
মো.ইমরান হোসেন,
কালিয়াকৈর(গাজীপুর) প্রতিনিধি।।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের সাথে মিলে মিশে আছি। আমরা কারও সাথে যুদ্ধ চাই না। আমরা সবাই মিলে মিশে থাকতে চাই। মিয়ানমারের যুদ্ধ তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল।
তিনি বলেন, আরাকান রাজ্যের অস্ত্রধারীরা তাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। আমরা যতটুকু জানতে পারেছি, আমাদের দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় আরাকান আর্মি নামের এক গোষ্ঠী মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। যুদ্ধ তাদের ভেতরেই হচ্ছে। কোনো কোনো সীমান্তে যুদ্ধ হচ্ছে। এটা আমাদের করার কিছু নেই।
মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আনসার ভিডিপি প্রশিক্ষণ একাডেমিতে সাধারণ আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণ (পুরুষ প্রথম ধাপ) সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজায় যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না হয়, সে জন্য আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। কোনো পূজামণ্ডপে যাতে কোনো সমস্যা না হয় এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের সর্ববৃহৎ, সুশৃঙ্খল ও জনসম্পৃক্ত বাহিনী। স্বাধীনতার সূচনালগ্ন থেকে অদ্যাবধি প্রতিটি ক্ষেত্রে বাহিনীর সদস্যরা সবসময়ই কর্মদক্ষতা এবং সফলতার পরিচয় দিয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত এ বাহিনী দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সিলেট ও সুনামগঞ্জে যে বন্যা হয়েছিল, সেখানেও আনসার-ভিডিপি সদস্যরা উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে প্রশংসনীয় অবদান রেখেছে।
জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে আনসার-ভিডিপি সদস্য-সদস্যাদের অবদান অনস্বীকার্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বর্তমান সরকারের সময়ে এই বাহিনীর পোশাক প্রবর্তন, পারিবারিক রেশন বৃদ্ধি ও সেবামূলক কাজের কর্মকর্তাদের জয় পেনশন, কর্মকর্তাদের বৈদেশিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একটি বিশেষায়িত গার্ড ব্যাটালিয়ন গঠন, ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের মেয়াদ হ্রাস এবং আনসার ব্যাটালিয়নের তিনটি পদবির বেতন গ্রেডের ধাপ উন্নীত করা হয়েছে। ব্যাটালিয়ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫টি ব্যাটালিয়ন সদরে আধুনিক অবকাঠামো গড়ে ব্যাটালিয়নের রূপ দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ব্যাটালিয়নগুলোর উন্নয়নও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য ৪০টি অস্ত্রাগার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
প্রশিক্ষণ সমাপনীতে কৃতিত্ব অর্জনকারী তিন প্রশিক্ষণার্থীকে ক্রেস্ট প্রদান করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তা, কর্মচারী, ব্যাটালিয়ন আনসার, সাধারণ আনসার ভিডিপি টিডিপি সদস্য-সদস্যাদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য মৌলিক প্রশিক্ষণ, আধুনিক ও যুগোপযোগী কারিগরি প্রশিক্ষণ-পদোন্নতিসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। বাহিনীর কর্মকর্তা ও অন্যান্য পদবির সদস্যদেরকে বর্তমানে তুরস্কে প্রশিক্ষণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, সাধারণ আনসার (প্রথম ধাপ) মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ৯৯৫ জন সদস্য অংশগ্রহণ করেছেন। ৭০ দিনব্যাপী কঠোর পরিশ্রম ও অনুশীলনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় আপনারা কর্মরত হতে যাচ্ছেন। এ জন্য আমি আপনাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি বিশেষ অভিনন্দন জানাচ্ছি আজকের এ প্রশিক্ষণ সমাপনীতে সেরা চৌকস, ডিল ও ফায়ারার হিসেবে কৃতিত্ব অর্জনকারী তিন প্রশিক্ষণার্থী সদস্যকে। আমি আরও আশা করছি, বাহিনীর সুনাম এবং ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রেখে নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করে দেশ এবং জাতির সার্বিক উন্নয়নে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হবেন। আমি বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সামগ্রিক সফলতা এবং অগ্রগতি কামনা করছি।
এর আগে মন্ত্রী সকাল ১০টায় সফিপুর আনসার প্রশিক্ষণ একাডেমির ইয়াদ আলী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে এই বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান এবং অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খোন্দকার ফরিদ হাসান তাকে স্বাগত জানান। পরে একটি খোলা জিপে করে কুচকাওয়াজ মাঠ পরিদর্শন করেন তিনি। কুচকাওয়াজ শেষে স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী সাধারণ অনসার সদস্যদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. অখতার হোসেন, আনসার ও ভিডিপি একাডেমির কমান্ড্যান্ট অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. সামছুল আলম, গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী সফিকুল আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ প্রমুখ।