পাবনা প্রতিনিধি।।
পাবনার সাঁথিয়ার কাশিনাথপুরে এক স্কুল শিক্ষিকাকে পিটিয়ে- শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে তার স্বামীর বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় নিহতের স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার -১১ সেপ্টেম্বর- সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটেছে কাশিনাথপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র সংলগ্ন জাপান টাওয়ারের ৩য় তলায়।
এ ঘটনায় নিহতের পিতা মামলা দায়ের করেছেন। নিহত গৃহবধূর নাম হাফসা খাতুন -৩০-। তিনি বেড়া উপজেলার কুশিয়ারা-বাগজান গ্রামের মাওলানা নজরুল ইসলামের মেয়ে এবং স্থানীয় স্কাইলার্ক স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। নিহতের স্বামী জিয়া আমিনপুর থানাধীন টাংবাড়ি গ্রামের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেন খানের ছেলে।
প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা যায়, জিয়া দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলো। এমনকি ইয়াবা ও ফেন্সিডিল সেবন করতো বলেও জানা যায়।
নিহত হাফসার মা জানান, ১৫ বছর আগে জিয়া জোরপূর্বক আমার মেয়েকে বিয়ে করে। তাদের হামিম -১৩- ও জ্যোতি -৪-নামে দুটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই জিয়া টাকার জন্য আমার মেয়েকে চাপ দিতে থাকে।
পরে আমরা ব্যবসা করার জন্য তাকে কিছু টাকা দেই। কিন্তু বখাটে জিয়া ব্যবসা না করে টাকাগুলো নষ্ট করে। কিছুদিন পরে আবার আমার মেয়েকে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। মাঝেমধ্যেই মারধর করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিত।
মেয়ের সুখের কথা ভেবে মাঝেমধ্যেই টাকাপয়সা দিতাম। একপর্যায়ে মোটরসাইকেল কিনে দিতেও বাধ্য হই। তবুও আমার মেয়ে মন পায়নি।
জিয়ার বাবা-মাসহ পরিবারের সকলে মিলে আমার মেয়ের ওপর নির্যাতন চালাতো। শুধু দুই শিশুসন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সকল যন্ত্রণা সহ্য করেও সে সংসার করতে চেয়েছে। কিন্তু ওরা আমার মেয়েকে বাঁচতে দিল না।
হাফসার বাবা বলেন, আমি আমার মেয়ের হত্যাকারী জিয়ার ফাঁসি চাই। সেই সাথে জিয়ার বোনের জামাই মেহেদীসহ পরিবারের ইন্ধনদাতা সকলের বিচার চাই।
এ ব্যাপারে প্রতিবেশীরা জানায়, সন্ধ্যার পরে জিয়া স্থানীয় দুই একজনকে ফোন করে তার স্ত্রীর মৃত্যুর বিষয়টি জানালে স্থানীয়রা এসে টয়লেটের মধ্যে হাফসার গলায় ওড়না পেচানো লাশ পায়।
কাশিনাথপুর পুলিশ বক্স এর আইসি এসআই আশরাফুল আলম রাতেই অভিযান চালিয়ে আটক করেন জিয়াকে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হাফসার ছেলে হামিম ঘটনার সময় অজ্ঞান হয়ে যায় এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাংবাদিকদের কাছে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হামিম জানায়, তার ফুপা মেহেদী, হত্যার কাজে তার বাবার একমাত্র ইন্ধনদাতা।
হাফসার ৪ বছরের শিশুকন্যাও রাতে ওর বাবা কর্তৃক মাকে অত্যাচারের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বলছিল- আমি বাবাকে অনেক নিষেধ করেছি মাকে মারতে। তাও বাবা কথা শোনেনি।
এ ঘটনায় সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা -ওসি- মো. আনোয়ার হোসেন জানান- খবর পাওয়ামাত্র পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। কিন্তু তার আগেই গৃহবধূ হাফসার মৃত্যু হয়। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আসামি জিয়াকে রাতেই আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার -১২ সেপ্টেম্বর- আদালতের মাধ্যমে পাবনা জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।