Dhaka , Sunday, 22 June 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
রাস্তার অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করায় সাংবাদিকদের মে’রে ফেলার হু’মকি দিলেন চেয়ারম্যান ২৫ কুড়িগ্রাম ১ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী জনসেবায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ডা. ইউনুছ আলী লালমনিরহাটে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লক্ষাধিক খেজুর বীজ রোপণ কর্মসূচি  বিশ্ব সঙ্গীত দিবস উপলক্ষে গোপালপুরে জাসাসের সঙ্গীত সন্ধ্যা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় বিদ্যু’ৎস্পৃ’ষ্ট হয়ে গৃহবধূর মৃ’ত্যু টেলিগ্রামে প্রে’ম: নোয়াখালীর মাদরাসা ছা’ত্রীকে পতিতালয়ে বি’ক্রি সদরপুরে স্ত্রীর মা’মলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আ’টক পাইকগাছায় তিন দিনব্যাপী ফল মেলার সমাপনী অনুষ্ঠিত  স্কটিশ পার্লামেন্ট‌ে একটি সর্বদলীয় ঈদুল আজহার অভ্যর্থনা অনু‌ষ্ঠিত হাবিবুল হক শিক্ষা তহবিলের সহযোগিতায় মিশুক বিশ্বাসের স্বপ্নযাত্রা লালমনিরহাটে পুলিশের পৃথক অভিযানে ১২.৫ কেজি গাঁ’জাসহ গ্রে’প্তার ৩ তারেক রহমানের ৩১ দফা বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির সনদ – এস এম জিলানী চাঁ’দাবা’জ স’ন্ত্রাসী’দের কবল থেকে রক্ষার দাবি এলাকাবাসীর রূপগঞ্জে ওলামা দলের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত  রংপুর থেকে ২০ কেজি গাঁ’জাসহ লালমনিরহাটের দুই মা’দক কারবারি গ্রে’প্তার  নোয়াখালীতে চো’রকে চিনে ফেলায় না’রীকে জ’বাই করে হ’ত্যা,গ্রে’প্তার-২ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন মা’মলার যুবলীগ নেতা রবিন গ্রে’ফতা’র কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী ৩২ বছরের ছমির এখনো শিশু, দু’শ্চি’ন্তায় পরিবার আশুলিয়ায় না’রী যা’ত্রীকে জি’ম্মি করে ছি’নতাই, গ্রে’প্তার ২ নাটোরে বাস-সিএনজি সং’ঘ’র্ষে জাবি শিক্ষার্থীসহ নি’হত ৪ উখিয়ায় একসাথে চার স’ন্তান জ’ন্ম দু’দিনের ব্যবধানে এ’কে এ’কে মৃ’ত্যু মোংলায় কবি রুদ্রের প্রয়াণ দিবসে শোক র‌্যালি লালমনিরহাটের একজন মা’দক কা’রবা’রি গ্রে’প্তার করেছে ডিবি এসএমপি ডিবির পৃথক অভিযানে আ’বাসিক হোটেলে অ’নৈতি’ক কাজে জ’ড়িত থাকার অ’ভিযো’গে ১০ (দশ) জন গ্রে’ফতার নলছিটিতে জমি বি’রোধে শি’ক্ষিকাকে মা’রধ’র, মা’মলা করার পর পরিবারকে হ’ত্যার হু’মকি রাজাপুরে জমি সং’ক্রা’ন্ত বি’রো’ধের জেরে হা’মলা, থা’নায় জি’ডি সড়কের দু’পাশ দ’খলে নিয়ে চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করায় ভ্রাম্যমাণ আ’দালতের জ’রিমা’না নোয়াখালীতে সিঁধ কে’টে ঘরে ঢুকে বৃদ্ধা না’রীকে গ’লা কে’টে হ’ত্যা রাজাপুরে জমি দ’খলে’র চেষ্টার অভিযোগ, হা’মলার ঘট’নায় উত্তেজনা আগামী নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু হবে, যৌক্তিক সময়েই হবে : পাবনায় রিজভী

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষের এ. জি. এম. সেলিম আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 11:27:48 am, Saturday, 24 May 2025
  • 13 বার পড়া হয়েছে

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষের এ. জি. এম. সেলিম আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি 
শৃঙ্খলাভঙ্গের পুরনো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি “দায়িত্ব নয়, দম্ভই পেশা এ. জি. এম. সেলিম সিডিএ’র ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত প্রকৌশলী। চেয়ারম্যানকে গালিগালাজ, সহকর্মীদের হেনস্তা, নির্বাহী প্রকৌশলী এ. জি. এম. সেলিম’র লাগামহীন আচরণ চেয়ারম্যানের কক্ষে চিৎকার-গালাগালি ফের আলোচনায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)-এর নির্বাহী প্রকৌশলী এ. জি. এম. সেলিমকে ঘিরে যেন বিতর্কের আগুন কখনোই পুরোপুরি নিভে না।
যিনি ২০০৭ সালে প্রশাসন বিরোধী কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। তিনিই আবার পুরোনো ছকেই ফিরে এসেছেন নতুন আলোচনার কেন্দ্রে। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো আর কেবল একটি কর্মকর্তার ব্যক্তিগত দুর্বলতার পরিচায়ক নয়-এগুলো এখন চউকের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ, শৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক কাঠামোর ওপর সরাসরি আঘাত হানছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
২০০৭ সালের ১১ জুলাই চউক বোর্ড সভায় গৃহীত একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূচনা ঘটে, যেখানে দু’সহকারী প্রকৌশলীকে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নেন এ. জি. এম. সেলিম এবং একাধিক দরখাস্তে চউক বোর্ডের সমালোচনা করে তা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেন। এরপর থেকেই শুরু হয় অনৈতিক চাপ প্রয়োগের ধারাবাহিকতা। নিজের পছন্দমতো পদোন্নতি আদায়ের অপচেষ্টা, বিধিবিধান উপেক্ষা করে প্রশাসনকে বেঁধে ফেলার কৌশল এবং বারবার কর্তৃপক্ষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা, যা চউকের চাকরি প্রবিধানমালার একাধিক ধারার সরাসরি লঙ্ঘন।
তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন মজুমদারকে টেলিফোনে হুমকি দেওয়া, অফিসে তালা লাগিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকৌশলীকে দায়িত্ব গ্রহণে বাধা দেওয়া এবং কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া থানায় ডায়েরি করে সহকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দাখিল। এই সকল কর্মকাণ্ডের জন্য চউক ২০০৭ সালে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করলেও, প্রশ্ন থেকে যায় – এই শাস্তি কি আদৌ তার আচরণে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছিল? উত্তর বেশিরভাগ চউক কর্মকর্তার কাছেই পরিষ্কার না। বরং বরখাস্তের পরও তিনি আরও বেপরোয়া ও দম্ভিত হয়ে ওঠেন। তার আচরণ এতটাই আগ্রাসী রূপ নেয় যে, সহকর্মীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত হয়ে পড়েন।
পরবর্তীতে, ২০১৩ সালে চউকের তৎকালীন চেয়ারম্যানের সাথে দুর্ব্যবহারের কারণে তাকে শাস্তিস্বরূপ রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে বদলি করা হয়। কিন্তু তাতেও পরিবর্তন আসেনি তার আচরণে। এরপর ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর, রবিবার সকালে, সচিব ও চউক এর উদ্বোধন কর্মকর্তাগণের উপস্থিতিতে এক নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ্যে অবমাননাকর ভাষায় আক্রমণ করেন। ২৫ বছরের চাকরি জীবনে তিনি কখনো প্রকৌশল সংক্রান্ত কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেননি। দায়িত্ব প্রদান করা হলে তিনি বিভিন্ন অজুহাতে তা এড়িয়ে যেতেন এবং বেশিরভাগ সময় কর্মবিহীন অবস্থায় বেতন গ্রহণ করতেন।
সবশেষে, ২০২৫ সালের ১৪ মার্চ তিনি চউকের সম্মানিত চেয়ারম্যানের কক্ষে প্রবেশ করে উচ্চস্বরে দুর্ব্যবহার ও অশোভন আচরণ করেন, যা কেবল নীতিমালার লঙ্ঘন নয়, বরং একটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি চূড়ান্ত অবমাননা হিসেবেই বিবেচিত। এরপর যখন এই আচরণের প্রেক্ষিতে চউক থেকে একটি শৃঙ্খলা বিষয়ক অফিস আদেশ জারি করা হয়, তখন তিনি চেয়ারম্যানের কক্ষে প্রবেশ করে চেয়ারম্যান এর সাথে অসৌজন্যমুলক এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও উচ্চস্বরে বাকবিতণ্ডা করেন। এই ঘটনায় উপস্থিত ছিলেন চউকের সচিব এবং একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, যারা প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তার অকথ্য গালাগালির। এছাড়াও, তিনি প্রায় সময়ই চউকের চেয়ারম্যান, সচিব ও প্রধান প্রকৌশলী সহ সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে সবসময়ই অমার্জনীয় ব্যবহার করেন।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিয়মিতভাবে অন্যান্য প্রকৌশলী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপর অশোভন ভাষা প্রয়োগ, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করেন, যার ফলে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম বারবার ব্যাহত হচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে, যেখানে দাফতরিক দায়িত্বে গাফিলতি, শীর্ষ কর্মকর্তার নির্দেশ অমান্য, সহকর্মীদের হেনস্তা এবং প্রশাসনিক দুর্ব্যবহার সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
২০২৫ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর চউকের অভ্যন্তরে যখন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নতুন প্রত্যাশা তৈরি হয়, তখন এ. জি. এম. সেলিম উল্টো সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে ইমারত নির্মাণ কমিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষমতাধর পদ নিজের দখলে নিয়ে নেন।
সবচেয়ে বড় উদ্বেগজনক বিষয় হলো, চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী চলতি দায়িত্ব কেবল স্থায়ী পদের বিপরীতে প্রদান করা যায়। অথচ তিনি বর্তমানে ইমারত নির্মাণ কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যা ভবিষ্যতে চউককে আইনগত জটিলতায় ফেলতে পারে। তাঁর লাগামহীন আচরণ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, চউকের সম্মানিত চেয়ারম্যানও তা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে। একজন নির্বাহী প্রকৌশলীর সীমা ছাড়িয়ে যখন তার আচরণ পুরো প্রতিষ্ঠানের ওপর ছায়া ফেলে, তখন তা কেবল ব্যক্তিগত নয় প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ।
সব মিলিয়ে, একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তার অবস্থান আর কতটা গ্রহণযোগ্য তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন উঠেছে। যে প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম শহরের অবকাঠামো উন্নয়ন, নগর পরিকল্পনা ও জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট হাজারো প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত, সেই প্রতিষ্ঠান যদি একজন কর্মকর্তার অনিয়ন্ত্রিত আচরণ, দম্ভ ও প্রশাসনবিরোধী মানসিকতার কারণে বারবার বিপর্যস্ত হয়, তাহলে কেবল দপ্তরের কার্যক্রম নয়- প্রভাব পড়বে শহরের উন্নয়ন পরিকল্পনার উপরও।
তাই প্রশাসনের ভেতর থেকেই দাবি উঠছে, প্রতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা, কাজের পরিবেশ ও সুষ্ঠু প্রশাসনিক কাঠামো বজায় রাখতে হলে এই ধরনের অসদাচরণবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

রাস্তার অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করায় সাংবাদিকদের মে’রে ফেলার হু’মকি দিলেন চেয়ারম্যান

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষের এ. জি. এম. সেলিম আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে

আপডেট সময় : 11:27:48 am, Saturday, 24 May 2025
চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি 
শৃঙ্খলাভঙ্গের পুরনো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি “দায়িত্ব নয়, দম্ভই পেশা এ. জি. এম. সেলিম সিডিএ’র ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত প্রকৌশলী। চেয়ারম্যানকে গালিগালাজ, সহকর্মীদের হেনস্তা, নির্বাহী প্রকৌশলী এ. জি. এম. সেলিম’র লাগামহীন আচরণ চেয়ারম্যানের কক্ষে চিৎকার-গালাগালি ফের আলোচনায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)-এর নির্বাহী প্রকৌশলী এ. জি. এম. সেলিমকে ঘিরে যেন বিতর্কের আগুন কখনোই পুরোপুরি নিভে না।
যিনি ২০০৭ সালে প্রশাসন বিরোধী কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। তিনিই আবার পুরোনো ছকেই ফিরে এসেছেন নতুন আলোচনার কেন্দ্রে। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো আর কেবল একটি কর্মকর্তার ব্যক্তিগত দুর্বলতার পরিচায়ক নয়-এগুলো এখন চউকের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ, শৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক কাঠামোর ওপর সরাসরি আঘাত হানছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
২০০৭ সালের ১১ জুলাই চউক বোর্ড সভায় গৃহীত একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূচনা ঘটে, যেখানে দু’সহকারী প্রকৌশলীকে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নেন এ. জি. এম. সেলিম এবং একাধিক দরখাস্তে চউক বোর্ডের সমালোচনা করে তা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেন। এরপর থেকেই শুরু হয় অনৈতিক চাপ প্রয়োগের ধারাবাহিকতা। নিজের পছন্দমতো পদোন্নতি আদায়ের অপচেষ্টা, বিধিবিধান উপেক্ষা করে প্রশাসনকে বেঁধে ফেলার কৌশল এবং বারবার কর্তৃপক্ষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা, যা চউকের চাকরি প্রবিধানমালার একাধিক ধারার সরাসরি লঙ্ঘন।
তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন মজুমদারকে টেলিফোনে হুমকি দেওয়া, অফিসে তালা লাগিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকৌশলীকে দায়িত্ব গ্রহণে বাধা দেওয়া এবং কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া থানায় ডায়েরি করে সহকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দাখিল। এই সকল কর্মকাণ্ডের জন্য চউক ২০০৭ সালে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করলেও, প্রশ্ন থেকে যায় – এই শাস্তি কি আদৌ তার আচরণে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছিল? উত্তর বেশিরভাগ চউক কর্মকর্তার কাছেই পরিষ্কার না। বরং বরখাস্তের পরও তিনি আরও বেপরোয়া ও দম্ভিত হয়ে ওঠেন। তার আচরণ এতটাই আগ্রাসী রূপ নেয় যে, সহকর্মীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত হয়ে পড়েন।
পরবর্তীতে, ২০১৩ সালে চউকের তৎকালীন চেয়ারম্যানের সাথে দুর্ব্যবহারের কারণে তাকে শাস্তিস্বরূপ রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে বদলি করা হয়। কিন্তু তাতেও পরিবর্তন আসেনি তার আচরণে। এরপর ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর, রবিবার সকালে, সচিব ও চউক এর উদ্বোধন কর্মকর্তাগণের উপস্থিতিতে এক নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ্যে অবমাননাকর ভাষায় আক্রমণ করেন। ২৫ বছরের চাকরি জীবনে তিনি কখনো প্রকৌশল সংক্রান্ত কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেননি। দায়িত্ব প্রদান করা হলে তিনি বিভিন্ন অজুহাতে তা এড়িয়ে যেতেন এবং বেশিরভাগ সময় কর্মবিহীন অবস্থায় বেতন গ্রহণ করতেন।
সবশেষে, ২০২৫ সালের ১৪ মার্চ তিনি চউকের সম্মানিত চেয়ারম্যানের কক্ষে প্রবেশ করে উচ্চস্বরে দুর্ব্যবহার ও অশোভন আচরণ করেন, যা কেবল নীতিমালার লঙ্ঘন নয়, বরং একটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি চূড়ান্ত অবমাননা হিসেবেই বিবেচিত। এরপর যখন এই আচরণের প্রেক্ষিতে চউক থেকে একটি শৃঙ্খলা বিষয়ক অফিস আদেশ জারি করা হয়, তখন তিনি চেয়ারম্যানের কক্ষে প্রবেশ করে চেয়ারম্যান এর সাথে অসৌজন্যমুলক এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও উচ্চস্বরে বাকবিতণ্ডা করেন। এই ঘটনায় উপস্থিত ছিলেন চউকের সচিব এবং একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, যারা প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তার অকথ্য গালাগালির। এছাড়াও, তিনি প্রায় সময়ই চউকের চেয়ারম্যান, সচিব ও প্রধান প্রকৌশলী সহ সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে সবসময়ই অমার্জনীয় ব্যবহার করেন।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিয়মিতভাবে অন্যান্য প্রকৌশলী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপর অশোভন ভাষা প্রয়োগ, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করেন, যার ফলে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম বারবার ব্যাহত হচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে, যেখানে দাফতরিক দায়িত্বে গাফিলতি, শীর্ষ কর্মকর্তার নির্দেশ অমান্য, সহকর্মীদের হেনস্তা এবং প্রশাসনিক দুর্ব্যবহার সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
২০২৫ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর চউকের অভ্যন্তরে যখন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নতুন প্রত্যাশা তৈরি হয়, তখন এ. জি. এম. সেলিম উল্টো সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে ইমারত নির্মাণ কমিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষমতাধর পদ নিজের দখলে নিয়ে নেন।
সবচেয়ে বড় উদ্বেগজনক বিষয় হলো, চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী চলতি দায়িত্ব কেবল স্থায়ী পদের বিপরীতে প্রদান করা যায়। অথচ তিনি বর্তমানে ইমারত নির্মাণ কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যা ভবিষ্যতে চউককে আইনগত জটিলতায় ফেলতে পারে। তাঁর লাগামহীন আচরণ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, চউকের সম্মানিত চেয়ারম্যানও তা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে। একজন নির্বাহী প্রকৌশলীর সীমা ছাড়িয়ে যখন তার আচরণ পুরো প্রতিষ্ঠানের ওপর ছায়া ফেলে, তখন তা কেবল ব্যক্তিগত নয় প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ।
সব মিলিয়ে, একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তার অবস্থান আর কতটা গ্রহণযোগ্য তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন উঠেছে। যে প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম শহরের অবকাঠামো উন্নয়ন, নগর পরিকল্পনা ও জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট হাজারো প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত, সেই প্রতিষ্ঠান যদি একজন কর্মকর্তার অনিয়ন্ত্রিত আচরণ, দম্ভ ও প্রশাসনবিরোধী মানসিকতার কারণে বারবার বিপর্যস্ত হয়, তাহলে কেবল দপ্তরের কার্যক্রম নয়- প্রভাব পড়বে শহরের উন্নয়ন পরিকল্পনার উপরও।
তাই প্রশাসনের ভেতর থেকেই দাবি উঠছে, প্রতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা, কাজের পরিবেশ ও সুষ্ঠু প্রশাসনিক কাঠামো বজায় রাখতে হলে এই ধরনের অসদাচরণবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।