অস্থায়ী ডজনখানেক আড়তে চলে আমড়ার বেচাকেনা। প্রতিদিন ছোট ছোট নৌকায় করে আমড়া নিয়ে এই ভাসমান হাটে হাজির হন চাষিরা। আড়তদারেরা নৌকা থেকেই কিনে নেন আমড়া। সকাল ৮টার মধ্যে বাজার বসে, বেচাকেনা চলে দুপুর পর্যন্ত। ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা মণ দরে বেচাকেনা হচ্ছে। এরপর বাছাই করে বস্তা ও ক্যারেটে সাজিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যান পাইকারেরা- যা চলে যায় ঢাকাসহ সারা দেশে।

 

নৌকায় করে ভীমরুলি ভাসমান হাটে আমড়া নিয়ে যাচ্ছিলেন চাষি সবুজ হালদার ও মলয় হালদার। তারা বলেন, ১০ কাঠা জমিতে আমড়ার চাষ করেছেন। এ বছর ৫০ মণের বেশি আমড়া বিক্রির আশা করছেন। ঝালকাঠির আমড়া ভীমরুলি থেকে যায় ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে। এমনকি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশে। গুণ-মান ভালো বলেই এখানকার আমড়ার চাহিদা আছে সারাদেশে। যারা আমড়া কেনেন, সবাই চান এ অঞ্চলের আমড়া কিনতে। তবে প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের আরও সহযোগিতা দাবি করেছেন মলয় হালদার।

 

কথা হয় ভীমরুলির আরেক চাষি রিপন চৌধুরীর সাথে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে ১০ কাঠা জমি লিজ নিয়ে আমড়া গাছ লাগান এবার প্রায় ৫০ মণের বেশি আমড়া বিক্রি করেছেন। 

 

তিনি বলেন, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন মাস আমড়ার ভরা মৌসুম। তাই ওই সময়ে দামও ভালো থাকে। কিছু গাছে সারা বছর আমড়া ধরে। আফসোস করে তিনি বলেন, কুড়িয়ানা, আটঘর, ভীমরুলি, ডুমুরিয়া, বেতরায় বিপুল পরিমাণ আমড়া হয়। তবে সেসব সংগ্রহের মতো পর্যাপ্ত ব্যবসায়ী ও আড়তদারের অভাব রয়েছে। তৃণমূলে, অর্থাৎ বাগান থেকে সংগ্রহ করা আমড়া প্রথমদিকে ৩০০-৩৫০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। সেটা এখন সাড়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকার কাছাকাছি। পেয়ারার মতো দ্রুত পচনশীল নয় বিধায় আমড়া চাষে লাভ বেশি।

 

সদরের ডুমুরিয়া বাজার কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও বিপণনকেন্দ্রের পাইকার বিজয় রায় বলেন, এ বছর আমড়ার উৎপাদন মোটামুটি ভালো হলেও বন্যার কারণে আকার তুলনামূলক ছোট। বাজারদর সর্বনিম্ন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা প্রতি মণ।

 

ভীমরুলির আড়তদার লিটন বলেন, শ্রাবণ মাস শেষ হলেই আমড়ার ভরা মৌসুম। প্রতিদিন ৫০-৬০ মণ আমড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর যাচ্ছে বস্তা ভরে। দাম মণপ্রতি ৬০০-৮০০ টাকার মধ্যে। আড়তদাররা জানান, চট্টগ্রাম থেকে জাহাজে করে কাঁচা আমড়া ও প্রক্রিয়াজাত আমড়া ভারত ও আশপাশের দেশে যাচ্ছে। এ ছাড়া গত বছর থেকে এ অঞ্চলের আমড়া লন্ডনেও রপ্তানি হচ্ছে।

 

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. টিএম মেহেদী হাসান সানি বলেন, ‘আমড়ায় আছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি, এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাসসহ আনেক পুষ্টিগুণ। আঁশ থাকায় আমড়া হজমে সহায়তা করে। তাই মৌসুমে নিয়মিত আমড়া খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। কাঁচা তো বটেই, সরষে মাখা দিয়ে, রান্না করে ও মোরব্বা করেও আমড়া খাওয়া যায়।

 

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এ বছর ঝালকাঠিতে ৬০২ হেক্টর জমিতে আমড়ার চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি প্রায় ১২ টন আমড়া পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে জেলায় প্রায় সাড়ে ৬ হাজার টন আমড়া উৎপাদিত হবে। মৌসুমজুড়ে মোট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫ থেকে ১৭ কোটি টাকা। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এ জেলায় প্রতিবছরই বাড়ছে আমড়ার চাষ। এতে শিক্ষিত ও বেকার যুবসমাজের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

 

কৃষকদের প্রত্যাশা, সরকারিভাবে যদি সরাসরি আমড়া কেনা হয়, বড় ব্যবসায়ীরা যদি সেখান থেকে সরাসরি আমড়া নিয়ে যান, তাহলে আমড়ার ব্যবসাটা আরও বাড়তো। বিদেশে রপ্তানিও বাড়তো।

 

ছবির ক্যাপশনঃ ভিমরুলী গ্রামের এই ভাসমান হাটে প্রতিদিন নৌকায় করে আমড়া বেচাকেনা চলে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের গাছ কর্তনের অভিযোগ গাছ জব্দ প্রশাসনের।।

ঝালকাঠিতে জমজমাট ভাসমান আমড়ার হাট দেশের চাহিদা মিটিয়ে নৌপথে যাচ্ছে বিদেশে।।

আপডেট সময় : 05:21:04 am, Sunday, 13 October 2024

মো. নাঈম হাসান ঈমন

ঝালকাঠি প্রতিনিধি।।

   

  

পুষ্টিগুণে ভরপুর- সুস্বাদু- টক-মিষ্টি ফল আমড়া। কাঁচা ও পাকা—দুই অবস্থায়ই ফলটি খাওয়ার উপযোগী। আশ্বিন ও কার্তিক মাসে পরিপক্ব আমড়া পাওয়া যায়। তবে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে এর বহুবিধ বাণিজ্যিক ব্যবহারও আছে- খাওয়ার সুযোগও হয় সারা বছর। ঝালকাঠির পেয়ারার সুখ্যাতি ছিল। এবার যোগ হলো আমড়ার নাম। জেলার ২ শতাধিক গ্রামে আমড়া গাছ লাগিয়ে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন সেখানকার চাষিরা। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই জমে উঠেছে ঝালকাঠির আমড়ার বাজার। ভিমরুলী ও আটঘর কুরিয়ানার ভাসমান হাটে এখন তাজা আমড়ার সমারোহ।

 

জেলার কৃত্তিপাশা ইউনিয়নজুড়ে দেখা গেছে আমড়ার চাষ। ভীমরুলি- শতদশকাঠি- খেজুরা- আতাকাঠিসহ প্রায় অর্ধশত গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে এখন আমড়া চাষ হয়। অন্য জেলার আমড়ার তুলনায় মিষ্টি হওয়ায় এই জেলার আমড়ার চাহিদা বাড়ছে। সারা দেশে এসব আমড়ার বিপুল চাহিদা রয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর অনেক পণ্যের মতো আমড়ারও ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে; যে কারণে অনেক শিক্ষিত ও বেকার যুবক চাকরির অপেক্ষায় না থেকে পৈতৃক বাগানের হাল ধরেছেন; যুক্ত হয়েছেন আমড়া চাষে। কেউ কেউ তাদের বাগানকে আরও সম্প্রসারণ করছেন। ফলে বাড়ছে উৎপাদনও। সব মিলিয়ে এসব আমড়া এখন ঝালকাঠি, পিরোজপুরসহ এই অঞ্চলের মানুষের আয়ের অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে; যা তাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা এনে দিচ্ছে।

 

ঝালকাঠি শহরতলির কীর্তিপাশা মোড় থেকে দুটি যাত্রীবাহী বাসের বাংকারে প্রতিদিন প্রায় অর্ধশতাধিক বস্তা আমড়া চট্টগ্রাম হয়ে নৌপথে যাচ্ছে বিদেশে। দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশেও যাচ্ছে ঝালকাঠির আমড়া, দাবি আমড়া চাষিদের। স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে- এ বছর আমড়ার ভালো ফলন হয়েছে। অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় এ জেলায় দিন দিন বাড়ছে আমড়ার চাষ।

 

জেলার মধ্যে ভিমরুলী গ্রামের ভাসমান হাটটি সবচেয়ে বড়। প্রতিবছর এখানে অস্থায়ী ডজনখানেক আড়তে চলে আমড়ার বেচাকেনা। প্রতিদিন ছোট ছোট নৌকায় করে আমড়া নিয়ে এই ভাসমান হাটে হাজির হন চাষিরা। আড়তদারেরা নৌকা থেকেই কিনে নেন আমড়া। সকাল ৮টার মধ্যে বাজার বসে, বেচাকেনা চলে দুপুর পর্যন্ত। ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা মণ দরে বেচাকেনা হচ্ছে। এরপর বাছাই করে বস্তা ও ক্যারেটে সাজিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যান পাইকারেরা- যা চলে যায় ঢাকাসহ সারা দেশে।

 

নৌকায় করে ভীমরুলি ভাসমান হাটে আমড়া নিয়ে যাচ্ছিলেন চাষি সবুজ হালদার ও মলয় হালদার। তারা বলেন, ১০ কাঠা জমিতে আমড়ার চাষ করেছেন। এ বছর ৫০ মণের বেশি আমড়া বিক্রির আশা করছেন। ঝালকাঠির আমড়া ভীমরুলি থেকে যায় ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে। এমনকি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশে। গুণ-মান ভালো বলেই এখানকার আমড়ার চাহিদা আছে সারাদেশে। যারা আমড়া কেনেন, সবাই চান এ অঞ্চলের আমড়া কিনতে। তবে প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের আরও সহযোগিতা দাবি করেছেন মলয় হালদার।

 

কথা হয় ভীমরুলির আরেক চাষি রিপন চৌধুরীর সাথে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে ১০ কাঠা জমি লিজ নিয়ে আমড়া গাছ লাগান এবার প্রায় ৫০ মণের বেশি আমড়া বিক্রি করেছেন। 

 

তিনি বলেন, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন মাস আমড়ার ভরা মৌসুম। তাই ওই সময়ে দামও ভালো থাকে। কিছু গাছে সারা বছর আমড়া ধরে। আফসোস করে তিনি বলেন, কুড়িয়ানা, আটঘর, ভীমরুলি, ডুমুরিয়া, বেতরায় বিপুল পরিমাণ আমড়া হয়। তবে সেসব সংগ্রহের মতো পর্যাপ্ত ব্যবসায়ী ও আড়তদারের অভাব রয়েছে। তৃণমূলে, অর্থাৎ বাগান থেকে সংগ্রহ করা আমড়া প্রথমদিকে ৩০০-৩৫০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। সেটা এখন সাড়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকার কাছাকাছি। পেয়ারার মতো দ্রুত পচনশীল নয় বিধায় আমড়া চাষে লাভ বেশি।

 

সদরের ডুমুরিয়া বাজার কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও বিপণনকেন্দ্রের পাইকার বিজয় রায় বলেন, এ বছর আমড়ার উৎপাদন মোটামুটি ভালো হলেও বন্যার কারণে আকার তুলনামূলক ছোট। বাজারদর সর্বনিম্ন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা প্রতি মণ।

 

ভীমরুলির আড়তদার লিটন বলেন, শ্রাবণ মাস শেষ হলেই আমড়ার ভরা মৌসুম। প্রতিদিন ৫০-৬০ মণ আমড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর যাচ্ছে বস্তা ভরে। দাম মণপ্রতি ৬০০-৮০০ টাকার মধ্যে। আড়তদাররা জানান, চট্টগ্রাম থেকে জাহাজে করে কাঁচা আমড়া ও প্রক্রিয়াজাত আমড়া ভারত ও আশপাশের দেশে যাচ্ছে। এ ছাড়া গত বছর থেকে এ অঞ্চলের আমড়া লন্ডনেও রপ্তানি হচ্ছে।

 

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. টিএম মেহেদী হাসান সানি বলেন, ‘আমড়ায় আছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি, এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাসসহ আনেক পুষ্টিগুণ। আঁশ থাকায় আমড়া হজমে সহায়তা করে। তাই মৌসুমে নিয়মিত আমড়া খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। কাঁচা তো বটেই, সরষে মাখা দিয়ে, রান্না করে ও মোরব্বা করেও আমড়া খাওয়া যায়।

 

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এ বছর ঝালকাঠিতে ৬০২ হেক্টর জমিতে আমড়ার চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি প্রায় ১২ টন আমড়া পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে জেলায় প্রায় সাড়ে ৬ হাজার টন আমড়া উৎপাদিত হবে। মৌসুমজুড়ে মোট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫ থেকে ১৭ কোটি টাকা। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এ জেলায় প্রতিবছরই বাড়ছে আমড়ার চাষ। এতে শিক্ষিত ও বেকার যুবসমাজের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

 

কৃষকদের প্রত্যাশা, সরকারিভাবে যদি সরাসরি আমড়া কেনা হয়, বড় ব্যবসায়ীরা যদি সেখান থেকে সরাসরি আমড়া নিয়ে যান, তাহলে আমড়ার ব্যবসাটা আরও বাড়তো। বিদেশে রপ্তানিও বাড়তো।

 

ছবির ক্যাপশনঃ ভিমরুলী গ্রামের এই ভাসমান হাটে প্রতিদিন নৌকায় করে আমড়া বেচাকেনা চলে।