
তৌহিদ বেলাল।।
চরম উদ্বেগ, উৎকন্ঠা আর আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করেছে উপকূলবাসী। সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারা সারারাত ইবাদাত ও তাসবি-তাহলিলের পাশাপাশি শেষরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে আল্লাহর দরবারে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে বিশেষ মোনাজাত করেছেন। এসময় তাদের আহাজারিতে দ্বীপে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
দ্বীপের বাসিন্দা শামসুল আলম বলেন- ‘আতঙ্কে সারারাত ঘুমুতে পারিনি। পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চরম উৎকন্ঠায় সময় পার করছি’।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন- ‘দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য শনিবার রাত ছিলো অতি আতঙ্কের। ধারণা করা হয়েছিলো, রাতেই ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানবে’।
আশ্রয়কেন্দ্রে দুই লাখ মানুষ:
ঘূর্ণিঝড় মোখা’র প্রভার থেকে জানমাল রক্ষায় কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার উপকূলীয় লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যাচ্ছেন। শনিবার রাত দশটা পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র সমুহে আশ্রয় নিয়েছেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, কক্সবাজার জেলায় ৬৩৬ আশ্রয়কেন্দ্রে শনিবার রাত দশটা পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলার টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালি, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলাতে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। উপকূল ও দুর্গত এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য অন্তত ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কাজ করছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা পাঁচ লাখেরও বেশি। এছাড়া প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি কাজ করছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য ১০ লাখ ৩০ হাজার নগদ টাকা, ৪৯০ মেট্রিক টন চাল, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন, ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন- ‘দুর্যোগকালীন লোকজনকে সার্বিক সহযোগিতা ও তাদের নিরাপত্তা দিতে জেলার প্রতিটি থানার পুলিশ কাজ করছে’।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান বলেন- ‘রোববার সকাল নয়টা থেকে বিকেল তিনটার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা উপকূলে আঘাত হানবে’।
৬৮ হোটেলকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা:
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে রক্ষায় এগিয়ে এসেছে কক্সবাজারের আবাসিক হোটেল মালিকেরা। কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনে অবস্থিত ‘হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির’ পক্ষ থেকে ৬৮টি হোটেলকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান। তিনি বলেন, দুর্যোগকালীন সময় হোটেল মালিকরা এগিয়ে এসেছেন।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাসেম সিকদার বলেন- ‘কক্সবাজারে দুর্যোগপূর্ণ সময়ের কথা বিবেচনা করে আমরা ৬৮টি হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি’।
আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হোটেল-মোটেলগুলো হলো সাফিয়া রিসোর্ট, ডায়মন্ড প্যালেস গেস্ট হাউস, অ্যালবাট্রস রিসোর্ট, সি-সান রিসোর্ট, গ্যালাক্সি রিসোর্ট, হোটেল সি পার্ক, মোহাম্মদিয়া গেস্ট হাউস, সি-পয়েন্ট রিসোর্ট, সি আরাফাত রিসোর্ট, মাসকট হলিডে রিসোর্ট, আমারি রিসোর্ট, কোয়ালিটি হোম, ওয়েলপার্ক রিসোর্ট, লেমিচ রিসোর্ট, জিয়া গেস্ট ইন, জিয়া গেস্ট হাউস, কক্স ইন, সি ল্যান্ড গেস্ট হাউস, লাইট হাউস ফ্যামেলি রিট্রিট, হক গেস্ট ইন, হানিমুন রিসোর্ট, হোটেল কোস্টাল পিস, শামীম গেস্ট হাউস, সি-কক্স রিসোর্ট, হোটেল সি আলিফ, বিচ হলিডে গেস্ট হাউস, কক্স হিটলন লিমিটেড. এআর গেস্ট হাউস, ব্লু-ওশান গেস্ট হাউস, সিলিকন শাকিরা বে রিসোর্ট, হোটেল এবি গার্ডেন, সোহাগ গেস্ট হাউস, পারসেম ইন সাইট, হোটেল কোরাল রিফ, আলম গেস্ট হাউস, কক্স ভিউ রিসোর্ট, ক্যাসেল বেটাস, হোটেল বে মেরিনা, হোটেল অস্টার ইকো, উর্মি গেস্ট হাউস, ইউনি রিসোর্ট, হোটেল ওশান ভ্যালি, রিসোর্ট বিচ ভিউ, সি-নাইট রিসোর্ট, বে-ভিউ গেস্ট হাউস, হোটেল প্রাইম পার্ক, রিগ্যাল প্যালেস, ডায়নামিক এসএইচ রিসোর্ট, আরএম গেস্ট হাউস, গ্রান্ড বিচ রিসোর্ট, ওলেপিয়া বিচ রিসোর্ট, সি-কিং, গোল্ডেন হিল, স্বপ্নালয় অ্যাপার্টমেন্ট, সি ওয়েলকাম ইত্যাদি